হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা ফিরোজ হোসাইন জাইদি তিনি হলেন পশ্চিম বঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সরণীয় গ্রামের একজন মুবাল্লিগ, আঞ্জুমানে ৭২ শহিদানে কারবালার সভাপতি ও আলিয়া একাডেমির সেক্রেটারি।
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম, মাওলানা সাহেব। সম্প্রতি আয়াতুল্লাহ খামেনির বিরুদ্ধে যে হত্যাচেষ্টার খবর সামনে এসেছে, সেটিকে আপনি ব্যক্তিগতভাবে কীভাবে মূল্যায়ন করেন? এটা কি শুধুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, না কি এর পেছনে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে?
মাওলানা জাইদি: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। ভাই মজিদুল ইসলাম শাহ, আমার দৃষ্টিতে এটি মোটেই কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি একটি সুপরিকল্পিত, গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দুকে দুর্বল করা এবং মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত শক্তির নেতৃত্বকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া।
প্রশ্ন: একটু বিস্তারিত বলবেন কি—কেন আপনি মনে করছেন এটি ষড়যন্ত্র?
মাওলানা জাইদি: অবশ্যই। যারা বিশ্ব রাজনীতির গভীর প্রবাহ লক্ষ্য করেন, তারা জানেন—আয়াতুল্লাহ খামেনির নেতৃত্বে ইরান আজ একমাত্র রাষ্ট্র, যা স্পষ্টভাবে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। এই শক্তিগুলো বছরের পর বছর ধরে কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে ইরানকে দুর্বল করতে চেয়েছিল। যখন তাতে ব্যর্থ হয়েছে, তখন তারা ব্যক্তিগত আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছে। ইতিহাসে আমরা বারবার এমন ষড়যন্ত্রের নজির দেখেছি—ইমাম খোমেনি ও অন্যান্য মুজাহিদ নেতাদের বিরুদ্ধেও একই পন্থা নেওয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন: তাহলে আপনি বলছেন, এটি শুধু ইরানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয়?
মাওলানা জাইদি: একদমই নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, যার কেন্দ্রস্থলে রয়েছে মুসলিম প্রতিরোধ শক্তিকে ধ্বংস করা। এই হত্যাচেষ্টা আসলে এক ধরণের "ম্যাসেজ"—যারা আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে, তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এটি আতঙ্ক সৃষ্টির রাজনীতি। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, আয়াতুল্লাহ খামেনি সে রকম মানুষ নন, যিনি হুমকিতে নত হবেন।
প্রশ্ন: সাধারণ মুসলমানদের জন্য এর বার্তা কী?
মাওলানা জাইদি: আমাদের চোখ খুলে দেওয়ার সময় এসেছে। মুসলিম উম্মাহ আজ টুকরো টুকরো হয়ে আছে, কিন্তু শত্রু একজোট। যারা ইসলামের নামে শান্তি, ন্যায় ও স্বাধীনতা চায়, তাদের নেতৃত্ব আজ টার্গেট হচ্ছে। কাজেই, এই হামলা শুধু একজন ফকীহ বা রাজনীতিবিদের ওপর নয়—এই হামলা আমাদের অস্তিত্বের ওপর, আমাদের আত্মমর্যাদার ওপর। তাই আমাদের জেগে উঠতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
প্রশ্ন: ইসলামী বিশ্ব কী ভূমিকা রাখতে পারে এই প্রেক্ষাপটে?
মাওলানা জাইদি: মুসলিম উম্মাহ হোক বা আলেম সমাজ, সবার উচিত স্পষ্ট ও বলিষ্ঠ অবস্থান নেওয়া। নীরবতা এখানে সমর্থনের সমান। ইসলামী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে হুমকিকে শুধু ইরানের সমস্যা ভাবলে চলবে না। এটি গোটা উম্মাহর চ্যালেঞ্জ। প্রার্থনা, প্রতিবাদ, সচেতনতা—সব দিক থেকেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
প্রশ্ন: আপনার গভীর বিশ্লেষণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ, মাওলানা সাহেব।
মাওলানা জাইদি: আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্য বুঝে সেই অনুযায়ী কাজ করার তাওফিক দিন। আপনাকেও ধন্যবাদ, মজিদুল ইসলাম শাহ ভাই।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মজিদুল ইসলাম শাহ
আপনার কমেন্ট