হাওজা নিউজ এজেন্সি: ব্রাসেলস সফরের সময় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংস্থার উপকমিশনার জেনারেল নাতালি বুকলি বলেন, গাজায় বাধাহীন মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করতে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ সমগ্র বিশ্বের ইসরায়েল সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করা জরুরি।
বুকলির ভাষায়, ইউএনআরডব্লিউএ–র কাছে বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য, তাঁবু ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী রয়েছে যা চাইলে ৬,০০০ ট্রাক ভর্তি করে পাঠানো সম্ভব।
তিনি বলেন, “শীত ঘনিয়ে আসছে এবং দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হচ্ছে। তাই এই সহায়তাগুলোকে কোনো বিলম্ব ছাড়াই গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া এখন অত্যন্ত জরুরি। আমাদের সরবরাহ থাকা অবস্থায় পুরো গাজা–জনগণের জন্য প্রায় তিন মাসের খাদ্য সহায়তা দেওয়া সম্ভব—কিন্তু সেগুলো জর্ডান ও মিসরে আটকে আছে। অন্যান্য জাতিসংঘ সংস্থার ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি, কারণ ইসরায়েল এখনো নানা বিধিনিষেধ ও সীমাবদ্ধতা বজায় রেখেছে।”
তার হিসাব অনুযায়ী, গাজায় প্রতিদিন যে ৫০০–৬০০ ট্রাক ঢোকার প্রয়োজন, সেখানে “সর্বোচ্চ অর্ধেক, তারও কম” প্রবেশ করতে পারছে।
বুকলি বলেন, দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানবিক আইন—বিশেষত চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন—মানছে না। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (ICJ) পরামর্শমূলক মতামতেও বলা হয়েছে, দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের জনগণের “দৈনন্দিন জীবনের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা” নিশ্চিত করা ইসরায়েলের দায়িত্ব।
গত ২২ অক্টোবর দেওয়া সেই আইসিজে–র রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলের দায়িত্ব ইউএনআরডব্লিউএ–র সঙ্গে সহযোগিতা করা। আদালত জানায়, ইসরায়েলের করা অভিযোগ—যে ইউএনআরডব্লিউএ নিরপেক্ষতা হারিয়েছে বা এর বহু কর্মী হামাস–সংশ্লিষ্ট—এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কেবল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে নয়জন কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
বুকলি বলেন, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তিনি এখন পর্যন্ত এমন কোনো ইঙ্গিত পাননি যে তারা ইউএনআরডব্লিউএ–র প্রতি ‘যোগাযোগ না করার নীতি’ পরিবর্তন করতে যাচ্ছে।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউএনআরডব্লিউএ মূলত সেই ৭ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে সহায়তার জন্য গঠিত হয়েছিল, যারা ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। অস্থায়ী সংস্থা হিসেবে শুরু হলেও আজ প্রায় আট দশক পরও এটি দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে ৫.৯ মিলিয়ন নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি শরণার্থীর স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সামাজিক সহায়তা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানকারী অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান।
বুকলি বলেন, “এখন ইউএনআরডব্লিউএ ধ্বংস হওয়ার সময় নয়। আমরা অদম্যভাবে কাজ করছি, কারণ আমাদের বিকল্প কেউ নেই।”
আপনার কমেন্ট