হাওজা নিউজ এজেন্সি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালক আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফি ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তিতে সেবাপ্রদান ব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন: ছাত্রদের প্রতি সেবা প্রদান হলো হাওযার সকল মৌলিক দায়িত্ব ও সমাজের সভ্যতাগত পরিবর্তনে এর ভূমিকার ভিত্তি।
এই বক্তব্য তিনি কুম শহরের “মাদ্রাসায়ে মাসুমিয়্যা”-তে আয়োজিত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও স্নাতকবিষয়ক বিভাগীয় ও প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের সমাবেশে প্রদান করেন। তিনি ফাতেমিয়্যা দিবস উপলক্ষে শোক প্রকাশ করেন ও সম্মেলন আয়োজনকারীদের বিশেষত ছাত্রবিষয়ক সহকারী বিভাগকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি আরও বলেন: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন কনাওয়াতির এই পদে উপস্থিতি তাঁর ব্যক্তিগত জ্ঞান, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও হাওজার বাস্তবতাবোধের কারণে অত্যন্ত মূল্যবান।
আয়াতুল্লাহ আরাফি তাঁর বক্তব্য দুটি মূল বিষয়ের ওপর উপস্থাপন করেন:
প্রথম বিষয়: ইসলামে সেবাপ্রদান ব্যবস্থা
ইসলামে “সেবা” ধারণা ও প্রয়োজন পূরণ
আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন, ইসলামে সেবাপ্রদান একটি পূর্ণাঙ্গ ও যৌক্তিক ব্যবস্থা।
সেবা বলতে বোঝায়—অন্যের প্রয়োজন পূরণ ও ব্যক্তি বা সমাজের বিভিন্ন স্তরে চাহিদা মেটানো।
হাদিসে এই ধারণাটি “قضاء حاجتالمؤمن” (মুমিনের প্রয়োজন পূরণ) বা “قضاء حاجت الخلق” (সৃষ্টির প্রয়োজন পূরণ) ইত্যাদি শব্দে এসেছে।
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন: একজন মুমিনের প্রয়োজন পূরণ করা এক হাজার গ্রহণযোগ্য হজের চেয়েও শ্রেষ্ঠ; এক হাজার বান্দা মুক্ত করার চেয়েও উত্তম, এমনকি এক হাজার ঘোড়া আল্লাহর পথে দান করার চেয়েও উত্তম।
(مشکاة الأنوار فی غرر الأخبار، খণ্ড ১, পৃ. ১৪৩)
ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পরিষদের সদস্য আরও বলেন: আরবি ভাষায় “খেদমত” (সেবা) শব্দের অর্থই হলো “মানুষের প্রয়োজন মেটানো”। যেহেতু প্রয়োজন বা চাহিদার ধরন ও স্তর বিভিন্ন, তাই সেবারও বহু রূপ ও মাত্রা রয়েছে।
ইমাম কাজিম (আ.) বলেন: আল্লাহর কিছু বান্দা আছে, যারা মানুষের প্রয়োজন মেটাতে সচেষ্ট থাকে; এরা কিয়ামতের দিনে নিরাপদ থাকবে।
(আল-কাফি, খণ্ড ২, পৃ. ১৯৭)
প্রয়োজনের ধরন: ব্যক্তিগত ও সামাজিক
আয়াতুল্লাহ আরাফি ব্যাখ্যা করেন: মানুষের কিছু প্রয়োজন ব্যক্তিগত ও অন্তর্মুখী, আবার কিছু প্রয়োজন সামাজিক প্রকৃতির। সমাজও একপ্রকার জীবন্ত সত্তা—এরও বাস্তব প্রয়োজন রয়েছে, যা পূরণই সুস্থ সামাজিক জীবনের চিহ্ন।
প্রয়োজন পূরণের তিন ধাপ
তিনি বলেন, প্রয়োজন পূরণের প্রক্রিয়ার তিনটি স্তর রয়েছে:
১. প্রয়োজন চেনা
২. তা অনুভব করা
৩. তা পূরণের অনুরোধ করা
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন: অনেক সময় মানুষ প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সচেতন নয়—যেমন অজ্ঞান রোগী চিকিৎসার প্রয়োজন বোঝে না, কিন্তু তার চিকিৎসা করাও সেবা।
উচ্চতর স্তর হলো, যখন কেউ নিজ প্রয়োজন অনুভব করে ও তা না থাকায় কষ্ট পায়; এই পর্যায়ে সেবা মানে শুধু প্রয়োজন পূরণ নয়, বরং দুঃখ লাঘব ও আনন্দ সৃষ্টি করা।
এই দৃষ্টিতে প্রয়োজন তিন প্রকার:
১. বাস্তব প্রয়োজন (ثبوتی): সচেতনতার আগে বিদ্যমান
২. সচেতন প্রয়োজন (احساسی): বুঝে অনুভব করা প্রয়োজন
৩. প্রকাশিত প্রয়োজন (بیانی): অনুরোধ বা দাবির মাধ্যমে প্রকাশিত
সর্বোচ্চ প্রয়োজন: আল্লাহর প্রতি প্রয়োজন
কুম হাওজার ফিকহ ও উসুলের অধ্যাপক বলেন: আধুনিক মনোবিজ্ঞানে প্রয়োজনের স্তরবিন্যাস তত্ত্ব ইসলামী চিন্তার সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও, ইসলাম মনে করে—
সকল প্রয়োজনের শীর্ষে রয়েছে আল্লাহর প্রতি প্রয়োজন।
যেমন পবিত্র কুরআনের সূরা ফাতির (৩৫:১৫)-এ বলা হয়েছে: হে মানুষ, তোমরা সবাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী; আর আল্লাহই স্বয়ং পরম ধনী ও প্রশংসাযোগ্য।
আয়াতুল্লাহ আরাফি জোর দিয়ে বলেন: ইসলামী যুক্তি অনুযায়ী, আল্লাহর প্রতি প্রয়োজনই সকল প্রয়োজনের মূল, কারণ আল্লাহর অনুগ্রহই মানব অস্তিত্ব ও তার পূর্ণতার উৎস।
আপনার কমেন্ট