বৃহস্পতিবার ২ অক্টোবর ২০২৫ - ১১:১০
ফিলিস্তিনিদের বাদ দিয়ে তৈরি ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনায় ‘মৌলিক দুর্বলতা’: বিশ্লেষক

যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন ২০ দফা গাজা পরিকল্পনাকে শুরু থেকেই ভঙ্গুর ও অকার্যকর বলে আখ্যা দিয়েছেন তেহরানভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক হোসেইন আজোরলু। তাঁর মতে, এ পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো—এতে ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: সোমবার ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বৈঠকের পর হোয়াইট হাউস এ পরিকল্পনা প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, হামাস নিরস্ত্র হলে ধাপে ধাপে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে, বন্দিদের মুক্তি দেবে এবং আন্তর্জাতিক বা আরব শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হবে।

কিন্তু আজোরলু বলেন, “যাদের জন্য এ পরিকল্পনা করা হয়েছে—সেই ফিলিস্তিনিদেরই এখানে কোনো স্থান নেই। এমনকি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এতে বৈধতার বড় সংকট তৈরি হয়েছে।”

পরিকল্পনার দুর্বলতা
•কার্যকরী নিশ্চয়তা নেই: বন্দিমুক্তি বা নিরস্ত্রীকরণের মতো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হবে কীভাবে—এ বিষয়ে কোনো পরিষ্কার কাঠামো নেই। যদি যুক্তরাষ্ট্রই তদারক করে, তবে ইতিহাস প্রমাণ করে তারা নিরপেক্ষ নয়।

•ইসরায়েলের অবিশ্বাসযোগ্য রেকর্ড: যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ ও পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের অভ্যাস দেখিয়ে তিনি বলেন, ইসরায়েল কখনোই চুক্তি মেনে চলেনি।

•রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অস্পষ্ট: গাজায় ভবিষ্যতে কারা শাসন করবে বা নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে—এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর পরিকল্পনায় নেই।

•হামাস নিরস্ত্রীকরণের দাবি অবাস্তব: আজোরলুর মতে, হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠী গাজার সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামোর গভীরে প্রোথিত। তাদের পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণ কোনো বাস্তবসম্মত সমাধান নয়।

হামাসের দৃষ্টিভঙ্গি
তিনি বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি রোধ ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির মতো আশ্বাস ফিলিস্তিনিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবে নির্ভরযোগ্য গ্যারান্টি ছাড়া হামাস অস্ত্র সমর্পণ করবে না। “অস্ত্র জমা দিতে বললে শক্তিশালী নিশ্চয়তা চাই। নইলে এটি ফিলিস্তিনি অভ্যন্তরীণ সংঘাত ডেকে আনতে পারে।”

যুদ্ধ পরিস্থিতি
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের যুদ্ধ দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করেছে। এ পর্যন্ত ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং অন্তত ১ লাখ ৬৭ হাজার আহত হয়েছেন। পুরো এলাকার পাড়া-মহল্লা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ।

আজোরলু মনে করেন, “দুই বছরের প্রতিরোধ ইসরায়েলের পরিকল্পনা—গাজাকে দখল ও জনগণকে উৎখাত—ব্যর্থ করে দিয়েছে। এটিই ফিলিস্তিনিদের বড় অর্জন।”

তিনি বলেন, যে কোনো টেকসই শান্তি পরিকল্পনা বাইরের চাপ নয়, বরং আঞ্চলিক পক্ষগুলোর উদ্যোগ থেকে আসতে হবে। “যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পরিকল্পনাগুলো সাধারণত ইসরায়েলের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেয়। তাই এসব উদ্যোগ সংঘাত বাড়ায়, সমাধান আনে না।”

তাঁর মতে, ফিলিস্তিনিদের কেন্দ্রীয় অংশগ্রহণ ও শক্তিশালী প্রয়োগ কাঠামো ছাড়া যেকোনো শান্তি প্রস্তাব কেবল কাগুজে চুক্তি হয়েই থেকে যাবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha