শুক্রবার ১০ অক্টোবর ২০২৫ - ১১:০২
খুনীর তলোয়ার ধার দিও না

মরহুম আল্লামা তাকী মিজবাহ ইয়াযদি (রহ.) বলেন, মুমিনদের অন্তরে পাপপ্রবৃত্তি ও অনৈতিকতার প্রতি শত্রুতা থাকা জরুরি; এই অন্তর্গত বিরোধিতা না থাকলে জিহাদ, সামাজিক প্রতিরোধ ও অর্থনৈতিক বয়কট–যেমন ধর্মীয় কর্তব্য পালন করা সম্ভাব্য হবে না। যারা অন্তরে দখলদার ও অত্যাচারী শক্তিকে শত্রু মনে করে না, তারা সহজেই তাদের পণ্য কিনে তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী করে—এটাই “ইহুদিবাদী খুনির তলোয়ার ধার” করার সমতুল্য।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: মরহুম আল্লামা তাকী মিজবাহ ইয়াযদি (রহ.)  তাঁর ভাষণে বলেছেন যে, “মুমিন ব্যক্তির অন্তরে অবশ্যই একটি স্পষ্ট ও সজীব বৈরিতা — অর্থাৎ অনৈতিকতা, অপরাধ ও অত্যাচারকারীর প্রতি শত্রুতা — থাকতে হবে। এটি কেবল আবেগঘটিত অনুভূতি নয়; বরং এটি ধার্মিক সমরাস্ত্রের অংশ, যা ব্যক্তিকে জিহাদ, প্রতিরোধ ও অন্যান্য ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে দৃঢ় করে।

তিনি দৃষ্টান্তস্বরূপ বলেন—যদি আমাদের অন্তরে এই ধরনের শত্রুতা না থাকে, তখন:
• আমরা শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই (যেমন সশস্ত্র জিহাদ) পিছিয়ে থাকব না, বরং দৈনন্দিন ধর্মীয় কর্তব্য ও সামাজিক প্রতিরোধ–এও সফলতা পেতে পারব না।
• বিশেষত অর্থনৈতিক জিহাদ বা বয়কট–এ অনুগত থাকা কঠিন হয়ে পড়ে; কারণ, অন্তরে কোনো মানবিক বা নৈতিক বিরোধ না থাকলে মানুষ সহজেই শত্রুর পণ্য ক্রয় করে তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী করে।

আল্লামা মিজবাহ ইয়াযদি (রহ.) আরও উল্লেখ করেন যে, “আল্লাহ‌ বা ধর্মের আদর্শের তুলনায় যদি মানুষের অন্তরে জোরালো নৈতিক বিরোধ হিসেবে অপরাধী ও অত্যাচারকারীর প্রতি ক্ষোভ না থাকে, সে মানুষ অন্যত্রও দৃঢ়তা বজায় রাখতে পারবে না। ফলে আত্মত্যাগ, সততা ও সংগ্রাম—এই তিনটি প্রধান গুণনৈপুণ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।“

বক্তার ভাষ্যটি সংক্ষিপ্তভাবে এমন—যে ব্যক্তি অন্তরে “সাইয়োনিস্ট” বা অন্য কোনো দমনকারী-অত্যাচারী গোষ্ঠীকে শত্রু মনে করে না, সে খোলাখুলি তাদের পণ্য ক্রয় করে তাদের অর্থনৈতিক শক্তি বাড়িয়ে দেবে। এটিই বাস্তবে “তলোয়ার ধার করা”—অর্থাৎ শত্রুকে শক্তিশালী করে তুলা। তাই মুমিনদের উচিত অন্তরে এই শত্রুতা বজায় রাখা, যাতে তারা জিহাদী ও প্রতিরোধী নীতি মেনে চলতে পারে।

কেন অন্তর্গত বিরোধিতা জরুরি?
আল্লামা মেসবাহ যে “শত্রুতা”–এর কথা বলছেন, সেটি কেবল ব্যক্তিগত অপছন্দ বা ঘৃণা নয়। এটি একটি নৈতিক ও আদর্শগত প্রতিরোধব্যবস্থা — যা মানুষকে:
• অন্যায় ও অত্যাচারকে স্বীকার না করে প্রতিরোধ গড়তে উদ্বুদ্ধ করে;
• মাত্রাতিরিক্ত সাম্যবাদী বা নীরব সহমর্মীতার পথে না নিয়ে যায়;
• অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক ক্ষেত্রগুলোতে ধারাবাহিকতা ও সততা রক্ষা করে (যেমন শত্রুদের পণ্য বয়কট করা);
• ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নিজস্ব পরিচয় রক্ষা করতে সহায়তা করে।

এটি কেবল ‘ঘৃণা’-র ওপর ভিত্তি করে নয়; বরং একটি নৈতিক প্রতিশ্রুতি — যে অন্যায়-অপকর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো হবে, এবং কোনোভাবে তাদের সহায়তা করা হবে না।

সতর্কতা ও নৈতিক সীমারেখা
বক্তা যে “শত্রুতা”–এর কথা বলছেন, তা কখনোই ব্যক্তি-নির্যাতন, কেফায়ত, নৃশংসতা বা অমানবিকতার প্ররোচকতা হিসেবে বোঝানো হয়নি। বরং এটি একটি নৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ–চেতনাই: অন্যায়কারী ও অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সজাগ থাকা এবং তাদের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সুবিধা জোগানো থেকে বিরত থাকা। বক্তা মূলত নৈতিক সচেতনতা ও সততার আহ্বান জানাচ্ছেন, যাতে ধর্মীয় যুদ্ধ বা সামাজিক সংগ্রামে অনুগত্য বজায় থাকে।

প্রাসঙ্গিক মন্তব্য ও প্রভাব
আল্লামা মিসবাহের এই বিবৃতি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ যখন কোনো জাতি বা সম্প্রদায় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে প্রলুব্ধ হয়ে যায়। তাঁর আহ্বান নজর দেয় যে কেবল ধর্মীয় উক্তি পর্যাপ্ত নয়; চর্চা ও প্রতিজ্ঞাও জরুরি।
অর্থনৈতিক জিহাদ বা বয়কটের ব্যাপারে ব্যক্তির অন্তর্গত মনোভাবই দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর ফল বয়ে আনে—এবং তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha