হাওজা নিউজ এজেন্সি: এক সাক্ষাৎকারে বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি সেমিনারির অধ্যাপিকা যাহরা তোরাবিয়ান জানান, আল-মিযান হলো আল্লামা তাবাতাবায়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, গভীরতর ও স্থায়ী অবদান। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, ১৯৫৪ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত—মোট ১৭ বছরে এই মহাকাব্যিক তাফসির রচিত হয়েছে।
জনাবা তোরাবিয়ান বলেন, আল-মিযান-এ ব্যবহৃত তাফসির পদ্ধতি—যা “কোরআনের ব্যাখ্যা কোরআনের মাধ্যমেই”—নামে পরিচিত—আজকের সময়ে এই গ্রন্থকে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। তার ভাষায়: “আল্লামা তাবাতাবায়ি বিশ্বাস করতেন যে কোরআন নিজেই আত্মব্যাখ্যাকারী; পরিষ্কার ও স্পষ্ট আয়াতগুলোই অস্পষ্ট আয়াতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা।”
তিনি উল্লেখ করেন, তাফসিরটি রচনার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্যাখ্যা–প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিগত মতামত ও অনুমানের প্রভাব কমানো এবং পশ্চিমা বস্তুবাদী চিন্তাধারার সঙ্গে কোরআনের মিল খোঁজার প্রবণতার মোকাবিলা করা।
তিনি আরও বলেন, ইসলামি গবেষণায় আল-মিযান–এর মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত। তিনি শহীদ দার্শনিক মুরতাজা মুতাহহারির উক্তি স্মরণ করেন: “এ গ্রন্থের প্রতিটি অংশ গভীর চিন্তায় রচিত… আমি বিশ্বাস করি এর বহু অংশই ঈশ্বরপ্রদত্ত অনুপ্রেরণার ফল। ইসলামি কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে আল-মিযান-এ তার সমাধানের সূত্র না পাওয়ার ঘটনা আমার কাছে অত্যন্ত বিরল।”
তিনি আরও জানান, আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমুলী আল-মিযান–এর গুরুত্বকে তুলনা করেছেন বিশিষ্ট ফিকহ গ্রন্থ “জাওয়াহির আল-কালাম” এর সঙ্গে। তার মতে, আল-মিযান পূর্ববর্তী গবেষকদের ফাঁক–ফোঁকর পূরণ করেছে এবং ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য একটি শক্ত ভিত তৈরি করেছে।
সামাজিক দৃষ্টিকোণ: আল-মিযানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
গবেষক তোরাবিয়ান বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে আল-মিযান–এর অন্যতম মূল শক্তি হলো এর সমাজমুখী দৃষ্টিভঙ্গি। তার ভাষায়: “অনেক আগের তাফসিরকাররা যেখানে ব্যক্তিভিত্তিক ব্যাখ্যায় সীমাবদ্ধ থাকতেন, আল্লামা তাবাতাবাই কোরআনকে দেখেছেন সমাজ ও মানবসমষ্টির দৃষ্টিকোণ থেকে। পুরো গ্রন্থজুড়ে এই সামাজিক আঙ্গিক স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।”
তিনি বলেন, আল্লামা তাবাতাবায়ির দৃষ্টিতে একজন প্রকৃত ইসলামি আলেম হতে হলে হতে হবে–
•যুক্তিবাদী,
•সমসাময়িক সমস্যাবলির সম্পর্কে সচেতন,
•মুসলিম সমাজের সার্বিক সংকট সম্পর্কে গভীরভাবে অবগত,
•এবং আদর্শিক সন্দেহ–আপত্তির জবাব দিতে সক্ষম।
জনাবা তোরাবিয়ানের মতে, আল-মিযান বিস্তৃত পরিসরের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করে—যেমন: শাসনব্যবস্থা, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক স্বাধীনতা, মুসলিম বিশ্বের স্থবিরতার কারণ, নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার, সামাজিক সহযোগিতা ইত্যাদি।
তিনি আরও বলেন, আল্লামা তাবাতাবায়ির দৃষ্টিতে ধর্ম শুধু ব্যক্তিগত সাধনার বিষয় নয়। “তার বিশ্বাস ছিল—ধর্মের শিকড় যতই আধ্যাত্মিক জগতে প্রোথিত হোক না কেন, এটি সমাজ গঠন ও সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”
সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে তিনি বলেন, আল-মিযান-এর ব্যাখ্যাপদ্ধতি নিশ্চিত করে যে কোরআন—সমস্ত যুগে, সর্বাবস্থায় মানবতার জন্য চিরন্তন দিকনির্দেশনার উৎস হয়ে থাকবে।
আপনার কমেন্ট