বৃহস্পতিবার ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৬:৫৪
হুসাইনিয়া ইমাম খোমেনি (রহ.)-তে তিন ঘণ্টাব্যাপী হযরত যাহরা (সা.)-এর মিলাদ উদযাপন, উপস্থিত ছিলেন ইসলামি বিপ্লবী নেতা

ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্র আজ হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর মুবারক মিলাদ উপলক্ষে আলো, আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে ভরে উঠেছিল। এই উপলক্ষে হুসাইনিয়া ইমাম খোমেনি (রহ.)-তেও ইসলামি বিপ্লবী নেতা এবং হাজারো আহলে বাইত (আ.)–প্রেমীর উপস্থিতিতে উৎসবমুখর মদীহা-পাঠ, কবিতা আবৃত্তি ও সাইয়্যিদাতুন নিসা আল-আলামীনের (সা. আ.) মুনাক্বিবখানি অনুষ্ঠিত হয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা এই অনুষ্ঠানে হযরত আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই (দীর্ঘায়ূ হউন) হযরত সিদ্দিকা তাহেরা (সা. আ.)–এর জন্মোৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন: ইরানের জনগণ তাদের জাতীয় প্রতিরোধের মাধ্যমে শত্রুর দীর্ঘদিনের চেষ্টা—এই জাতির ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র—ব্যর্থ করে দিয়েছে। আজও যখন শত্রু ‘মস্তিষ্ক, হৃদয় এবং বিশ্বাস’-এর ওপর আক্রমণ করার জন্য প্রচারণা ও গণমাধ্যমের যুদ্ধ চালাচ্ছে, তখন আমাদের প্রতিরক্ষা ও আক্রমণ—উভয় দিক থেকেই সঠিক কৌশল গ্রহণ করা আবশ্যক। দেশের নানা সমস্যা ও ঘাটতি সত্ত্বেও প্রিয় ইরান এগিয়ে চলছে।

তিনি ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর জন্মদিনের সাথে হযরত যাহরা (সা.)-এর মিলাদ মেলাপকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন যে, দুই জগতের এই মহামহিম নারীর গুণাবলি মানুষের বোধশক্তির ঊর্ধ্বে। তবুও আমাদের ফাতিমিয় পথে চলতে হবে এবং তাঁর অনুপম আদর্শ—ধর্মনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, সত্যপ্রচারণার জিহাদ, দাম্পত্য জীবন, সন্তান প্রতিপালনসহ সর্বক্ষেত্রে—অনুসরণ করতে হবে।

আয়াতুল্লাহ খামেনেই কবিতা-পাঠকে অত্যন্ত প্রভাবশালী এক শিল্প হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এই ক্ষেত্রকে আরও গভীরতা, গবেষণা, মূল্যায়ন ও উন্নতির দিকে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে আজকের মদীহা-সংস্কৃতি অতীতের তুলনায় অনেক এগিয়ে গেছে এবং এটি প্রতিরোধের সাহিত্যচর্চার অন্যতম শক্ত ঘাঁটি। কারণ, যে কোনো ধারণাকে টিকে থাকতে হলে তার উপযুক্ত সাহিত্য থাকতে হয়, আর আজকের কবিতা ও আঞ্জুমানগুলো প্রতিরোধের সাহিত্যকে সুসংগঠিত, বিস্তৃত ও শক্তিশালী করছে।

তিনি “জাতীয় প্রতিরোধ”-কে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে:
“জুলুম-পেষণকারী শক্তিগুলোর সামরিক, অর্থনৈতিক, মিডিয়া, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক যেকোনো চাপের বিরুদ্ধে জাতির ধৈর্য ও দৃঢ় অবস্থান।”

পশ্চিমা গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক-সামরিক মহলের অপপ্রচারকে তিনি শত্রুর প্রচারণা-চাপের অংশ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন: বিশ্বব্যাপী নির্যাতনকারী শক্তিগুলোর চাপের লক্ষ্য কখনো ভূখণ্ড দখল—যেমন আজ যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় করছে; কখনো ভূগর্ভস্থ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ; আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জীবনধারা পরিবর্তন এবং পরিচয় মুছে ফেলা।

তিনি বলেন, গত একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বশক্তিগুলো ইরানের ধর্মীয়-ঐতিহাসিক পরিচয় বদলানোর চেষ্টা চালিয়ে গেলেও ইসলামি বিপ্লব সেই সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতেও ইরানের জনগণ শত্রুর কঠোর চাপের মুখে অবিচল থেকে তাদের ষড়যন্ত্র ভণ্ডুল করেছে।

তিনি বলেন, আজ প্রতিরোধের ধারণা শুধু ইরানেই নয়, বরং অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে—এটাই বাস্তবতা। “শত্রু ইরানের ওপর যে চাপ প্রয়োগ করেছে, তা অন্য কোনো জাতির ওপর করলে সে জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।”

আয়াতুল্লাহ খামেনেই জোর দিয়ে বলেন, শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখা এবং প্রতিরোধের আদর্শ গভীরভাবে বিস্তার লাভের পেছনে জায়নাবি মদীহা-পাঠের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন: আজ আমরা একটি বৃহৎ প্রচারযুদ্ধের কেন্দ্রে অবস্থান করছি; কারণ শত্রু বুঝে গেছে—এই দেশকে সামরিক চাপ দিয়ে পরাভূত করা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন: কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেখায়—মানুষকে আতঙ্কে রাখতে। কিন্তু তারা সফল হবে না ইনশাআল্লাহ।

তিনি শত্রুর লক্ষ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন—ইসলামি বিপ্লব ও ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর স্মৃতি ও আদর্শকে মুছে ফেলাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। এই বৃহৎ জোটের কেন্দ্রে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তার পাশে কিছু ইউরোপীয় দেশ এবং আরও আছে কিছু বিশ্বাসঘাতক ও সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি—যারা বিদেশে শত্রুর সেবায় লিপ্ত।

তিনি বলেন, "শত্রুর লক্ষ্য ও কৌশল” বোঝা জরুরি। প্রচারযুদ্ধেও আমাদের নিজেদের প্রস্তুতি নিতে হবে, এবং তারা যে জায়গায় আঘাত করতে চায়—সেই ইসলামি, শী‘আ এবং বিপ্লবী শিক্ষা—সেগুলো শক্তিশালী করতে হবে।

আয়াতুল্লাহ খামেনেই বলেন, পশ্চিমা মিডিয়া-যুদ্ধ কঠিন হলেও সম্পূর্ণই মোকাবিলা করা সম্ভব।
তিনি মদীহা-পাঠকদের উদ্দেশে বলেন, আঞ্জুমানগুলোকে এমন কেন্দ্রে পরিণত করুন, যেখানে বিপ্লবের মূল্যবোধে দৃঢ় থাকার শিক্ষাদান হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম যেহেতু বিপুল আগ্রহ নিয়ে হাইয়াতে আসছে—তাদেরকে শত্রুর ধূর্ত ও শক্তিশালী প্রচারণা থেকে রক্ষা করতে হবে।


তিনি কাসিদা-পাঠকদের উদ্দেশে আরও কয়েকটি উপদেশ দেন:
— ধর্মীয় ও সংগ্রামী শিক্ষা তুলে ধরা
— শত্রুর দুর্বলতাকে উন্মোচন করা
— তাদের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার মোকাবিলা করা
— কোরআনের শিক্ষা ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার সব ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা করা

তিনি বলেন: একটি সুন্দর ও অর্থবহ নোহা কখনো কখনো বহু বক্তৃতার চেয়েও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। মদীহাদের খেয়াল রাখতে হবে—ট্যাগুত আমলের গান বা সংস্কৃতি যেন কখনো তাদের আসরে প্রবেশ না করে।

শেষে, খুজেস্তান অঞ্চলের ধূলিঝড় সমস্যার প্রসঙ্গে এক মদীহার বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন: এটি বহু সমস্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। দেশে নানা সমস্যা ও ঘাটতি আছে। কিন্তু ইরানের জনগণ দিন দিন তাদের ইমান, আন্তরিকতা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা দিয়ে দেশকে সম্মান, শক্তি ও মর্যাদা দিচ্ছে। আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, চেষ্টা করছে এবং অগ্রসর হচ্ছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আহলে বাইত (আ.)-এর এগারোজন মদীহা কবিতা আবৃত্তি ও মদীহা-পাঠে অংশ নেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha