হাওজা নিউজ এজেন্সি: অনুষ্ঠানের বিশেষ বক্তা হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন জাফর ত্বাবসী আহলে বাইতের (আ.) শান, মাকাম ও ফযিলত বর্ণনা করেন! তিনি শিয়া মাজহাবের পাশাপাশি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের হাদীসগ্রন্থসমূহও আহলে বাইতের (আ.) ফযিলতে সমৃদ্ধ বলে উল্লেখ করেন!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দৃষ্টিতে হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর মর্যাদা
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন জাফর ত্বাবসী হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর অফুরন্ত মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন এবং ইসলামী জ্ঞানের মহাবিশ্বে তাঁর অনন্য স্থানের প্রতি ইঙ্গিত করে জোর দিয়ে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দৃষ্টিতে হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর ব্যক্তিত্ব একটি অতুলনীয় ও একক স্থান অধিকার করে আছে।
তিনি নির্ভরযোগ্য হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে রাসূল (সা.) কর্তৃক হযরত ফাতেমা (সা.আ.)-এর প্রতি প্রদত্ত সম্মান ও মর্যাদার বহু উদাহরণ স্মরণ করিয়ে দিয়ে আরও বলেন, মহানবী (সা.) শুধু পিতা হিসেবেই নন, বরং আল্লাহর রাসূল হিসেবেও হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-কে বিশেষ মর্যাদা দিতেন। আর এই আচরণ ইসলামের ইতিহাসে এই মহীয়সী নারীর আধ্যাত্মিক মর্যাদা, শিক্ষণীয় ভূমিকা ও ঐশী অবস্থানকেই নির্দেশ করে।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দাওয়াতের জন্য আহলে সুন্নাতের উৎস জানা অপরিহার্য
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন জাফর ত্বাবসী আহলে সুন্নাতের উৎস সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে এই সচেতনতাকে ‘অ-ইরানি তালাবাদের জন্য দাওয়াতী সাফল্যের অপরিহার্য শর্ত’ বলে উল্লেখ করেন।
বিভিন্ন দেশের বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় ফোরামে দীর্ঘ বছরের শিক্ষাদান, বিতর্ক ও সংশয় নিরসনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওয়াহাবিবাদ ও শিয়া-বিরোধী ধারার একটি বড় অংশের সংশয় আহলে সুন্নাতের উৎস থেকে নির্বাচিত কিংবা ভুল ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। দাওয়াতের ময়দানে কার্যকর উপস্থিতির জন্য তালাবাদের এই উৎসগুলো কেবল জানাই নয়, বরং সেগুলো থেকে সুস্পষ্ট, প্রামাণিক এবং আহলে সুন্নাত শ্রোতাদের জন্য গ্রহণযোগ্য যুক্তি উপস্থাপন করতে সক্ষম হতে হবে।
উস্তাদ ত্বাবসী জোর দিয়ে বলেন, তালাবাদেরকে আহলে সুন্নাতের নির্ভরযোগ্য তাফসীর, যেমন প্রাথমিক যুগের প্রসিদ্ধ তাফসীরসমূহ এবং হাকিম নিশাপুরীর মতো তাদের বড় বড় হাদীসবিদদের কিতাবের সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত হতে হবে। আহলে বাইত (আ.)-এর অনেক মর্যাদা, বিশেষ করে হযরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)-এর মর্যাদা, এইসব উৎসে নথিভুক্ত রয়েছে। এই উৎসগুলোর সঙ্গে পরিচয় ছাড়া আহলে সুন্নাত শ্রোতাদের জন্য দাওয়াত কার্যক্রম অত্যন্ত কঠিন হবে।
তিনি তার বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, হাকিম নিশাপুরী তার ‘আল-মুসতাদরাক’ কিতাবে হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর মর্যাদা ও অবস্থান সম্পর্কে বহুবার অসংখ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং এমনকি যাহাবীর মতো আহলে সুন্নাতের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য আলেমও এই হাদীসগুলোর কয়েকটিকে সহীহ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এর উদাহরণের মধ্যে রয়েছে ‘সাইয়্যেদাতু নিসায়িল আলামীন’ উপাধি, হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর আগমনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ সম্মান প্রদর্শন এবং আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) ও হযরত ফাতেমা (সা.আ.)-এর গৃহে টানা ছয় মাস আয়াতুত তাতহীর (পরিশুদ্ধতার আয়াত) তিলাওয়াতের প্রতিবেদন। এই উদাহরণগুলো প্রমাণ করে যে, আহলে বাইত (আ.)-এর মর্যাদার সবচেয়ে মূল্যবান দলিল-দস্তাবেজগুলো এই আহলে সুন্নাতের উৎসগুলোতেই বিদ্যমান।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কার্যকর দাওয়াতের জন্য আহলে সুন্নাতের উৎসের গুরুত্ব
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ত্বাবসী অনুষ্ঠানে উপস্থিত তালাবাদের উদ্দেশ্যে জোর দিয়ে বলেন, আপনাদের নিজ নিজ দেশে, আপনাদের শ্রোতারা বেশিরভাগই আহলে সুন্নাত। যদি কেবল শিয়া উৎসগুলোর ওপর নির্ভর করেন, তবে দাওয়াতে সফল হবেন না। আপনাদেরকে অবশ্যই তাদের গ্রহণযোগ্য উৎসগুলো ব্যবহার করতে হবে, কারণ সেগুলো ব্যাপকভাবে আহলে বাইত (আ.)-এর মর্যাদা নথিভুক্ত করেছে এবং তা অ-ইরানি তালাবাদের জন্য সর্বোত্তম দাওয়াতী মাধ্যম।
তিনি আরও বলেন, কোম থেকে ফিরে যাওয়ার পর তালাবাদেরকে বিপুল পরিমাণ সংশয়, প্রশ্ন এবং কখনো কখনো বিশ্বাসগত শত্রুতার মুখোমুখি হতে হবে। আর একমাত্র তারাই আহলে বাইত (আ.)-এর মাযহাবের কার্যকর পক্ষাবলম্বন করতে সক্ষম হবেন, যারা জ্ঞান, বিভিন্ন উৎসের সঙ্গে পরিচিতি ও আন্ত-মাযহাবী যুক্তিতে দক্ষতায় সজ্জিত হবেন।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন জাফর ত্বাবসী তার বক্তব্য শেষে আহলে সুন্নাতের উৎস জানাকে একটি অতিরিক্ত দক্ষতা নয়, বরং আহলে বাইত (আ.)-এর দাওয়াতের পথে ‘মৌলিক, অপরিহার্য ও উপেক্ষাযোগ্য নয় এমন একটি নীতি’ বলে পরিচয় দিয়ে তালাবাদের প্রতি কোমে অবস্থানকালীন সময়ে এই যোগ্যতা শক্তিশালীকরণে সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করার আহ্বান জানান।
আপনার কমেন্ট