শুক্রবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১৯:৫৫
ছাত্ররা ভবিষ্যতের নেতা এবং ইমামে আসর (আ.)-এর সেনাবাহিনীর অগ্রদূত   

ভারতের ওয়ালী ফকীহের প্রতিনিধি’র কোমে অবস্থিত মাদ্রাসায়ে শহীদে সালেস (রহ.)-এর বিশেষ সফর, ছাত্রদের উদ্দেশ্যে দূরদর্শী দিকনির্দেশনা

হাওযা নিউজ এজেন্সি–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের ওয়ালী ফকীহের প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন ড. আব্দুল মজিদ হাকিম ইলাহি কোমের মর্যাদাপূর্ণ মাদ্রাসায়ে শহীদে সালেস (রহ.)-এ বিশেষ সফর ও ছাত্রদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন।

অনুষ্ঠান শুরু হয় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে। মেধাবী ছাত্র জনাব ওয়াজাহাত তার সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াতের সৌভাগ্য অর্জন করেন।

ছাত্ররা ভবিষ্যতের নেতা এবং ইমামে আসর (আ.)-এর সেনাবাহিনীর অগ্রদূত — হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন আব্দুল মজিদ হাকিমুল্লাহি

অনুষ্ঠানে রাসূলে আকরাম (সা.)-এর প্রশংসায় জনাব সাইয়্যেদ হামজা জায়েদি আন্তরিক কবিতা পাঠ করেন। পাশাপাশি মাদ্রাসায়ে শহীদে সালেস (রহ.)-এর সুরােদল দল ইমামে জামান (আজ.)-এর শানে প্রেরণাদায়ী ও আবেগঘন পরিবেশনা উপস্থাপন করে, যা আসরকে আরও অধিক আধ্যাত্মিক ও আলোকোজ্জ্বল করে তোলে।

পরে মাদ্রাসার পরিচালক হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন জুবাইরি বক্তব্য রাখেন। তিনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মাদ্রাসার বৈজ্ঞানিক, ধর্মীয় ও নৈতিক-শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের উপর আলোকপাত করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, এই মাদ্রাসা শিক্ষা-প্রশিক্ষণ, নৈতিকতা ও ধর্মীয় চেতনার ক্ষেত্রে বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেছে, যেখানে ভারতের বিভিন্ন শহর থেকে আগত ছাত্ররা তাদের জ্ঞানপিপাসা নিবারণ করে এবং ভবিষ্যতের দাঈ ও দ্বীনের খেদমতগার হিসেবে গড়ে ওঠে।

অনুষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দ ভারতের সাবেক ওয়ালী ফকীহের প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন হাজী মাহদি মাহদভীপুরের আন্তরিকতা, ত্যাগ, পিতৃসুলভ মমতা ও দিকনির্দেশনার জন্য শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। সবাই তাঁর সেবাকে ইতিহাসের সোনালি অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত করে উল্লেখ করেন এবং তাঁর সুস্বাস্থ্য ও অধিক তাওফিক কামনা করেন। একই সাথে বর্তমান প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন হাকিম ইলাহির আগমনে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও আনন্দ প্রকাশ করেন।

শেষ বক্তৃতায় ড. হাকিমুল্লাহি ছাত্রদের মূল্যবান ও দূরদর্শী দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

তিনি বলেন: হে প্রিয় ছাত্ররা! তোমরা বিশ্বের আটশো কোটি তেহাত্তর মিলিয়ন মানুষের মধ্যে সেই নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গ, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা তাঁর বিশেষ কৃপায় দ্বীন ইসলাম খেদমতের জন্য মনোনীত করেছেন। এটি এক মহান দিভ্য নেয়ামত। এর মর্যাদা রক্ষা করো এবং তোমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস আল্লাহ, দ্বীন ও ইমামে জামান (আজ.)-এর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করো।

তিনি আরও বলেন: মনে রেখো! তোমরা শুধু সাধারণ ছাত্র নও, বরং ভবিষ্যতের নেতা, দাঈ এবং দ্বীনের প্রকৃত সৈনিক। তোমাদের দায়িত্ব শুধু জ্ঞান অর্জনে সীমাবদ্ধ নয়, বরং চরিত্র, তাকওয়া, ধৈর্য ও খেদমতের মাধ্যমে ইমাম জামানার (আ.) প্রকৃত সেনা হওয়া। ইমামের সাহায্য শুধু জবান বা দোয়ার মাধ্যমে নয়, বরং কর্ম, সেবা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে লাভ করা যায়। ইমামে আসর (আ.) আমাদের সবার দিকে লক্ষ্য রাখেন, আর তোমরা ছাত্ররা তাঁর সেনাবাহিনীর অগ্রদূত। এই দায়িত্ব সর্বদা হৃদয়ে জীবিত রেখো।

হুজ্জাতুল ইসলাম হাকিম ইলাহি মাদ্রাসায়ে শহীদে সালেস (রহ.)-এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিজের দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করে বলেন:
“যেমনভাবে হুজ্জাতুল ইসলাম আগা মাহদভীপুর তাঁর মূল্যবান প্রচেষ্টা এই মাদ্রাসার খেদমতে উৎসর্গ করেছেন, তেমনি আমিও আমার সর্বশক্তি এই বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক কেন্দ্রের সেবায় নিয়োজিত করব। এ মাদ্রাসা শুধু একটি পাঠশালা নয় বরং ঈমান ও বাসিরতের এক দূর্গ, যেখান থেকে ভবিষ্যতের সংস্কারক, দাঈ ও নেতা তৈরি হবে।”

সফরের সময় ভারতের ওয়ালী ফকীহের প্রতিনিধি মাদ্রাসার বিভিন্ন অংশ যেমন আবাসিক ভবন, শ্রেণিকক্ষ ও প্রশিক্ষণ বিভাগ পরিদর্শন করেন। তিনি ছাত্রদের অবস্থা, শিক্ষাগত ও নৈতিক পরিবেশ, এবং তাদের দৈনন্দিন জীবন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করেন এবং মাদ্রাসার কর্মকর্তাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

এই নূরানী ও আত্মিক আসর আধ্যাত্মিক পরিবেশে সমাপ্ত হয়। শেষে দোয়া করা হয়—আল্লাহ তাআলা যেন মাদ্রাসায়ে শহীদে সালেস (রহ.)-এর ছাত্রদের দ্বীনের সর্বোত্তম খেদমতগার বানান, তাঁদের অন্তরে আহলে বাইত (আ.)-এর প্রেম ও ইমাম জামানার (আ.) সাহায্যের প্রেরণা সদা জীবিত রাখেন এবং তাঁদের পদক্ষেপকে স্থিতিশীলতা ও সফলতা দান করেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha