হাওজা নিউজ এজেন্সি: ওয়াকফের তথ্য অনুযায়ী, ইহুদি নববর্ষের শেষ দিনে সকালে মোট ৩২৮ জন বসতি স্থাপনকারী মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢোকে এবং সেখানে ধর্মীয় আচার পালন করে। এর আগের দুই দিনেও ৮৪৩ জন বসতি স্থাপনকারী একইভাবে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে প্রার্থনা ও ধর্মীয় নৃত্য সম্পাদন করে।
আল-আকসা মসজিদ ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হিসেবে মুসলিমদের কাছে সম্মানিত। অন্যদিকে ইহুদিরা এই স্থানকে “টেম্পল মাউন্ট” বলে উল্লেখ করে এবং দাবি করে এটি প্রাচীন দুটি মন্দিরের স্থান ছিল।
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী সামরিক পাহারায় বসতি স্থাপনকারীদের এই প্রবেশের অনুমতি দিয়ে থাকে। ফিলিস্তিনিরা এসব হামলাকে ইসলামী ও আরব পরিচয় মুছে ফেলার প্রচেষ্টা এবং দখলদারিত্বকে পাকাপোক্ত করার অংশ হিসেবে দেখে থাকে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ওয়াকফ ও পূর্ববর্তী চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রকাশ্যে ইহুদি উপাসনার সুযোগ দিচ্ছে। ডানপন্থী ইসরায়েলি দৈনিক ইসরায়েল হাইয়োম এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল-আকসায় এখন “ঐতিহাসিক পরিবর্তন” ঘটছে — এমনসব আচার, যা আগে উত্তেজক বলে নিষিদ্ধ ছিল, তা এখন নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রকাশ্যে প্রার্থনা, দলীয় উপাসনা, সিজদা, উচ্চস্বরে গান, এমনকি ইসরায়েলের জাতীয় সংগীত পরিবেশন।
পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালে যেখানে বছরে ৬ হাজারেরও কম ইহুদি দর্শনার্থী আসত, ২০২৫ সালে সেই সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজারে পৌঁছেছে। বর্তমানে মসজিদ প্রাঙ্গণে বিয়ে, বার মিৎসভা (ইহুদি ধর্মীয় অনুষ্ঠান) সহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও বসতি স্থাপনকারীরা প্রার্থনার বই, তোরাহ স্ক্রল এবং শোফার (ইহুদি শিঙ্গা) প্রাঙ্গণে নিয়ে আসছে।
একজন ইসরায়েলি লেখক এবং কর্মী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “যা একসময় নিষিদ্ধ ছিল, তা এখন প্রকাশ্যে, স্বাভাবিক এবং সাধারণ হয়ে গেছে। অনেকেই এখন প্রকাশ্যে প্রাচীন সিজদা আচার পালন করে, নতুন মাসের শুরুতে গান গেয়ে হালেল প্রার্থনা সম্পাদন করে।”
এই হামলা এমন এক সময়ে ঘটল যখন পশ্চিম তীরে উত্তেজনা বাড়ছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত দখলদার বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় অন্তত ১,০৪৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭,০০০ এরও বেশি আহত হয়েছেন।
গত জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত (ICJ) এক পরামর্শমূলক মতামত দেয়, যেখানে তারা ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের সব অবৈধ বসতি ভেঙে ফেলার আহ্বান জানায়।
আপনার কমেন্ট