হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬১ হিজরীর ১০ই মহারম ইতিহাসের সেই কালো দিন, যেদিন পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যাকার, নবী (সা.) এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (আ.) পরিবার পরিজন ও সাহাবীদের নিয়ে কারবালার প্রান্তরে শাহাদত বরণ করেন। অনেকেই মনে করেন কারবালা কেবল একটি অতীতের ঘটনা; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, কারবালা একটি চেতনার নাম, একটি দর্শনের নাম, একটি প্রতিরোধের ঘোষণা যা যুগে যুগে জুলুম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানবতার ঝাণ্ডা তুলে ধরে।
কারবালা কেবল ৬১ হিজরীর নয়:
কারবালার কাহিনী শুধুই ৬১ হিজরীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং কারবালা একটি চিরন্তন প্রতীক,জালিম ও মাজলুমের মধ্যকার চূড়ান্ত দ্বন্দ্ব।
ইমাম হুসাইন (আ.) বলেন:
"আমি ক্ষমতা লাভ বা ধ্বংস করার জন্য নয়, বরং আমার নানার উম্মাহকে শুধরানোর জন্য বের হয়েছি।"
— (ইমাম হুসাইন, তাবারী, তারিখুল উমাম ওল মুলুক)
এই বাণী প্রমাণ করে কারবালার লক্ষ্য ছিল সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং জুলুম প্রতিরোধ।
কারবালা আজও জীবন্ত:
আজকের যুগেও আমরা দেখছি ফিলিস্তিনে,লেবাননে, কাশ্মীরে,পরাচিনারে, ইয়েমেনে, বাঁচার অধিকার নিয়ে মানুষ কাঁদছে। শিশুদের ওপর বোমা ফেলা হচ্ছে, নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, নিরীহ মানুষকে গুম, হত্যা করা হচ্ছে। এইসব অন্যায়ের প্রতিবাদে যখন কেউ প্রতিবাদ করে, প্রতিরোধ গড়ে তোলে সেই প্রতিবাদই হুসাইনী প্রতিবাদ, সেই প্রতিরোধই কারবালার উত্তরসূরি।
কারবালা তাই একটি আত্মিক বিপ্লবের নাম, যে বিপ্লব বলছে:
১. সত্যের জন্য দাঁড়াও,
২. জালিমের সামনে মাথা নত করো না,
৩. আর নিপীড়িতের পাশে দাঁড়িয়ে বলো—"লাব্বাইক ইয়া হুসাইন (আঃ)",
কারবালা বনাম সমসাময়িক জুলুম:
ইয়াজিদের নাম হয়তো নেই, কিন্তু ইয়াজিদি মানসিকতা আজও বেঁচে আছে।যেখানে ক্ষমতা, লোভ, মিথ্যাচার, ধর্ম বিকৃতি, ধন দৌলতের পূজা এবং সত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
ঠিক যেমন ইমাম হুসাইন (আ.) মসজিদ, কুরআন, খিলাফতের নামে চলা ফ্যাসিবাদের মুখোশ টেনে ছিঁড়ে দিয়েছিলেন। আজও প্রয়োজন এমন এক সাহসী অবস্থানের, যা ইসলামকে ধ্বংসকারী ভণ্ডদের মুখোশ খুলে দেয়।
আমাদের কর্তব্য কী?
১. কারবালার শিক্ষা নিয়ে আমাদের সমাজে জুলুম, দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।
2. সত্য, ইনসাফ ও মানবতার পথে চলা, যার জন্য ইমাম হুসাইন (আ.) প্রাণ দিলেন।
3. প্রতিটি যুগের ‘ইয়াজিদ’ চিনে তার বিরুদ্ধে সামাজিক, রাজনৈতিক ও চিন্তাগত প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
৪. সত্য ও হক কথা বলার সাহস নিজের হৃদয়ে জোগানো।
শেষ কথা:
কারবালা একটি জ্বলন্ত মশাল, যা পথ দেখায় অন্ধকারের মধ্যে। এটা কেবল ৬১ হিজরীর একদিন নয়, এটা এক চলমান ইতিহাস, এক চিরন্তন সংগ্রাম। তাই, হুসাইন (আ.) এর আহ্বান আমাদের প্রতিদিনের চেতনায় পরিণত হোক:
"মৃত্যু আমার জন্য আনন্দজনক, যদি তা সম্মানের সঙ্গে হয়; আর জীবিত থাকা আমার কাছে লজ্জার, যদি তা যুলুমের অধীনে হয়।"
কারবালা ভুলে যেও না, কারণ ইয়াজিদ আজও জীবিত…
হুসাইন(আঃ) এখনও জেগে আছেন, প্রতিটি মজলুমের অন্তরে।
- কবির আলী তরফদার কুম্মী।
০৮/০৭/২০২৫
আপনার কমেন্ট