হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইমাম তাকি (আ.)-এর সন্তান:
ইমাম তাকি (আ.)-এর চারটি সন্তান ছিলেন—আলী, মূসা, ফাতিমা ও ইমামা (আল-ইরশাদ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৯৫)। কিছু সূত্রে তাঁর তিন কন্যার নাম দেওয়া হয়েছে—হাকিমা, খাদিজা ও উম্মে কুলসুম (ইবনে শহর আশূব, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৮০)। আবার কিছু পরবর্তী সূত্রে উম্মে মুহাম্মদ ও জয়নাব নামও উল্লেখ রয়েছে (হালাতি, রিয়াহীনুশ শরিয়াহ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩১৬)।
ইমামের নৈতিক গুণাবলী:
ইমাম মোহাম্মদ তাকি (আ.)-এর দানশীলতা ছিল অতুলনীয়, এজন্য তাঁকে “জাওয়াদ” উপাধি দেওয়া হয় (কুরশি, হায়াতুল ইমাম মুহাম্মদ আল-জাওয়াদ, পৃষ্ঠা ৭০-৭১)।
তিনি বংশ বা জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস করতেন না বরং জ্ঞানকেই শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড মানতেন। তাঁর একটি উক্তি হলো: “সকল শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, যার শ্রেষ্ঠতা তার জ্ঞানের দ্বারা।”
তিনি গরিব ও দাস শ্রেণির মানুষের সঙ্গে অত্যন্ত মানবিক আচরণ করতেন এবং তাদের সঙ্গে উঠাবসা করতেন।
ইমাম তাকি (আ.)-এর মর্যাদা আহলে সুন্নাহর দৃষ্টিতে:
অনেক সুন্নি আলেম ইমামের বিদ্বেষহীনতা, পাণ্ডিত্য, তাকওয়া ও দানশীলতা সম্পর্কে প্রশংসা করেছেন। ইবনে তাইমিয়াহ বলেছেন, ইমামকে “জাওয়াদ” বলা হয়েছে তাঁর প্রসিদ্ধ দানশীলতার কারণে (মুহাম্মাদ রাশাদ সালিম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬৮-৬৯)।
মুতাযিলি চিন্তাবিদ জাহিজ বলেছেন, তিনি ছিলেন আলেম, পরহেযগার, ইবাদতকারী, সাহসী, দানশীল ও পবিত্র চরিত্রের (আমেলি, আল-হায়াতুস সিয়াসিয়্যাহ লিল ইমাম আল-জাওয়াদ, পৃষ্ঠা ১৩৭)।
ইমাম তাকি (আ.)-এর প্রসিদ্ধ সাহাবিরা:
ইমামের প্রধান সাহাবিদের মধ্যে আছেন: আবদুল আজিম হাসানী, আহমাদ ইবনে আবি নাসর বাজন্তি, হাসান ইবনে সাঈদ আহওয়াযী, আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ বারকী, ইব্রাহীম ইবনে হাশিম।
ইমাম তাকি (আ.)-এর শাহাদাত:
ইমাম মোহাম্মদ তাকি (আ.) কত বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন?
ইমাম তাকি (আ.) মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন এবং তিনি সর্বকনিষ্ঠ শহীদ ইমাম ছিলেন।
কোন বছর তিনি শাহাদত বরণ করেন?
বেশিরভাগ সূত্র অনুযায়ী, তিনি ২২০ হিজরির শেষ জিলক্বদ মাসে শাহাদত বরণ করেন (তাবারসি, আ’লামুল ওয়ারি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১০৬)।
কীভাবে ইমামকে শহীদ করা হয় এবং কে করেন?
এ বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কিছু সূত্রে বলা হয়েছে, মু'তাসিম তাঁর এক মন্ত্রীর কর্মচারীর মাধ্যমে তাঁকে বিষ প্রয়োগ করে শহীদ করেন (আয়াশি, তাফসির, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩২০)।
তৃতীয় হিজরি শতকের ইতিহাসবিদ মাসউদী লিখেছেন, মু'তাসিম ও জাফর ইবনে মামুন মিলে ইমামকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। যেহেতু উম্মুল ফজলের ঘরে ইমামের কোনো সন্তান ছিল না, জাফর তাঁর বোন উম্মুল ফজলকে ইমামকে বিষ দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করেন। তারা আঙ্গুরে বিষ মিশিয়ে ইমামকে দেন এবং তিনি তা খেয়ে শহীদ হন। পরে উম্মুল ফজল অনুতপ্ত হন এবং কাঁদতে থাকেন। তখন ইমাম বলেন, “তুমি এমন এক বিপদের সম্মুখীন হবে যার কোনো প্রতিকার নেই” (মাসউদী, ইসবাতুল ওয়াসিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ২২৭)।
কোথায় তাঁকে দাফন করা হয়েছে?
তাঁকে তাঁর প্রপিতামহ ইমাম মূসা কাযিম (আ.)-এর পাশেই কাযিমাইন নগরীতে দাফন করা হয়।
অনুবাদক: কবির আলী তরফদার কুম্মি।
তারিখ:২৬/০৫/২০২৫
আপনার কমেন্ট