শনিবার ২৪ মে ২০২৫ - ১০:৫২
কেন শহীদ রায়িসি শত্রুর হাসি ও প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস করতেন না?

শহীদ রায়িসি কখনও পাশ্চাত্য ও ঔপনিবেশিক শক্তির প্রতারক কূটনীতি এবং তাদের ভুয়া ও শান্তিপূর্ণ দেখানো চুক্তিগুলোর দ্বারা প্রতারিত হননি।

হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন ক্বানাওয়াতির সঙ্গে আলাপে পর্যালোচনা করা হয়েছে: হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন আলী ক্বানাওয়াতি বলেছেন: শহীদ রায়িসি কখনও পাশ্চাত্য ও ঔপনিবেশিক শক্তির প্রতারক কূটনীতি এবং তাদের ভুয়া ও শান্তিপূর্ণ দেখানো চুক্তিগুলোর দ্বারা প্রতারিত হননি। কোমের বিপ্লবী হাওযা’র এক আলেম ও সন্তান হিসেবে তিনি বরাবরই প্রতিরোধের চিন্তা ও বিশ্বব্যাপী নির্যাতিতদের রক্ষার আদর্শে অবিচল ছিলেন এবং কখনোই সত্যের পক্ষে ও মিথ্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখাননি।


প্রয়াত ইরানি বিপ্লবী ও সেবকপ্রাণ রাষ্ট্রপতি আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির প্রথম শাহাদাতবার্ষিকীতে হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন আলী ক্বানাওয়াতির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

- শহীদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সর্বোচ্চ নেতা বলেন: "শহীদ রায়িসির অন্যতম শিক্ষনীয় বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর বিপ্লবী ও ধর্মীয় অবস্থানের প্রকাশে স্পষ্টতা।" আপনি এ বৈশিষ্ট্যটি ব্যাখ্যা করুন।

প্রিয় শহীদ রায়িসি ছিলেন এক কর্মী, সংযমী ও বিপ্লবী আলেম; তিনি ইমামদের বিপ্লবী চিন্তার বাস্তব অনুসারী ছিলেন এবং ইসলামী বিপ্লবের মূলনীতি ও ভিত্তিতে গভীর বিশ্বাস পোষণ করতেন। তাঁর বিপ্লবী অবস্থান ছিল কুরআনের এই আয়াতের বাস্তব অনুবাদ:
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য কথা বলো।”

এই অবস্থান ছিল তাঁর ঈমান, আল্লাহর প্রতি আস্থা, আন্তরিকতা এবং সমাজকে সৎ পথে পরিচালনার জন্য অন্তরের তাগিদ ও অটল সংকল্পের প্রকাশ। তাই তিনি তাঁর দায়িত্বকালজুড়ে সত্যের পক্ষে, নেতার প্রতি আনুগত্যে, শত্রুদের সামনে ও পথভ্রষ্টদের বিরুদ্ধে নির্ভীক ছিলেন এবং দ্বিধা বা সংশয়ে পতিত হননি। তিনি বিপ্লবী আলেমদের জীবন্ত উদাহরণ এবং "জিহাদে তাবইন" (সত্য প্রকাশের সংগ্রাম)-এর অগ্রদূত ছিলেন। তাঁর সাহস ও স্পষ্টতা প্রমাণ করেছিল যে, এমন অবস্থান ইসলামের ও বিপ্লবের মর্যাদা বাড়ায়।

- সর্বোচ্চ নেতা বলেন: শহীদ রায়িসি শত্রুর হাসির ওপর বিশ্বাস করতেন না। এটি একটি মূল্য ও শিক্ষা; এটি ভবিষ্যতের রাষ্ট্রপতি ও রাজনৈতিক নেতাদের জন্য আদর্শ। আপনি মনে করেন শহীদ কীভাবে এমন শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছিলেন?

শত্রুর প্রতারক হাসি ও প্রতিশ্রুতিতে অবিশ্বাস রাখা একটি বিজ্ঞ, বিপ্লবী ও মুসলিম রাজনীতিকের বৈশিষ্ট্য; যা তাঁর কুরআনিক ও দীনী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। কুরআনেও বলা হয়েছে:
“ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা কখনই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম অনুসরণ করো।”
শহীদ রায়িসি উপলব্ধি করতেন যে ঔপনিবেশিক শক্তির সঙ্গে কোনো "উইন-উইন" কূটনীতি সম্ভব নয়। তাই তিনি তাদের প্রতারণামূলক শান্তিচুক্তিতে বিশ্বাস করেননি এবং বিশ্বব্যাপী নির্যাতিতদের পক্ষে দাঁড়িয়ে চূড়ান্তভাবে প্রতিরোধের নীতিতে অবিচল ছিলেন।

তিনি শত্রুদের কোনো ছাড় দেননি এবং ইমাম আলীর সেই বাণীতে বিশ্বাস করতেন:
“যে শত্রুর সঙ্গে সন্ধি করে, সে আসলে নিজের বিরুদ্ধেই কাজ করে।”
ইমাম সাদিকের এই বাণীতেও তিনি বিশ্বাস করতেন:
“শত্রুর প্রতি আস্থা রেখো না, যদিও সে তোমার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে।”
এই শিক্ষাই শহীদ রায়িসির বিপ্লবী ও দূরদর্শী পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি ছিল যেখানে সরল কূটনীতির চেয়ে সাহস ও বিচক্ষণতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল।

- সর্বোচ্চ নেতা শহীদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেন: তিনি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে আন্তরিক ছিলেন। আপনি এ বিষয়ে কী বলেন?

আয়াতুল্লাহ রায়িসি ব্যক্তিগত, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক সব দিকেই পরিপূর্ণ ছিলেন। তিনি যেমন বিশ্ব ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে দৃঢ় ছিলেন, তেমনি ইসলামী নেতৃত্বের শিক্ষা অনুসারে প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্কের বিষয়ে বিশ্বাসী ছিলেন।

এটা ছিল আহলে বাইতের শিক্ষার প্রতিফলন, যেমন হাদিসে আছে:
“যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে তার প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করুক।”
তিনি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার জন্য অবিরাম চেষ্টা করেছেন এবং আঞ্চলিক সহযোগিতাকে ইসলামের সম্মান ও দেশের স্বার্থে একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে দেখতেন।
আপনারা লক্ষ্য করবেন, তিনি যে সফরে গিয়েছিলেন সেখান থেকে ফিরে আসার পথেই তিনি শহীদ হন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha