হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী,
মুস্তাক আহমদ
'আল্লাহ' ও তাঁর হাবিব হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর প্রতি সত্যিকারের প্রেম থাকলে— নবীকন্যা ফাতিমা (আঃ)-এর উপরে আক্রমণ সম্ভব?
সংক্ষেপে উত্তর হলো: 'না' — আল্লাহর প্রতি, নবীর প্রতি, কোরআনের প্রতি বা দ্বীন ইসলামের প্রতি সত্যিকারের ঈমান, প্রেম, মহব্বত, আনুগত্য থাকলে কখনোই সম্ভব নয় নবীকন্যার উপরে আক্রমনের।
ইতিহাস সাক্ষী, যেখানে হৃদয়ে রাজ্য রাজনীতির গোদী ও ক্ষমতার লোভে ‘সত্যিকারের নবীপ্রেম’ নিভে যায়, সেখানে অত্যাচার জন্ম নেয়—যদিও পোষাকের আড়ালে মুখের নকল ভাষায় শত আকিদাহ, আমল, বাহ্যিক ইসলাম রয়ে যায়।
নবীপ্রেম মানেই ফাতিমা (আঃ)-প্রেমঃ
এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রসুলুল্লাহ (সঃ) বহুবার বলেছেন— "ফাতিমা আমার অংশ। যে তাকে কষ্ট দিলো, সে আমাকেই কষ্ট দিলো।"
(সহিহ হাদিস)
এমন একজনকে কষ্ট দেওয়া মানে— নবীকে কষ্ট দেওয়া, আর নবীকে কষ্ট দেওয়া মানে আল্লাহকে কষ্ট দেওয়া। যাদের অন্তরে আল্লাহ ও নবীর প্রতি সত্যিকার ভক্তি থাকে—
তারা কখনো এমন জঘন্য কাজ করতে পারে না।
যেখানে রাজনীতি ঈমানকে ছাপিয়ে যায়— সেখানে অত্যাচার অন্ধকার ঘনিয়ে আসেঃ
মদিনার সেই সময়টিতে—বহু লোক ছিল যারা বাহ্যিকভাবে মুসলমান ছিল, কিন্তু অন্তরে ছিল: ক্ষমতার লোভ, রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ,
উপজাতীয় আধিপত্যবোধ, - এজন্য তাদের অন্তরে নবী ও নবীর আহলে বাইতের বিরুদ্ধে তৈরী করেছিল 'ধর্মীয়-হিংসা, জনগনের মধ্যে তৈরী করেছিল অজ্ঞতা ও আহলে বাইত সম্পর্কে আক্রোশ বা ঈর্ষার বাতাবরন৷
আর এদিকে অল্প কিছু লোকের মনে ছিল নবীপ্রেম৷ তারা সবসময় ফাতিমা (আঃ)-এর পাশে ছিলেন। কিন্তু যারা রাজনৈতিক ক্ষমতাকে নবীপ্রেমের উপরে রেখেছিল— তারাই পরে সেই অমানবিক ঘটনার অংশীদার হয়।
সত্যিকারের নবীপ্রেমের মানদন্ডঃ
উম্মাতের পরীক্ষার জন্য নবী নিজে তাঁর আহলে বাইতের সঙ্গে কিভাবে আচরণ করা হবে, এটি মানদন্ড হিসাবে রেখে গেলেন৷ রসুল (সঃ) তাঁর উম্মাহর পরীক্ষার জন্য একটি মানদণ্ড রেখে গেলেন— "আমার পরিবারের প্রতি তোমরা কেমন আচরণ করবে?"
মদিনার বহু লোক এই পরীক্ষায় ব্যর্থ হলো—
যা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে।
যদি তাদের অন্তরে নবীপ্রেম সত্য হতো—
তাহলে এমন প্রশ্নই ওঠে না, যা নিচে উল্লেখ করলামঃ
(১) ফাতিমা (আঃ)-এর ঘর ঘেরাও কেন হলো?
