রবিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৫ - ১৮:৪১
কেন ইসলামী বিপ্লবের নেতা এত দৃঢ়ভাবে জনগণের ঐক্য রক্ষার উপর জোর দেন?

যখনই মুসলিম উম্মাহ একটি হৃদয়, একটি আত্মা ও একটি কাতারে সারিবদ্ধ হয়েছে— তখনই পাহাড়সম শত্রুসেনাও ধুলিসাৎ হয়েছে। যখনই বিভেদের বিষবৃক্ষ মাথা তুলেছে— তখনই পরাজয়ের ছায়া নেমে এসেছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: কুরআনুল কারীম মুসলমানদের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বিষয়ে এই শাশ্বত সত্যকে বারংবার উচ্চারণ করেছেন, যেন প্রতিটি যুগের মুসলিমের কানে এই আহ্বান গেঁথে যায়: “ঐক্যই তোমাদের শক্তি, ঐক্যই তোমাদের বিজয়ের চাবিকাঠি।

আল্লাহর রজ্জুকে সবাই মিলে আঁকড়ে ধরো
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মনির সাদাত তাবাতাবায়ী (হাফি.) বলেছেন, “কুরআনের সবচেয়ে উজ্জ্বল আয়াতগুলোর একটি যেন মুসলিম উম্মাহর বুকে আগুনের অক্ষরে লেখা:
‎وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا “তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং বিভক্ত হয়ো না।” [সূরা আলে ইমরান: ১০৩]

এই একটি আয়াতই বিজয়ের সমস্ত রহস্য উন্মোচন করে দেয়। ‘হাবলুল্লাহ’—আল্লাহর রজ্জু—হলো তাঁর কুরআন, তাঁর রাসূলের (সা.) সুন্নাহ, তাঁর আহলিয়ার বেলায়াত এবং ভালোবাসার বন্ধন যা সব মুসলিমকে এক সারিতে দাঁড় করায়। যখন আমরা এই রজ্জুকে একসাথে ধরি, তখন কোনো শত্রু আমাদের সারি ভাঙতে পারে না। আর যখন হাত ছেড়ে দিই, তখনই শয়তানের ফাঁদে পা দিই।

আনুগত্য ও ঐক্য—বিজয়ের দুটি ডানা
আরেকটি আয়াত যেন আগুনের মতো জ্বলে:
‎وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ “তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না, করলে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রতাপ চলে যাবে।” [সূরা আল-আনফাল: ৪৬]

এই আয়াত বদর থেকে খন্দক, হুনাইন থেকে তাবুক—সব যুদ্ধেই সাক্ষ্য দিয়েছে। যেদিন মুসলিমরা এক কাতারে দাঁড়িয়েছে, সেদিন ফেরেশতারাও তাদের সাহায্যে নেমে এসেছে। যেদিন বিচ্ছিন্নতার বিষ ঢুকেছে, সেদিনই পরাজয়ের কালো ছায়া নেমেছে।

ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব— আল্লাহর রহমতের চৌকাঠ
আল্লাহ তা‘আলা আরও ঘোষণা করেন: ‎وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا “স্মরণ করো আল্লাহর সেই অনুগ্রহ, যখন তোমরা পরস্পরের শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের অন্তরসমূহের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন করলেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেলে।” [সূরা আলে ইমরান: ১০৩]

এই ভ্রাতৃত্বই মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় শক্তি। যখন আমরা একে অপরের জন্য দাঁড়াই, তখন আল্লাহ আমাদের জন্য দাঁড়ান। যখন আমরা একে অপরকে ছিঁড়ে ফেলি, তখন শত্রুরা হাসে।

হে মুসলিম উম্মাহ! আজ যখন দুশমনরা আমাদের চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়েছে, যখন ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে আমাদের বিভক্ত করতে চায়, তখন কুরআনের এই আয়াতগুলো আমাদের বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিক: আমরা এক। আমাদের কুরআন এক। আমাদের কিবলা এক। আমাদের নবী এক। আমাদের আল্লাহ এক।

যতক্ষণ এই ঐক্য অটুট থাকবে, কোনো শক্তিই আমাদের পরাজিত করতে পারবে না। কারণ আল্লাহর ওয়াদা সত্য: ‎إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন যারা তাঁর পথে এমন সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে যেন তারা সীসা গলানো দুর্ভেদ্য প্রাচীর।” [সূরা আস-সাফ: ৪]

হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরসমূহকে একত্রিত করো, আমাদের সারিকে অটুট রাখো এবং আমাদেরকে তোমার দ্বীনের বিজয়ের সৈনিক বানাও। আমিন, ইয়া রব্বাল ‘আলামিন।

অনুবাদ: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন ড. ফারুক হুসাইন

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha