হাওজা নিউজ এজেন্সি: কুরআন ও হাদিস গবেষণা কেন্দ্রের অধীনস্থ নৈতিকতা ও মনোবিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক হুজ্জাতুল ইসলাম পাশান্দিদেহ মঙ্গলবার এক একাডেমিক আলোচনায় এই বক্তব্য দেন। আলোচনার শিরোনাম ছিল — “ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তম চরিত্রের গুণাবলি”। এটি ছিল ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্মে তুলনামূলক নৈতিক অধ্যয়ন বিষয়ক দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের একটি বিশেষ অধিবেশন।
তিনি বলেন, ইসলামি নৈতিকতার মূল উদ্দেশ্য হলো মানবসম্পর্ককে সহজ, উন্মুক্ত ও কল্যাণমুখী করে তোলা, যাতে মানুষ পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্মানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।
নৈতিকতা: ধর্মীয় সংলাপের সেতুবন্ধন
তিনি মনে করেন, নৈতিকতা এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম একে অপরের সঙ্গে সাধারণ মূল্যবোধের ভিত্তিতে সংলাপ ও সহযোগিতা গড়ে তুলতে পারে। তার মতে — “নৈতিকতা এমন এক সর্বজনীন ভাষা, যা ধর্ম ও সংস্কৃতির সীমা অতিক্রম করে মানবতার অভিন্ন ভিত্তি তৈরি করতে পারে। এই পারস্পরিক সহযোগিতা বিশ্বে নৈতিকতার অবক্ষয় থেকে মানবসভ্যতাকে রক্ষা করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, আজকের বিশ্বে নৈতিক অবক্ষয়ের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। তাই ধর্মীয় ঐতিহ্য থেকে নতুন অনুপ্রেরণা গ্রহণ করে মানবিক মূল্যবোধ পুনরুজ্জীবন ঘটানো সময়ের দাবি।
ইসলামে সদাচারের স্বতন্ত্র ধারণা
তিনি ব্যাখ্যা করেন, প্রতিটি ধর্মের নিজস্ব ধারণাগত শক্তি ও ভাষা সৃষ্টির ক্ষমতা আছে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন — “ইসলামে মাকারিমুল আখলাক (উচ্চ নৈতিক গুণাবলি)-এর ধারণা বিদ্যমান, যা খ্রিষ্টীয় সাহিত্যে এই রূপে পাওয়া যায় না।”
তার মতে, ইসলামী পাঠে ব্যবহৃত হুসনুল খুলুক (উত্তম চরিত্র) শব্দটি সব নৈতিক গুণকে বোঝায় না; বরং এটি বিশেষ কিছু নৈতিক গুণের সমষ্টি, যা মানবসম্পর্কে ভারসাম্য, সংযম ও সৌজন্য প্রতিষ্ঠা করে।
উত্তম চরিত্র: সম্পর্কের সৌন্দর্য ও সমাজের সুর
তিনি বলেন, “ভালো চরিত্র কেবল একটি নৈতিক আদর্শ নয়; এটি সমাজে যোগাযোগের সহজতা, পারস্পরিক আস্থা ও মানসিক প্রশান্তি আনয়নের বাস্তব উপায়।”
সামাজিক জীবনে মানুষে মানুষে সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে সদাচার অপরিহার্য। কোমল আচরণ, সহনশীলতা ও হাসিমুখ কেবল ব্যক্তিত্বকে সুন্দর করে না, সমাজেও শান্তির আবহ তৈরি করে।
সদাচারের প্রকাশ: সহনশীলতা, হাসিমুখ ও ন্যায়পরায়ণতা
ইসলামী শিক্ষায় উত্তম চরিত্রের নানা দিক উল্লেখ রয়েছে — যেমন বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার, নমনীয়তা, মতভেদে ধৈর্য ধারণ (মুদারা), সদয় বাক্য, এবং হাসিমুখে অন্যকে গ্রহণ করা (তালাকাতুল ওয়াজহ)।
তিনি বলেন, “রসবোধও উত্তম চরিত্রের একটি দিক। এটি অন্যদের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে দেয় এবং সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।”
তাছাড়া, ক্রোধ সংযম (হিলম) এবং ন্যায়পরায়ণতা (আদল) উত্তম চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা। হুজ্জাতুল ইসলাম পাশান্দিদেহ ব্যাখ্যা করেন — “ন্যায়পরায়ণতা মানে নিজের ও অন্যের মাঝে পার্থক্য না করা; যেমন আমরা নিজের জন্য মঙ্গল কামনা করি, তেমনি অন্যের জন্যও একই কামনা করা উচিত।”
নৈতিকতা: সমাজে মর্যাদা ও ভারসাম্যের চাবিকাঠি
তিনি বলেন, কোমল স্বর, শালীন অভিব্যক্তি ও ন্যায্য আচরণ সামাজিক শ্রেণিবিভাজন কমায় এবং পারস্পরিক সম্মান বৃদ্ধি করে।
তিনি আহ্বান জানান, “ইসলামী নৈতিক শিক্ষাকে কেবল আদর্শ বা তাত্ত্বিক ধারণা হিসেবে নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব নীতিমালা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।”
তার মতে, উত্তম চরিত্রের অনুশীলন শুধু ব্যক্তির উন্নতি নয়, বরং সমগ্র সমাজের নৈতিক পুনর্জাগরণের পথ।
আপনার কমেন্ট