হাওজা নিউজ এজেন্সি: হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ীর ভাষণ (তৃতীয় ভিডিওবার্তা):
আমি প্রয়োজন মনে করছি এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে মহান ইরানি জাতিকে কয়েকটি বিষয়ে অভিনন্দন জানাতে:আমি এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে মহান ইরানি জাতিকে কয়েকটি বিষয়ে অভিনন্দন জানানো প্রয়োজন মনে করছি:
প্রথমত, অভিনন্দন জানাই জালিম ও অবৈধ জায়নিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য। বিপুল প্রচার, উচ্চকণ্ঠ দাবি ও আস্ফালনের পরও এই ভুয়া শাসনব্যবস্থা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের আঘাতে প্রায় ধসে পড়েছে, চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে।
দ্বিতীয়ত, আমাদের প্রিয় ইরানি জনগণকে মার্কিন শাসনের উপর বিজয়ের জন্য অভিনন্দন। মার্কিন শাসন সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছিল, কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল যে যদি তারা (হস্তক্ষেপ) না করে, ইসরাইলি শাসন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু এই যুদ্ধে তাদের কোনো সাফল্য নেই। এখানেও ইসলামী প্রজাতন্ত্র বিজয়ী হয়েছে এবং বিনিময়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি শক্তিশালী চড় মেরেছে।
তৃতীয় অভিনন্দন, ইরানি জাতির অসাধারণ ঐক্য ও সংহতির জন্য। আলহামদুলিল্লাহ, প্রায় ৯০ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে, এক কণ্ঠে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, অভিন্ন লক্ষ্য ও দাবিতে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছে, স্লোগান দিয়েছে, কথা বলেছে, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে—এবং এই ধারা ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। এই ঘটনাটি প্রমাণ করে দিয়েছে যে প্রয়োজনের সময় এই জাতির পক্ষ থেকে একটি কণ্ঠই শোনা যায়। জাতি তার উচ্চ মর্যাদা ও অনন্য বৈশিষ্ট্য এই ঘটনায় স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।
এখন আমি আমার বক্তব্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও গভীর দিকের প্রতি আলোকপাত করতে চাই। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেছেন, “ইরানকে আত্মসমর্পণ করতে হবে।”
এই বক্তব্যের বিষয়বস্তু শুধু ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, পারমাণবিক কর্মসূচি বা ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ নয়—বরং এটি সরাসরি ইরানের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় অস্তিত্বের বিরুদ্ধে একটি প্রকাশ্য আক্রমণ।
এমন একটি ইতিহাসবহুল, সংস্কৃতিসমৃদ্ধ, আত্মমর্যাদাশীল জাতিকে উদ্দেশ্য করে “আত্মসমর্পণ” শব্দটি উচ্চারণ করা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মুখে অত্যন্ত অশোভন ও বাস্তবতা-বিচ্ছিন্ন।
যারা ইরানি জাতিকে চেনে, তাদের কাছে এই দাবি নিছকই হাস্যকর ও অবজ্ঞার বিষয়।
তবে এই বক্তব্য একটি গভীর সত্য উদ্ঘাটন করেছে। আসলে, আমেরিকার বিরোধিতা নতুন কিছু নয়। ইসলামি বিপ্লবের সূচনালগ্ন থেকেই আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে নানা অজুহাতে আক্রমণ চালিয়ে আসছে—কখনো মানবাধিকার, কখনো গণতন্ত্র, কখনো নারীর অধিকার, আবার কখনো পরমাণু বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির নামে। কিন্তু এইসব অজুহাতের আড়ালে লুকিয়ে থাকা প্রকৃত উদ্দেশ্য সবসময় ছিল—ইরানকে আত্মসমর্পণ করানো।
পূর্ববর্তী প্রশাসনগুলো এই উদ্দেশ্য গোপন রাখত। কারণ কোনো জাতিকে প্রকাশ্যে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো আন্তর্জাতিক নীতিমালার দৃষ্টিতে যেমন অগ্রহণযোগ্য, তেমনি নৈতিকভাবে লজ্জাজনক। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট এই লজ্জার আবরণ সরিয়ে দিয়ে প্রকৃত অভিপ্রায়ই প্রকাশ করে ফেলেছে।
এই বিষয়টি ইরানি জাতির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
আমেরিকার সঙ্গে ইরানের বিরোধের মূল কারণ রাজনৈতিক বা কারিগরি নয়—বরং এটি একটি জাতির সম্মান, স্বাধীনতা ও অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। আমেরিকানরা ইরানি জাতিকে অবমাননা করতে চায়, তাকে মাথানত করাতে চায়—কিন্তু এই জাতি দৃঢ়চিত্তে জানিয়ে দিচ্ছে: “এই জাতি কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না। কখনোই না।”
ইরান একটি মহান, শক্তিশালী ও প্রাচীন সভ্যতার দেশ। এর সাংস্কৃতিক, মানবিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদ আমেরিকা ও তার অনুরূপ আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় বহু গুণ সমৃদ্ধ। তাই ইরানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার যে কল্পনা আমেরিকা করে—তা নিতান্তই হাস্যকর, অযৌক্তিক এবং জ্ঞানী-মানুষদের কাছে কেবলই পরিহাসের বিষয়।
শেষে সর্বোচ্চ নেতা দোয়া করে বলেন, আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি— তিনি যেন এই জাতিকে তাঁর রহমতের ছায়ায় সর্বদা সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে রক্ষা করেন,
আমাদের মহামানব ইমামের (ইমাম খোমেনী) মর্যাদা আরও উচ্চ করে দেন এবং হযরত ইমাম মাহদী (আ.ফা.) যেন এই জাতির প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন ও তাঁর সাহায্য এই জাতির অবিচল পৃষ্ঠপোষক হন।
আপনার কমেন্ট