হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, নভেম্বর মাস লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ বেশ কয়েকটি প্রতিরোধ-অক্ষভুক্ত দেশে শহিদদের মর্যাদা স্মরণ করার মাস হিসেবে পালিত হয়। এ মাসে শহিদদের পথকে জীবিত রাখা এবং তাঁদের উইল ও উপদেশ পাঠ করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
হিজবুল্লাহর শহিদ কমান্ডার ফুয়াদ শাকের শহাদতের মর্যাদা সম্পর্কে বলেছিলেন: কেউ শহাদের মর্যাদা অর্জন করতে পারে না, যতক্ষণ না সে ভালোবাসা ও অনুরাগের মাধ্যমে নিজের মধ্যে শহিদ হওয়ার যোগ্যতা তৈরি করে। কেউ শহিদ হয় না, যদি না সে শহাদের পথে পদচারণা করে এবং এ উদ্দেশ্যেই জীবন যাপন করে। আকস্মিক মৃত্যু বা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু শহাদত নয়; কারণ শহাদত এমন এক মর্যাদা, যা কেবল তাদেরই দেওয়া হয়, যারা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অনুরাগে এক বিশেষ স্তরে পৌঁছায় এবং যারা সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্ট—রাসুল আকরাম (সা.) ও তাঁর আহলুলবাইত—এর প্রতি সর্বাধিক অনুগত।
ইয়েমেনি গণমাধ্যমকর্মী উম্মাতুল-মালেক আল-খাশিব তাঁর নোটে প্রতিরোধ অক্ষের বিজয় ও ইসলামী উম্মাহর সম্মান-স্বাধীনতায় শহিদদের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ব্যাখ্যা করেছেন।
নোটটির অনূদিত পাঠ্য নিচে তুলে ধরা হলো:
শহিদদের জীবন কেমন?
ইয়েমেন ও লেবাননে শহিদ দিবস উপলক্ষে আমাদের উচিত কিছুক্ষণ থেমে এ বিশেষ উপলক্ষ্যের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব নিয়ে ভাবনা করা। শহিদদের কাফেলা এখনো দান করে চলেছে, আর আল্লাহর পথে জিহাদের দ্বার এখনো সবার জন্য উন্মুক্ত, যারা এ পথে প্রবেশ করতে চায়। এই কাফেলা চলমান; সত্য ও মিথ্যার লড়াই কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। মৃত্যু সব জীবেরই অবশ্যম্ভাবী সমাপ্তি।
কিন্তু এমন মানুষ আছেন যাদের স্মৃতি অমর, যাদের কাজ চিরস্থায়ী, এবং যারা প্রকৃত অর্থে কখনোই মারা যান না—যদিও এ দুনিয়ায় তাঁদের স্মৃতি ম্লান হয়ে যেতে পারে। তারা জীবিত—কিন্তু সাধারণ জীবন নয়; বরং স্থায়ী ও অমর এক জীবন, যেখানে মৃত্যু নেই, এবং যেখানে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা-সৃষ্টিকর্তা তাঁদের রিজিক দেন—তিনি যিনি বিশ্বপালক ও আরাধ্য।
তাঁদের চিরস্থায়ী জীবন কুরআনের অক্ষয় আয়াত দ্বারা নিশ্চিত: আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদের মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের নিকট রিযিকপ্রাপ্ত।
তাই ধন্য তারা, যাদের আল্লাহ সৌভাগ্যবান শহিদ হিসেবে গ্রহণ করেন; ধন্য তারা, যারা আল্লাহর অতিথি হন, তাঁর পথে জিহাদ করেন, তাঁর অনুগ্রহে ধন্য হন, এবং নিজেদেরকে মহাদিনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেন।
শহিদরা তাঁদের প্রথম বরকত এই দুনিয়াতেই দেখতে পান ও অনুভব করেন। অনেক শহিদ শহিদ হওয়ার আগেই শহিদের মতো জীবন যাপন করেন। আপনি তাঁদের আচরণে দেখবেন—তারা সাধারণ মানুষের মতো নন, বরং যেন ফেরেশতার মতো। তাঁদের মুখে আলো, কাজে আন্তরিকতা, দোয়ায় আত্মনিবেদন; তারা অত্যন্ত সতর্ক যে কাউকে কোনো কষ্ট না দেয়। কখনো তাঁদের মুখমণ্ডল থেকে এমন এক উজ্জ্বল আলো বিচ্ছুরিত হতে দেখা যায়—যেন তা তাদের ভেতর থেকেই উদ্ভাসিত।
কিছু শহিদ এমনভাবে কথা বলেন, যেন তাঁদের আত্মা ইতিমধ্যেই আকাশে আরোহণ করেছে—যদিও তারা এখনও এই পৃথিবীতেই রয়েছেন। এখানে আমরা ইসলামী উম্মার শহিদ হাজী কাসেম সোলাইমানি-র কথা স্মরণ করি, যিনি চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় আল্লাহর পথে সংগ্রাম করেছেন এবং নানা ফ্রন্টে আল্লাহর শত্রুদের শাস্তি দিয়েছেন। অবশেষে তিনি আল্লাহর শত্রু—কুফরের জালিম শক্তি আমেরিকা ও ইসরায়েল—এর হাতে প্রিয় শহিদ হিসেবে তাঁর প্রভুর সান্নিধ্যে পৌঁছেন। তাঁর বিখ্যাত উক্তিটি আবার মনে পড়ে: শহিদের শর্ত হলো শহিদের মতো জীবন যাপন করা।
তাহলে কীভাবে একজন মানুষ, জীবিত অবস্থায় থেকেই, শহিদের মতো জীবন যাপন করতে পারে?
আপনার কমেন্ট