মঙ্গলবার ৭ অক্টোবর ২০২৫ - ১০:২৯
হাওজায়ে ইলমিয়ার শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার সময়ের দাবি

বিশিষ্ট মারজায়ে তাকলিদ ও আলেমে দ্বীন আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি ইসলামি হাওজাগুলোর শিক্ষাব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি—বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এবং ইসলামি জ্ঞানচর্চা ও দাওয়াতি কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে হাওজার শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি নিজের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসকদের এক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন— “সফলতার তিনটি মৌলিক উপাদান হলো আন্তরিকতা, শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিক পরিশ্রম। ধর্মীয় শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ লাভ করতে হলে এ তিনটি গুণই অপরিহার্য।”

আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজি ইমাম হাসান আসকারি (আ.)-এর একটি হাদীস উদ্ধৃত করে বলেন—

“আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং ভাইদের প্রতি সদাচরণ—এই দুটি গুণই নৈতিকতা ও প্রজ্ঞার মূলভিত্তি।”

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আহ্বান জানান, যেন তারা অধ্যবসায় ও দৃঢ়তার সঙ্গে জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করে, আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সব কাজে প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে রাখে এবং শিক্ষকদের ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি সর্বদা সম্মান প্রদর্শন করে।

ইতিহাসের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন— “এক হাজার বছর আগে শায়খ তূসী কঠোর বিরোধিতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও নাজাফ হাওজায়ে ইলমিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ইসলামি শিক্ষার এ দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহ্য তাঁর ঈমান, অধ্যবসায় ও ত্যাগের ফল।”

নিজের গবেষণা ও রচনাকর্মের প্রসঙ্গে আয়াতুল্লাহ মাকারেম উল্লেখ করেন যে, তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে প্রখ্যাত ফারসি তাফসির ‘তাফসিরে নমূনা’ রচনা করেছেন—যা আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা প্রদান করে এবং পরে এটি আরবি, উর্দু, তুর্কি, ইংরেজি ও হাউসাসহ একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

এছাড়াও, তিনি ‘নাহজুল বালাগা’ ও ‘সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া’-এর ওপর ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থ রচনার কথাও উল্লেখ করেন।

তিনি আরও জানান যে, এখনো তিনি একাডেমিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়— সপ্তাহে তিন দিন হাওজায় পাঠদান করেন এবং বিখ্যাত হাদীসগ্রন্থ ‘বিহারুল আনওয়ার’-এর ছিয়ানব্বইতম খণ্ড পর্যন্ত সংশোধন ও সম্পাদনার কাজ তত্ত্বাবধান করছেন।

বক্তৃতার সমাপ্তিতে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপদেশ দেন— “বিশ্বাস, আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জ্ঞান ও সংস্কৃতির ঘাটতি পূরণ করো। আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগাও, তবে ঈমান ও নৈতিকতার ভিত্তি যেন কখনো দুর্বল না হয়।”

শেষে তিনি সবাইকে নামাজের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন— “নামাজ ভুলে যেও না। আমি সর্বদা আলেম ও শিক্ষার্থীদের সফলতার জন্য দোয়া করি—তোমরাও আমার জন্য দোয়া করবে।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha