হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই পবিত্র আয়াতটি নবী করিম (সা.)-এর জীবনের কোন ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত?
এই প্রশ্নের উত্তরে ফখর রাজী দুটি মতামত দিয়েছেন, এবং মরহুম তাবারসী একটি তৃতীয় মত তুলে ধরেছেন।
আমরা আল্লাহর সাহায্য নিয়ে, যুক্তি ও বিবেকের আলোকে এবং পক্ষপাত ও আবেগ থেকে মুক্ত থেকে, এমনভাবে এই তিনটি মত বিশ্লেষণ করব যাতে বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যে কোনো আঘাত না লাগে।
প্রথম মত (ফখর রাজীর):
তিনি বলেন, "اليوم" শব্দটি এখানে তার প্রকৃত অর্থে ব্যবহৃত হয়নি; এটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে—অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট দিন নয়, বরং একটি সময়কাল বা যুগ বোঝাতে। যেমন বলা হয়: “গতকাল আমি যুবক ছিলাম, আজ আমি বৃদ্ধ”, এটি একটি সময়ের রূপক প্রকাশ।
উত্তর:
এই ব্যাখ্যার কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ বা নির্দিষ্ট রূপক নির্দেশনা নেই। রূপক অর্থ ব্যবহারের জন্য স্পষ্ট প্রেক্ষাপট দরকার, যা এখানে নেই। সুতরাং, এই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয় মত (ফখর রাজী):
"اليوم" শব্দটি প্রকৃত অর্থেই কোনো নির্দিষ্ট দিন বোঝাচ্ছে, আর সেই দিনটি হচ্ছে হজ্জের ‘আরাফা’ দিবস (১০ হিজরির হজ্বে বিদা)।
উত্তর:
এই দিনটি আগের বছরের আরাফার দিনের থেকে কিসে ভিন্ন ছিল? যদি কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেই না থাকে, তাহলে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ বলা হলো? অতএব, এই ব্যাখ্যাও যুক্তি-সঙ্গত নয়।
তৃতীয় মত (মরহুম তাবারসী):
তিনি ফখর রাজীর দুটি মত প্রত্যাখ্যান করে আহলুল বায়েত (আ.)-এর ব্যাখ্যাটি গ্রহণ করেন, যা সকল শিয়া মুফাসসির ও বিদ্বানদের দ্বারা সমর্থিত।
এই মতানুসারে, আয়াতে যে গৌরবময় দিনটির কথা বলা হয়েছে, তা হচ্ছে: ১৮ জিলহজ্জ, ১০ হিজরি — গাদীর খুম দিবস।
সেদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর আদেশে হযরত আলী (আ.)-কে তাঁর উত্তরসূরি ও মুসলমানদের নেতা ঘোষণা করেন।
এই ব্যাখ্যা আয়াতের সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ?
উত্তর: পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ। কারণ:
১. শত্রুর হতাশা:
ইসলামবিরোধীরা সব চক্রান্তে ব্যর্থ হয়ে শেষ আশায় ছিল যে, রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর, যেহেতু তাঁর কোনো পুত্র নেই ও কোনো উত্তরসূরি ঘোষণা করেননি, তখন ইসলাম ধ্বংসের সুযোগ মিলবে। কিন্তু গাদীর দিবসে যখন রাসুল (সা.) হাজার হাজার সাহাবার সামনে হযরত আলী (আ.)-কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করলেন, তাদের সব আশা শেষ হয়ে গেল।
২. ধর্ম পূর্ণতা পেল:
নবুয়তের পরে ইমামত দ্বারা ইসলাম পূর্ণতা পায়। হযরত আলী (আ.)-কে খলীফা নিযুক্ত করার মাধ্যমে, ইসলাম ধর্ম তার পূর্ণরূপ পেল। নবুয়ত অসম্পূর্ণ থেকে যায়নি।
৩. নিয়ামত সম্পূর্ণ হলো:
রাসুলের (সা.) পর নেতৃত্ব নির্ধারিত হওয়ায় আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত নিয়ামত পূর্ণ হলো।
৪. বিশ্বজনীন ধর্ম হিসেবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলো:
ইমামত ছাড়া ইসলাম একটি পূর্ণ, চিরস্থায়ী ধর্ম হতে পারে না। প্রতিটি যুগে মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে একজন নির্ভুল নেতা প্রয়োজন, যা ইমামতের মাধ্যমেই সম্ভব।
সারকথা:
গাদীরের ঘটনার ভিত্তিতে আয়াতের ব্যাখ্যা সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য, বরং একমাত্র সঠিক ব্যাখ্যা। এই ঘটনার মাধ্যমেই মুনাফিকদের আশা ছিন্ন হয় এবং আল্লাহর ধর্ম পূর্ণতা পায়।
“দ্বীন পূর্ণ করলাম” — এর অর্থ কী?
এই অংশের ব্যাখ্যায় তিনটি মত রয়েছে:
১. দ্বীন মানে আইন:
কেউ কেউ বলেন, “দ্বীন” বলতে ইসলামি আইন বোঝানো হয়েছে, যা ওই দিন পূর্ণতা পেয়েছে।
প্রশ্ন:
যদি তাই হয়, তাহলে ওই দিনে এমন কী নতুন আইন বা বিধান নাজিল হয়েছিল, যা এত গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য?
২. দ্বীন মানে হজ্ব:
কারো মতে, আয়াতে ‘দ্বীন’ বলতে ‘হজ্ব’ বোঝানো হয়েছে।
উত্তর:
ভাষাগতভাবে ‘দ্বীন’ মানে পূর্ণ জীবনব্যবস্থা—আকীদা ও আমলের সমন্বয়; হজ্ব তার একটি অংশ মাত্র। তাই এই ব্যাখ্যা ভুল।
৩. কাফেরদের পরাজয়:
কেউ বলেন, এই আয়াতের অর্থ হলো—মুসলমানরা শত্রুদের উপর বিজয় লাভ করেছিল।
প্রশ্ন:
কোন শত্রু? মক্কার মুশরিকরা ৮ হিজরিতেই পরাজিত হয়েছিল, ইহুদিরা যুদ্ধের মাধ্যমে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। খ্রিস্টানরাও শান্তিচুক্তি করেছিল। তাহলে ১০ হিজরিতে নতুন করে কী ঘটল?
উত্তর নেই।
চূড়ান্ত বিশ্লেষণ:
শিয়া মুফাসসিরদের ব্যাখ্যা—গাদীরের ঘটনাই হচ্ছে দ্বীনের পূর্ণতার কারণ—সব প্রশ্নের স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত উত্তর দেয়। সুতরাং, আয়াতে ইকমালের একমাত্র সঠিক ব্যাখ্যা হলো গাদীর খুম ও হযরত আলী (আ.)-এর ইমামত প্রতিষ্ঠা।
আপনার কমেন্ট