সোমবার ২৭ অক্টোবর ২০২৫ - ১১:৫২
জাগ্রত হৃদয়ের পথ: মুরাকাবা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অনুশীলন

জাগ্রত হৃদয় ও সত্য জ্ঞান অর্জনের পথ কখনো সহজ নয়। প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের মনকে শয়তানের ফিসফিসানি ও নফসের প্রলোভন থেকে রক্ষা করা জরুরি। মুরাকাবা বা আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একজন সত্যপথের পথিক নিজেকে সতর্ক রেখে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মন ও নফসকে পরিশুদ্ধ রাখে। আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলি এই সচেতন আত্মনিয়ন্ত্রণকে জাগ্রত হৃদয়বানদের বিশেষ চিহ্ন বলে উল্লেখ করেছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলি এক আলোচনায় “মুরাকাবা” বা আত্মনিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন,

শয়তান সর্বদা মানুষের অন্তরে গাফিলতার মুহূর্তগুলো বাড়াতে এবং একটির সঙ্গে আরেকটি যুক্ত করতে চেষ্টা করে, যাতে মানুষ ক্রমে গভীরতর গাফিলতায় নিমজ্জিত হয়। ফলে একজন সত্যপথের পথিক (সালেক), যে আল্লাহর নৈকট্য ও উচ্চ মর্যাদার লক্ষ্যে যাত্রা করতে চায়, তার জন্য অপরিহার্য যে সে সর্বদা নিজের অবস্থার প্রতি সতর্ক থাকবে—কোনো অবস্থাতেই যেন সে সরলপথ (সিরাতুল মুস্তাকিম) থেকে বিচ্যুত না হয় এবং শয়তানের প্রবেশের কোনো পথ উন্মুক্ত না রাখে।

অতএব, সে যেন সদা আল্লাহর স্মরণে (ذکر الله)— (তাঁর সৌন্দর্য ও মহিমার গুণাবলী, প্রদত্ত নিয়ামতসমূহ, মৃত্যুর কথা, কবর, কিয়ামত, জান্নাত, জাহান্নাম এবং আল্লাহর বিচারের ময়দানের স্মরণে) নিমগ্ন থাকে। এতে করে সে (সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ) ভুলে যাবে না এবং যদি কখনো সামান্য হোঁচটও খায়, তবুও সেটা নতুন কোনো পাপে রূপ নিবে না।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন:
الَّذِینَ یَذْکُرُونَ اللَّهَ قِیَامًا وَقُعُودًا وَعَلَیٰ جُنُوبِهِمْ
“তারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে—সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯১)

এই সচেতন স্মরণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণই হলো “মুরাকাবা”, যাকে মহান আলেম আল্লামা তাবাতাবায়ী (রহ.) “সৌভাগ্যের বীজ” বলে অভিহিত করেছেন।

আধ্যাত্মিক বাণী: “নীরবতা, ক্ষুধা, রাত্রিজাগরণ ও অবিরাম জিকির— অসম্পূর্ণ মানুষকেও সম্পূর্ণ করে তোলে।” (কুল্লিয়াতে কাসেম আনওয়ার, অংশ: মুকাত্তা‘আত, নং ১৮)

একজন সালেকের দিনযাপন যেন পরীক্ষার কক্ষের তত্ত্বাবধায়কের মতো— যেমন পর্যবেক্ষক পরীক্ষার্থীদের অনিয়ম রোধে সর্বদা নজর রাখে, তেমনি একজন আত্মসন্ধানী মুমিন নিজের নফসের ওপর সদা দৃষ্টি রাখে। সে প্রতিটি কাজ ও বাক্য উচ্চারণের আগে চিন্তা করে দেখে— এটি কি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ? যদি না হয়, সে তা ত্যাগ করে দেয়। সে নিজের উপর এমন কঠোর নজর রাখে যে, কোনো কাজ বা কথা যেন পূর্বপরীক্ষা ও আত্মবিশ্লেষণ ছাড়া তার থেকে প্রকাশ না পায়।

কারণ, জাগ্রততা ও সত্য জ্ঞান কেবল মুরাকাবা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের ফল। এবং যে ব্যক্তি তার— হৃদয়কে গাফিলতি থেকে, নফসকে কামনা-বাসনা থেকে, জ্ঞানকে অজ্ঞতা থেকে, কর্মকে অবিবেচনা ও অচেতনতা থেকে রক্ষা করতে পারে, সে-ই প্রকৃতপক্ষে ‘বিদারদিলান’—জাগ্রত হৃদয়বানদের দলে অন্তর্ভুক্ত হয়।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha