শুক্রবার ৩ অক্টোবর ২০২৫ - ০৯:৪৫
দ্রুজ সম্প্রদায়: আকিদা, বিস্তার ও ধর্মীয় অবস্থান

এই সম্প্রদায়ের অতিরিক্ত বাতিক্রমী গূঢ়বাদ এর কারণে, তাদের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো আকিদা সর্বজনীনভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেওয়া কঠিন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: দ্রুজরা অনেক নৈতিক গুণাবলিকে যেমন সততা, হিংসা থেকে বিরত থাকা ও পবিত্রতাকে অত্যাবশ্যক মনে করে এবং এগুলোকে ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে গণ্য করে। তবে, তারা প্রচলিত শরিয়তের বিধান যেমন নামাজ ও রোজাকে নিজেদের বাস্তব দায়িত্ব থেকে বাদ দিয়েছে এবং এসবের ভেতরে গূঢ় ব্যাখ্যা খুঁজে নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ—

▫️নামাজ: তারা একে “মাওলা আল-হাকিমের সঙ্গে হৃদয়ের সংযোগ” হিসেবে ব্যাখ্যা করে।

▫️রোজা: তারা একে “আল-হাকিমের তাওহিদের প্রতি আনুগত্যে অন্তরকে স্থির রাখা” হিসেবে বোঝায়।

▫️যাকাত: তারা এটিকে ব্যাখ্যা করে “আল-হাকিমের তাওহিদের প্রতি ঈমান ছাড়া অন্য সব আসক্তি থেকে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা” হিসেবে।

ভৌগোলিক বিস্তার ও রাজনৈতিক প্রবণতা
অতীতে দ্রুজদের উপস্থিতি ছিল লেবানন, শাম (সিরিয়া), কুফা, মাগরেব ও এমনকি ভারতে। বর্তমানে তাদের প্রধান কেন্দ্রগুলো লেবাননের শুফ, জাবল তিরান ও ওয়াদি তায়েম অঞ্চলে এবং শাম ও অধিকৃত ফিলিস্তিনে (যেমন আক্কা শহর) অবস্থিত।
তাদের আজকের প্রধান কেন্দ্র হলো সিরিয়ার সুয়েইদা প্রদেশ, যেখানে হাওরান পাহাড় অবস্থিত, যা “জাবল আল-দরুজ” নামে পরিচিত।

লেবানন, সিরিয়া ও অধিকৃত ফিলিস্তিনে বসবাসকারী প্রতিটি দ্রুজ সম্প্রদায়ের আলাদা নেতা রয়েছে। ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তাদের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান দেখা যায়। যেমন— অধিকৃত ভূমিতে বসবাসরত কিছু দ্রুজ ইসরায়েলি শাসনকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সামরিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে।

মুসলমান নাকি অমুসলিম?
দ্রুজরা ইসলামের কিছু মৌলিক আকিদা, যেমন আখিরাত/মা'আদ অস্বীকার করেছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের মধ্যে তানাসুখ (পুনর্জন্ম/আত্মার পুনরাবর্তন), তাজাস্সুদ (ঈশ্বরের রূপ ধারণ) এবং শরিয়তের বিধানের গূঢ় ব্যাখ্যার মতো ধারণা প্রচলিত। এ কারণে বহু ইসলামি গবেষক ও আলেম তাদেরকে ইসলামের সীমানার বাইরে গণ্য করেছেন।

অন্যদিকে, কিছু গবেষক মনে করেন—যেহেতু দ্রুজরা নিজেদেরকে প্রকাশ্যে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দেয় এবং তাদের সম্প্রদায়ের কেউ ধর্মীয় বিশ্বাস বা আচার লঙ্ঘন করলে তাকে “মুসলিম সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন” মনে করে, তাই তাদেরকে ইসলামের একটি শাখা হিসেবেও শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।

দ্রুজরা মূলত শিয়া ইসমাইলিয়ার একটি শাখা, যাদের অতিরিক্ত গূঢ়বাদ ও গোপনীয়তা তাদের প্রকৃত বিশ্বাস সম্পর্কে নির্ভুল ধারণা পাওয়া কঠিন করে তুলেছে। কেউ কেউ তাদেরকে একত্ববাদী মনে করে, আবার অনেকে আল-হাকিম বি-আমরিল্লাহ-এর ঈশ্বরত্বে বিশ্বাস ও তানাসুখ ধারণার প্রতি তাদের আস্থার কথা তুলে ধরে, যা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার পরিপন্থী।

তারা নৈতিকতার নীতিগুলো মেনে চললেও নামাজ-রোজার মতো মৌলিক শরিয়তকে গূঢ় ব্যাখ্যার মাধ্যমে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। এ কারণেই তাদের ধর্মীয় অবস্থান নিয়ে দ্বিমত রয়েছে— কেউ তাদের ইসলাম বহির্ভূত মনে করেন, আবার কেউ তাদের ইসলামের অন্তর্ভুক্ত একটি সম্প্রদায় হিসেবে গণ্য করেন। বর্তমানে তারা মূলত লেবানন, সিরিয়া ও অধিকৃত ফিলিস্তিনে বসবাস করছে এবং প্রতিটি অঞ্চলে তাদের আলাদা নেতৃত্ব বিদ্যমান।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha