হাওজা নিউজ এজেন্সি: সমাজকে আদর্শিকভাবে উন্নত করতে হলে, সমাজের প্রতিটি সদস্যকেই অন্যদের বিকাশে সচেষ্ট হতে হবে।
ইসলামের ব্যক্তিগত ও সামাজিক শিক্ষার সমন্বয়
ইসলাম মানুষকে চূড়ান্ত কল্যাণ ও অনন্ত মুক্তির দিকে পরিচালিত করার জন্য ব্যক্তিগত এবং সামাজিক উভয় ধরনের শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। যেহেতু সমাজ ব্যক্তি দিয়ে গঠিত, তাই সমাজকে গঠন করতে হলে প্রতিটি ব্যক্তিকে একে অপরের সংশোধন ও উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।
গোমরাহদের সঙ্গে আহলে বাইতের (আ.) আচরণ
আহলে বাইত (আ.) পথভ্রষ্ট বা গোমরাহ মানুষদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা দয়া, সহানুভূতি এবং সঠিক পথে আহ্বানের উপর ভিত্তি করে গঠিত। তারা সবসময় চেষ্টা করতেন মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে—কখনও কঠোরতা বা ঘৃণার মাধ্যমে নয়, বরং ভালোবাসা, যুক্তি ও সহনশীলতার মাধ্যমে।
১. সত্যের পথে আহ্বান
আহলে বাইত (আ.) সবসময় মানুষকে সত্য ও হেদায়াতের পথে ডেকেছেন। তারা যুক্তি, প্রজ্ঞা ও সংলাপের মাধ্যমে মানুষের মনে চিন্তার উদ্রেক করতেন এবং ভুল বিশ্বাস থেকে মুক্ত করতেন।
২. দয়া ও ভালোবাসা
তাদের আচরণে সদয়তা ও ভালোবাসা স্পষ্ট ছিল। তারা কখনও কঠোর শাস্তি বা অবজ্ঞাসূচক আচরণ করতেন না, বরং মানুষের অন্তর জয় করে তাদের আল্লাহ ও ইসলামের দিকে আহ্বান করতেন।
৩. শিক্ষা ও দীনী জ্ঞানের প্রসার
আহলে বাইত (আ.) মানুষের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দানে মনোনিবেশ করতেন। কুরআন, হাদিস এবং ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে তারা সত্যের স্বরূপ তুলে ধরতেন।
৪. ধৈর্য ও সহনশীলতা
গোমরাহ বা বিভ্রান্ত মানুষদের সংশোধনে তারা অসাধারণ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। তারা জানতেন, সত্যের পথে ফিরিয়ে আনা একটি ধীর ও ধৈর্যপূর্ণ প্রক্রিয়া।
৫. যুক্তিভিত্তিক সমালোচনা
আহলে বাইত (আ.) বিভ্রান্ত মতবাদ ও ভুল বিশ্বাসের যুক্তিসম্মত সমালোচনা করতেন এবং দলিল-প্রমাণের মাধ্যমে সেগুলো খণ্ডন করতেন।
৬. ব্যক্তিগত পরিস্থিতি বিবেচনা
তারা প্রতিটি ব্যক্তির সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সংশোধনের জন্য যথাযথ পদ্ধতি গ্রহণ করতেন।
এক অনন্য দৃষ্টান্ত: ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) ও হিশাম ইবনে ইসমাঈল
হিশাম ইবনে ইসমাঈল ছিলেন মদীনার গভর্নর। তিনি ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন। খলীফা ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিক তাকে পদচ্যুত করে এবং জনসমক্ষে অপমান করার নির্দেশ দেয়।
হিশাম বলেছিল, “আমি কেবল আলী ইবনে হুসাইনের প্রতিক্রিয়াকেই ভয় পাচ্ছি।”
কিন্তু ইমাম (আ.) তার অনুসারীদের নির্দেশ দেন— “তোমরা কেউ তাকে কষ্ট দিও না।”
ইমাম (আ.) নিজেও তার প্রতি কোনো ধরণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাননি। এমনকি এক বর্ণনায় এসেছে—ইমাম (আ.) হিশামকে বলেন, “তোমার কোনো প্রয়োজন থাকলে বলো, আমি তা পূরণ করব।” [১]
হিশাম ইমামের এই আচরণ দেখে বলেছিল, “আল্লাহ ভালো করেই জানেন কার ওপর নিজের রিসালাত অর্পণ করবেন।” (সূরা আন'আম: ১২৪) [২]
আহলে বাইতের (আ.) জীবন আমাদের শিক্ষা দেয়—গোমরাহ বা বিভ্রান্ত মানুষের সঙ্গে কেমন দয়া, সহনশীলতা, যুক্তি ও হৃদয় দিয়ে আচরণ করতে হয়। এ শিক্ষাই বর্তমান সময়েও আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় মিশনে পথপ্রদর্শক হতে পারে।
সূত্র:
১. মুহাম্মদ ইবনে জারীর তাবারী, তারিখ তাবারী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২৮
২. আলী ইবনে ঈসা ইরবলী, কাশফুল গুম্মা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১০০
হাওজা নিউজ এজেন্সি/ রাসেল আহমেদ রিজভী
আপনার কমেন্ট