সোমবার ২০ অক্টোবর ২০২৫ - ১১:৫৫
আল্লাহর কঠিন পরীক্ষায় আমাদের করণীয় কী?

আল্লাহর কঠিন পরীক্ষায় আমাদের করণীয় কী? মিডিয়া মিহির : জীবনের প্রতিটি ধাপে আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করেন—কখনো সহজভাবে, কখনো কঠিন পরিস্থিতিতে। মরহুম আল্লামা মিসবাহ ইয়াজদি তাঁর এক নৈতিক শিক্ষার আসরে এই প্রশ্নের গভীর ব্যাখ্যা দিয়েছেন: কঠিন সময় আসবেই, কিন্তু সেই সময় আমাদের করণীয় কী? কীভাবে একজন মুমিন আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে? এই আলোচনায় তিনি কোরআনের আয়াত, ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা এবং আত্মিক প্রস্তুতির দিকগুলো তুলে ধরেছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আল্লাহর নিয়মই হলো পরীক্ষা নেওয়া। প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ আরও জটিল হয়ে উঠবে, তাই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে কঠিনতর পরীক্ষার জন্য। এই পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব কী?

সমাজের পরিবর্তিত অবস্থা ব্যক্তিগত দায়িত্ব তৈরি করে। কারণ সমাজ বলতে আলাদা কোনো সত্তা নেই—এটি ব্যক্তিদের সমষ্টি। তাই সমাজের প্রতিটি পরীক্ষা আসলে ব্যক্তিরই পরীক্ষা।

মানুষের জ্ঞান, বিশ্বাস, সামাজিক অবস্থান ও সুযোগ-সুবিধা ভিন্ন হওয়ায় প্রত্যেকের দায়িত্বও আলাদা। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা সংশোধন করতে হবে এবং শক্তির জায়গাগুলো আরও দৃঢ় করতে হবে।

কোরআন আমাদের শেখায়, এমন সময় আসবে যখন এমনকি নবীগণও হতাশ হয়ে পড়বেন। যেমন সূরা ইউসুফে বলা হয়েছে:
حَتَّی إِذَا اسْتَیْأَسَ الرُّسُلُ وَظَنُّواْ أَنَّهُمْ قَدْ کُذِبُواْ
যখন নবীগণ হতাশ হয়ে পড়েন এবং মানুষ মনে করে তাদের প্রতিশ্রুতি মিথ্যা ছিল…” (ইউসুফ, ১১০)

আরেক আয়াতে বলা হয়েছে:
أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُواْ الْجَنَّةَ وَلَمَّا یَأْتِکُم مَّثَلُ الَّذِینَ خَلَوْاْ مِن قَبْلِکُم مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاء وَالضَّرَّاء وَزُلْزِلُواْ حَتَّی یَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِینَ آمَنُواْ مَعَهُ مَتَی نَصْرُ اللّهِ
তোমরা কি মনে করো শুধু ঈমান আনলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? তোমাদের আগেও যারা ছিল, তারা দুঃখ-কষ্টে আক্রান্ত হয়েছিল, এমনকি তারা কেঁপে উঠেছিল, আর নবী ও তাঁর সঙ্গীরা বলেছিল: ‘আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে?’” (বাকারা, ২১৪)

এই আয়াত আমাদের জানায়, ঈমানের দাবি যথেষ্ট নয়—পরীক্ষা আসবে, কষ্ট আসবে, এমনকি এমন সময়ও আসবে যখন আমরা বলবো: “আল্লাহর সাহায্য কবে?” আর তখনই আল্লাহ বলবেন: أَلا إِنَّ نَصْرَ اللّهِ قَرِیبٌ

জেনে রাখো, আল্লাহর সাহায্য খুবই কাছেই।” (বাকারা, ২১৪)

আমাদেরও এমন সময় আসবে, যখন সব আশা ভেঙে যাবে, নিজের শক্তি, অর্থ, অভিজ্ঞতা—সবকিছু ব্যর্থ মনে হবে। তখনই আল্লাহ বলেন:
مَتَی نَصْرُ اللّهِ؟
আল্লাহর সাহায্য খুবই কাছেই।

যারা শুরু থেকেই আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুতে ভরসা না করে, তাদের জন্য সবসময়ই এই সাহায্য প্রস্তুত থাকে। আমাদের সমস্যার মূল কারণ হলো—আমাদের বিশ্বাস, জ্ঞান ও আল্লাহর উপর নির্ভরতায় দুর্বলতা।

আমরা মুখে বলি, রিজিক আল্লাহ দেন, কিন্তু মনে করি ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমাতে হবে! তাহলে আল্লাহর উপর ভরসা কোথায়?

আমাদের উচিত এমনভাবে জীবনযাপন করা, যেন আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুতে ভরসা না থাকে। অবশ্যই আমাদের চেষ্টা করতে হবে, কাজ করতে হবে, কিন্তু মনে রাখতে হবে—আল্লাহর সাহায্য তখনই আসে যখন আমরা সবকিছু থেকে নিরাশ হয়ে শুধুই তাঁর দিকে ফিরে যাই।

আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা—সফলতার মূল চাবিকাঠি
আমাদের সমস্যার মূল কারণ হলো—আমরা বিশ্বাস, জ্ঞান এবং আল্লাহর উপর নির্ভরতায় দুর্বল। মুখে বলি, “রিজিক আল্লাহ দেন”, কিন্তু মনে করি, “ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমাতে হবে!” তাহলে আল্লাহর উপর ভরসা কোথায়?

আমাদের উচিত এমনভাবে জীবনযাপন করা, যেন কোনো অবস্থাতেই আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুতে ভরসা না থাকে। অবশ্যই আমাদের চেষ্টা করতে হবে, কাজ করতে হবে, কারণ আল্লাহ আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু সেই চেষ্টার মাঝেও মনে রাখতে হবে—আসল সাহায্য আসে আল্লাহর পক্ষ থেকেই।

কোরআন বলছে, যখন মুমিনরা সব আশা হারিয়ে ফেলে, তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের পাঠান তাদের সাহস ও শান্তি দেওয়ার জন্য। وَمَا جَعَلَهُ اللّهُ إِلاَّ بُشْرَی لَکُمْ وَلِتَطْمَئِنَّ قُلُوبُکُم

আল্লাহ এগুলোকে তোমাদের জন্য সুসংবাদ এবং হৃদয়ের প্রশান্তির জন্য পাঠিয়েছেন।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১২৬) কিন্তু ভুল করে ভাবা যাবে না যে ফেরেশতারা বিজয় এনে দেয়। বরং কোরআন স্পষ্টভাবে বলে:
وَمَا النَّصْرُ إِلاَّ مِنْ عِندِ اللّهِ الْعَزِیزِ الْحَکِیمِ

বিজয় তো শুধুই আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান।” (আলে ইমরান, ১২৬)

এই শিক্ষা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখাই প্রকৃত বিজয়ের পথ। যখন আমরা সবকিছু থেকে নিরাশ হয়ে শুধুই আল্লাহর দিকে ফিরে যাই, তখনই তাঁর সাহায্য আসে।

সূত্র: মরহুম আল্লামা মিসবাহ ইয়াজদিরের বক্তব্য, ২২ /১২/১৩৯০

সংকলন ও অনুবাদ: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন ড. ফারুক হুসাইন 

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha