রবিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৫ - ১০:১৬
আল্লাহ কি হিজাবের বিধান পালনে বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছেন?

ইসলামে হিজাব নিছক ঐতিহ্য নয়; এটি আল্লাহর নির্ধারিত স্পষ্ট ফরয। অনেক শরয়ী বিধানের মতো হিজাবের সব হিকমত বিস্তারিতভাবে বর্ণিত না হলেও, আল্লাহর প্রজ্ঞা ও সর্বজ্ঞতার প্রতি বিশ্বাস রেখে তা পালন করাই মুমিনের কর্তব্য। তাই এর ফরজিয়ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই; বোঝাপড়া বাড়ানোর জন্য হিকমত আলোচনা করা যেতে পারে, কিন্তু পালন অবশ্যই অপরিহার্য।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: মহান আল্লাহ ইসলামী শরয়ী বিধিবিধান সমূহের অন্তর্নিহিত হিকমত, দর্শন, কারণ ও হেতু কি সবসময় বর্ণনা করেছেন যাতে আমরা সবাই ঐ হিকমত, দর্শন, কারণ ও হেতুসমূহ জেনে শরয়ী বিধিবিধান সমূহ পালন করতে উদ্বুদ্ধ হই!? অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা বর্ণনা করা হয়নি বরং যেহেতু বিধিবিধান সমূহের অন্তর্নিহিত হিকমত, প্রজ্ঞা, দর্শন, কারণ ও হেতু (যেমন: ফরয-ওয়াজিব, মুস্তাহাবসমূহের মাসলাহাত, কল্যাণ, উপকার ও লাভ এবং নিষিদ্ধ ও হারামসমূহের মাফসাদাহ, ক্ষতি, অপকার ও অকল্যাণ) সম্পর্কে মহান আল্লাহ উত্তম ভাবে ও পূর্ণাঙ্গ রূপে জ্ঞাত সেহেতু শরিয়তে (পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহয়) এগুলো বলা ও উল্লেখ করা না হলেও আমাদের কাছ থেকে ঐ সব বিধি-বিধান পালন করতে, মানতে ও আনুগত্য করতে বলা হয়েছে এই যুক্তিতে যে মহান আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সবচেয়ে জ্ঞানী এবং সকল বিষয় ও বিধি-বিধানের অন্তর্নিহিত হিকমত, প্রজ্ঞা, দর্শন, কারণ, হেতু,ফলাফল (যেমন: ওয়াজিব-ফরয ও মুস্তাহাবের কল্যাণ, উপকার ও লাভ এবং হারাম কাজ-কর্ম ও বিষয়ের চরম অকল্যাণ,ক্ষতি ও অপকার) সম্পর্কে সবচেয়ে উত্তম ও পূর্ণাঙ্গ রূপে জ্ঞাত।

তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে শরিয়তে বিধি-বিধানসমূহের অন্তর্নিহিত হিকমত, প্রজ্ঞা অর্থাৎ ফরয-ওয়াজিব ও মুস্তাহাব কাজ-কর্ম ও বিষয়ের কল্যাণ ও উপকার এবং হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ ও বিষয়ের অকল্যাণ, ক্ষতি ও অপকার উল্লেখ না করায় কোনো আপত্তি, বিপত্তি ও অসুবিধা নেই। আমাদের অর্থাৎ বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) মুকাল্লাফদের (ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে চলা ও পালন যাদের ওপর ফরয ও ওয়াজিব তাদের) উচিত কায়মনোবাক্যে এবং উচ্চবাচ্য না করে মহান আল্লাহর সকল বিধি-বিধান পালন (ফরয ও ওয়াজিব আদায় এবং হারাম নিষিদ্ধ কাজ-কর্ম ও বিষয় থেকে বিরত থাকা ও তা ত্যাগ) করা।

অতএব হিজাবের অন্তর্নিহিত হিকমত, প্রজ্ঞা, কল্যাণ, লাভ ও উপকারের তালাশ ও অনুসন্ধান ফরয ও ওয়াজিব করা হয়নি আমাদের ওপর বরং তা কায়মনোবাক্যে ও উচ্চবাচ্য না করে পালন একান্ত কাম্য ও উচিত এবং বাধ্যতামূলক।