(২) তাঁর দরজায় কেন আক্রমন করা হলো?
(৩) কেন তাঁকে আঘাত করা হলো?
(৪) কেন ফাতিমার গর্ভের সন্তান মুহসিন'কে শহীদ করা হলো?
(৫) কেন অকারনে তাঁর ঘর ভাঙচুর করা হলো এবং আগুন জ্বালানো হলো?
(৬) কেন তাঁদের উপরে শয়তানী রাজনীতির জোরপূর্বক বায়আত চাপিয়ে দেওয়া হলো??
— এসব কিছু কিভাবে সম্ভব হলো?
ভালোবাসা থাকলে মানুষ সুরক্ষা দেয়—আঘাত করে নাঃ
মদিনা শহরটি তো নবীর শহর।
তাঁরা তো বলত—“আমরা নবীকে ভালোবাসি।”
তাহলে প্রশ্ন হলো—
যার বিয়ের খুশিতে নবীর চক্ষু অশ্রু ঝরেছিল,
যার প্রতি নবীর বিশেষ সম্মান ছিল,
যাকে নবী “আমার হৃদয়ের ফুল” বলেছেন—
তাঁর প্রতি এমন আচরণ কিভাবে হলো?
উত্তর একটাই: মুখের প্রেম, প্রেম নয়।
সত্যিকারের প্রেম কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
ফাতিমা (আঃ)-এর প্রতি হামলা—নবীর ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতাঃ
আল্লাহর রসুল (সঃ) আগেই বলেছিলেন—
“আমার পরে তোমরা পরীক্ষার সম্মুখীন হবে।”
এই পরীক্ষা ছিল—
তোমরা আহলে বাইতের সাথে কেমন আচরণ করো?
আজ ইতিহাস সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে।
যাদের প্রেম সত্য ছিল—তারা কখনোই এই ঘৃন্য কর্মে অংশ নেন নিঃ
মদিনার অনেক সাহাবী ছিলেন যারা ফাতিমা (আঃ)-এর প্রতি দুঃখ, অন্যায় সইতে পারেননি—
তাঁরা হলেন হযরত সালমান ফারসি (রাঃ), হযরত মিকদাদ (রাঃ), হযরত আবু জার(রাঃ), হযফত আম্মার বিন ইয়াসির(রাঃ), হযরত খুজাইমা (রাঃ), হযরত উম্মে আয়মান (রাঃ), হযরত বিলাল (রাঃ) প্রভৃতি৷ উনারা ছিলেন সত্যিকারের নবীপ্রেমিক।
তারা কখনোই ফাতিমা (আঃ)-এর উপর অত্যাচার সমর্থন করেননি, বরং প্রতিবাদ করেছেন৷
অত্যাচার প্রমাণ করে—নবীপ্রেম মুখে ছিল, অন্তরে ছিল নাঃ
তাই প্রমাণ দাঁড়ায়— মদিনার যারা ফাতিমা (আঃ)-কে কষ্ট দিয়েছিল, তাদের অন্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি প্রকৃত প্রেম ছিল না, ছিল না কোরআনের প্রতি ভক্তি বা শ্রদ্ধা৷ যদি প্রেম থাকতো— নবীর মাত্র ৩/৬ মাস পরেই তাঁর কন্যার ঘরে হামলা হতো না।
আপনার প্রশ্ন ইতিহাসের গভীরতম সত্যকে স্পর্শ করে—
(১) প্রেম থাকলে রক্ষা হয়,
(২) প্রেম না থাকলে অত্যাচার জন্ম নেয়।”
নবীর কন্যা ফাতিমা (আঃ)-এর উপরে আক্রমণ—
প্রমাণ করেছে:
সেই সময় মদিনার একটি বড় অংশের মানুষ
নবীর প্রতি সত্যিকারের আনুগত্য হারিয়ে ফেলেছিল।
আপনার কমেন্ট