হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন জনাব জয়নুল আবেদিন সাহেব, জামেয়া ইমাম আমীরুল মুমিনীন (আ.) নাজাফি হাউসের (মুম্বাই, ভারত) শিক্ষক।
হাওজা নিউজ এজেন্সি: এই সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, দলগুলোর আদর্শিক সংকট এবং ধর্মকে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ তুলে ধরেনপবিত্র রজব মাস ও ঈমাম বাকির (আ.)–এর জন্মদিবস নিয়ে আলোচনা করেন, যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি:
হাওজা নিউজ এজেন্সি: আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হাওজা নিউজ এজেন্সিকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই, প্রথমেই জানতে চাই—পবিত্র রজব মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত কী?
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাওলানা জয়নুল আবেদীন: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, রজব মাস ইসলামের চারটি সম্মানিত (আশহুরুল হুরুম) মাসের একটি। এই মাসকে হাদিসে “শাহরুল্লাহ”—অর্থাৎ আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। রজব মাস মূলত আত্মশুদ্ধি, তওবা, ইস্তিগফার এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি বিশেষ সুযোগ। এই মাস থেকেই মূলত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস।”
অতএব, রজব মাস হলো আত্মিক উন্নতি ও গুনাহ থেকে ফিরে আসার এক সুবর্ণ সময়।
হাওজা নিউজ এজেন্সি: রজব মাসে কী ধরনের ইবাদত ও আমল বেশি গুরুত্ব পায়?
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাওলানা জয়নুল আবেদীন: রজব মাসে নফল রোজা, ইস্তিগফার, দরুদ পাঠ, দোয়া ও কুরআন তিলাওয়াত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে “আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আসআলুহুত তাওবাহ” বেশি বেশি পড়ার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া এই মাসে সংঘটিত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো—যেমন মি‘রাজ—মুমিনদের ঈমানকে আরও দৃঢ় করে। এই মাসে ইবাদতের মাধ্যমে একজন মানুষ নিজের আত্মাকে পাপমুক্ত করার পথে এগিয়ে যেতে পারে।
হাওজা নিউজ এজেন্সি: রজব মাসেই পবিত্র ঈমাম মুহাম্মদ আল-বাকির (আ.)–এর জন্ম। তাঁর জন্মদিনের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বলবেন?
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাওলানা জয়নুল আবেদীন: নিশ্চয়ই। ১লা রজব, ৫৭ হিজরি—এই দিনে পঞ্চম নিষ্পাপ ইমাম, ঈমাম মুহাম্মদ আল-বাকির (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এমন এক সময়ে ইমামতি লাভ করেন, যখন ইসলামী জ্ঞান বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। ঈমাম বাকির (আ.) ইসলামী জ্ঞানের গভীর বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে সত্য ইসলামকে সংরক্ষণ করেন।
“বাকির” অর্থ হলো—যিনি জ্ঞানকে বিদীর্ণ করেন, অর্থাৎ জ্ঞানের গভীরে প্রবেশ করেন। তিনি ফিকহ, তাফসির, হাদিস ও আকিদার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
হাওজা নিউজ এজেন্সি: ঈমাম বাকির (আ.)–এর জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষা আন্দোলনের বিশেষ দিকগুলো কী ছিল?
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাওলানা জয়নুল আবেদীন: ঈমাম বাকির (আ.)–এর অন্যতম বড় অবদান হলো ইসলামী শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া। তাঁর দরবারে শত শত ছাত্র শিক্ষা গ্রহণ করতেন। তিনি আহলে বাইতের বিশুদ্ধ শিক্ষাকে সংরক্ষণ ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁরই ধারাবাহিকতায় তাঁর পুত্র ঈমাম জাফর সাদিক (আ.)–এর সময়ে ইসলামী জ্ঞানচর্চা চূড়ান্ত বিকাশ লাভ করে।
তিনি মানুষকে শুধু ইবাদতে নয়, চিন্তায় ও নৈতিকতায় পরিশুদ্ধ হতে শেখাতেন।
হাওজা নিউজ এজেন্সি: বর্তমান সমাজে ঈমাম বাকির (আ.)–এর জীবন থেকে আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি?
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাওলানা জয়নুল আবেদীন: আজকের সমাজে বিভ্রান্তি, অজ্ঞতা ও নৈতিক অবক্ষয় ব্যাপক। ঈমাম বাকির (আ.) আমাদের শেখান—জ্ঞান ছাড়া ইবাদত পূর্ণতা পায় না। একই সঙ্গে তিনি আমাদের সহনশীলতা, সত্যবাদিতা ও ন্যায়পরায়ণতার শিক্ষা দেন।
তিনি কখনো জুলুমের সাথে আপস করেননি, আবার অযথা সংঘাতও সৃষ্টি করেননি। এই ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি আজকের যুব সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাওজা নিউজ এজেন্সি: রজব মাস ও ঈমাম বাকির (আ.)–এর জন্মদিবস উপলক্ষে আপনার বিশেষ বার্তা কী?
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাওলানা জয়নুল আবেদীন: আমার বার্তা হলো—আমরা যেন রজব মাসকে কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে নয়, বাস্তব জীবনে পরিবর্তনের মাস হিসেবে গ্রহণ করি। ঈমাম বাকির (আ.)–এর জীবন থেকে জ্ঞান, তাকওয়া ও মানবিকতার শিক্ষা নিয়ে নিজেদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করি। তাহলেই এই জন্মদিন পালন সার্থক হবে।
উপসংহার:
পবিত্র রজব মাস আত্মশুদ্ধির মাস এবং এই মাসে জন্মগ্রহণকারী ঈমাম মুহাম্মদ আল-বাকির (আ.) ইসলামী জ্ঞানের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর জীবন ও আদর্শ অনুসরণ করাই হতে পারে এই পবিত্র সময়ের সর্বোত্তম আমল।
আপনার কমেন্ট