আর হিজাব জরূরী (অতিপ্রয়োজনীয় অপরিহার্য) শরয়ী ও দ্বীনি ফরয ওয়াজিবসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর এই ফরয ও ওয়াজিব পালন না করলে পাপ হবে এবং যে পালন করে না তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না সে তওবা করে। ঠিক তেমনি মদ নিষিদ্ধ ও হারাম। আর যে কেউই মদ পান করবে তাকে অবশ্যই শরিয়তে উল্লেখিত সুনির্দিষ্ট শাস্তি (হদ্দ) ভোগ করতে হবে।
আর মশহুর সর্বজনীন ফিক্বহী নিয়ম, কায়দা (সূত্র) ও বিধান হচ্ছে: কতিপয় হারাম যেগুলোর সুনির্দিষ্ট হদ্দ (অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট শাস্তি ও দণ্ড বিধান শরিয়তে উল্লেখিত হয়েছে সেগুলো ব্যতীত যে কোনো শরয়ী হারাম (নিষিদ্ধ কাজ) আঞ্জাম দিলে এবং যে কোনো ফরয ওয়াজিব তরক (ত্যাগ) করলে শাস্তি (তা'যীর) পেতে হবে ঐ হারাম কাজ সম্পাদনকারীকে এবং উক্ত ফরয-ওয়াজিব কাজ ও বিষয় তরক (ত্যাগ ও বর্জন)কারীকে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে শাস্তি অবশ্যই শরয়ী হদ্দ বা শরিয়তের সুনির্দিষ্ট দণ্ড সমূহের চেয়ে অবশ্যই কম হতে হবে এবং তা অর্থাৎ শাস্তির (তাযীর) ধরন ও পরিমাণ নির্ধারণের এখতিয়ার হাকিম-ই শারয়ের দৃষ্টি, রায় ও অভিমতের ওপর অর্পণ ও ন্যস্ত করা হয়েছে।

হিজাব দ্বীনি শরয়ী জরূরী ফরয-ওয়াজিব যা সকল বালেগা মুসলিম নারীকে অবশ্যই পালন করতে হবে।এ ক্ষেত্রে যে বালেগা  নারী ইচ্ছা করে হিজাব পালন করবে না অর্থাৎ হিজাব তরক (ত্যাগ ও বর্জন) করবে তাকে শরয়ী তা'যীর (শাস্তি) ভোগ করতে হবে (সম্মানিত ফকীহদের মশহূর অভিমত অনুযায়ী)।

আর ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে বাধ্যতামূলক যা ছাড়া যায় না অর্থাৎ তরক (ত্যাগ ও বর্জন) করা যায় না এবং হারাম হচ্ছে বাধ্যতামূলক ভাবে ত্যাজ্য ও বর্জনীয় (অবশ্যই ত্যাগ ও বর্জন করতে হবে)। তাই "মহান আল্লাহ কি হিজাব রেওয়াত ও পালনের ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছেন কি?"— এ ধরনের প্রশ্ন আসলেই অবান্তর এবং এ ধরনের প্রশ্নের কোনো অবকাশই নেই।

আমরা (মুকাল্লাফীন: বালেগ ব্যক্তিগণ) আদিষ্ট হইনি ধর্মীয় শরয়ী বিধানসমূহের অন্তর্নিহিত হিকমত (প্রজ্ঞা), দর্শন, কারণ ও হেতু তালাশ ও অন্বেষণের।

তবে হিজাবের অন্তর্নিহিত হিকমত, প্রজ্ঞা, দর্শন, কারণ, হেতু, কল্যাণ, লাভ ও উপকার এবং হিজাব না করার অপকার, ক্ষতি ও অকল্যাণ বর্ণনা করতে কোনো আপত্তি নেই এবং তা বর্তমান কালে বহু মুসলিম নারীর কাছে হিজাবের গ্রহণযোগ্যতার কারণ হবে ইনশাআল্লাহ।

লিখেছেন: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha