মঙ্গলবার ৮ জুলাই ২০২৫ - ২১:২০
আরবদের প্রতিক্রিয়া: ইরান ইহুদিবাদীদের বিশ্বজুড়ে উপহাসের পাত্রে পরিণত করেছে

সাম্প্রতিক ১২ দিনব্যাপী মার্কিন-ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে ইরানের প্রতিরোধ ও পাল্টা আঘাত নিয়ে আরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। আরব বিশ্বের অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও বিশ্লেষকরা লিখেছেন, ইরানের অপ্রত্যাশিত কৌশল ও ধ্বংসাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইহুদিবাদীদের এমনভাবে বিপর্যস্ত করেছে যে তারা আজ বিশ্বজুড়ে হাস্যরসের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আরব ব্যবহারকারীদের উল্লেখযোগ্য মন্তব্যগুলো নিম্নরূপ:

“ইরান এতটাই শক্তিশালী যে এখন দুনিয়ার সবাই ইসরায়েলকে নিয়ে ঠাট্টা করছে।”

আহমাদ নামের একজন লিখেছেন: “জিন্দাবাদ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান! তোমরা সাহসী, ন্যায়পথে আছো এবং সঠিক লক্ষ্যেই এগোচ্ছো।”

আরেকজন মন্তব্য করেন: “যদি যুদ্ধ আর দুই দিন চলত, ইসরায়েল সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়ত। তারা ইরানের ক্ষিপ্র ও চমকে দেওয়া হামলায় এতটাই হতবাক হয়েছিল যে, দ্রুত ট্রাম্পকে ডেকে এনে যুদ্ধ থামাতে বলেছিল।”

একজন স্পষ্টত বলেন: “ইরানি জনগণ নিজের প্রাণ দিতে প্রস্তুত, কিন্তু মাতৃভূমির সম্মান ও এক ইঞ্চি জমিও শত্রুকে ছেড়ে দেবে না।”

অন্য এক মন্তব্যে এসেছে: “ইরান আজ ইতিহাস গড়ছে, নেতৃত্ব ও জাতিগত জ্ঞানে সমৃদ্ধ এক শক্তিশালী দেশ হিসেবে। পক্ষান্তরে আরবরা এখন ইতিহাসের পেছনে পড়ে আছে।”

পর্যবেক্ষণমূলক ও কঠিন বার্তা যুক্ত মন্তব্য:
আব্দুর রাজ্জাক লিখেছেন: “ইরান মূলত কৌশল, অটল অবস্থান ও বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ইহুদিবাদীদের যুদ্ধ থামাতে বাধ্য করেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানি সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।”

আবু সালেহ বলেন: “ইরানে প্রকৃত স্বাধীনতা আছে। পশ্চিমা দেশগুলোর মতো ভণ্ডামিপূর্ণ গণতন্ত্র নয়।”

আল-তুফাইলি তীব্র ভাষায় লিখেছেন: “আরব শাসকরা শুধুই আমেরিকার দালাল। তারা প্রযুক্তি-উৎপাদনে অক্ষম। ইরান একটি সম্মানিত ও উৎপাদনক্ষম দেশ—যেখানে আরব উপসাগরীয় দেশগুলো আমেরিকান ঘাঁটিতে পরিপূর্ণ। অথচ তারাই বলে ‘আমরা স্বাধীন’! তাদের মধ্যে নেই সম্মান, নেই আত্মমর্যাদা।”

আবু হায়দার বলেন: “হে আরবরা, জেগে ওঠো! আমেরিকা ও ইসরায়েলের সামনে যতই মাথা নত করো, মনে রেখো—তোমাদের পালাও একদিন আসবে, আর তখন অনুশোচনা কোনো কাজে আসবে না।”

ইরানি জনগণের ঐক্য এবং ইসরায়েলের পরাজয় প্রসঙ্গে মন্তব্য:
কেউ বলেন: “পশ্চিমারা ইরানিদের চিনে না। ইরানি জাতি কখনো আত্মসমর্পণ করে না। ইতিহাস দেখলে বোঝা যায় তারা কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”

শামেল হাবিব লিখেছেন: “ইরানি গণতন্ত্র পশ্চিমা ভণ্ড গণতন্ত্রের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। কয়েক হাজার গুপ্তচর ৯২ মিলিয়ন ইরানির সামনে কিছুই না।”

আহমদ ইসমাইল বলেন: “হ্যাঁ, ইরান বিজয়ী হয়েছে—এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।”

একজন বিশ্লেষক বলেন: “ইরানও কিছু ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, কিছু অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসঘাতকও ছিল। কিন্তু তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলের ভীতিকে উন্মোচন করে দেয় এবং তাদের অর্থনীতি ও সামরিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমেরিকা হস্তক্ষেপ না করলে ইসরায়েলের ক্ষতির মাত্রা শতগুণ হতো।”

অন্য একজন লেখেন: “ইরানে বাস্তব নির্বাচন হয়, সরকার পাল্টায়, ক্ষমতার পুনর্বিন্যাস ঘটে।”

ভবিষ্যতের যুদ্ধ ও বিশ্বাসের বার্তা:
কেউ মন্তব্য করেন: “পরবর্তী যুদ্ধ নির্ধারণকারী হবে। তখন ইরান একাই পুরো বিশ্বের অন্যায় ও ষড়যন্ত্রকারী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে জয়ী হবে, ইনশাআল্লাহ। কারণ, এটাই আল্লাহর ওয়াদা—যে তিনি মুমিনদের বিজয় দেবেন।”

আরেকজন লেখেন: “এই যুদ্ধের পর ইরান আর আগের মতো থাকবে না। বরং আরও শক্তিশালী ও সম্মানিত হয়ে উঠবে। পক্ষান্তরে, যারা স্বাভাবিকীকরণ ও আপসের পথে হেঁটেছে, তারা অভিশপ্ত থাকবে।”

কেউ বলেন: “ইসরায়েল নিজেই যুদ্ধ থামাতে কাকুতি-মিনতি করেছে। এমনকি ইসরায়েলের নিরাপত্তামন্ত্রী পর্যন্ত বলেন, ‘আমরা জানতাম না ইরান এত শক্তিশালী।’”

কাসিম হুসাইন লিখেছেন: “ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান অত্যাচারী শক্তিগুলোকে পরাজিত করে ইসলামের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করেছে।”

আরেকজন বলেন: “আরব শাসকরা ইসরায়েলি ও আমেরিকান ঘাঁটিকে ইসলামী ভূমিতে স্থান দিয়ে দখলদারিত্বকে শক্তিশালী করছে।”

আরব বিশ্বে এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা ইরানের প্রতিরোধ, শৌর্য-বীর্য ও জাতীয় ঐক্যের প্রতি এক স্বতঃস্ফূর্ত স্বীকৃতি। একইসঙ্গে এতে উঠে এসেছে ইসরায়েল ও তার মিত্রদের দুর্বলতা, এবং আরব শাসকদের প্রতি তীব্র অসন্তোষ ও সমালোচনা।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha