শনিবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৪:৫২
প্রতিভাবান তরুণ তালাবাদের জন্য গবেষণা ও অনুসন্ধান ফরজে আইনী

হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক বলেন: ফিকহ, কালাম, হাদিস ও ইসলামী বিদ্যার ক্ষেত্রে জ্ঞান ও তত্ত্ব উৎপাদনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যাদের মধ্যে এসব ক্ষেত্রে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক স্তরে পৌঁছানোর প্রতিভা ও সক্ষমতা রয়েছে, তাদের অবশ্যই গবেষণা ও অনুসন্ধানে আত্মনিয়োগ করতে হবে। প্রতিভাবান তরুণ তালাবাদের জন্য এটি একটি ফরজে আইন (ব্যক্তিগতভাবে আবশ্যক কর্তব্য)।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ কুমের মাদরাসা-ই-মাসুমিয়ার সম্মেলন হলে অনুষ্ঠিত আল্লামা হিল্লি (রহ.)-এর ষোড়শ উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফি ইসলামী সমাজের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও বিকাশে গবেষণার গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন: হাওজাভিত্তিক গবেষণাগুলোর বিষয়বস্তু হতে হবে সমন্বিত ও নির্ভুল, যাতে সেগুলো ইসলামী জ্ঞান ও চিন্তার বিকাশে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এসব গবেষণাকে অবশ্যই আন্তরিকতা ও মৌলিকতার সঙ্গে সমাজের বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে পরিচালিত হতে হবে।

হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক আরও বলেন: ব্যবস্থাপক, কর্মসূচি প্রণেতা ও পরিকল্পনাকারীদের—বিশেষত যারা সমাজে বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় বার্তা পৌঁছে দেন—এই গবেষণার গুরুত্ব সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি থাকা জরুরি। এসব লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও অগ্রগতির জন্য গবেষণাক্ষেত্রে মৌলিক ও ব্যবহারিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

ইসলামী ব্যবস্থার লক্ষ্য বাস্তবায়নে গবেষণার গুরুত্ব

হাওজা ইলমিয়ার উচ্চ পরিষদের সদস্য বলেন: সমাজ পরিচালনা ও ইসলামী ব্যবস্থার ওপর প্রভাব বিস্তারে গবেষণা ও অনুসন্ধানের ভূমিকা অত্যন্ত মৌলিক। আমাদের সবাইকে জানতে হবে যে ইসলামী ব্যবস্থার লক্ষ্য অগ্রসর করা এবং বিশুদ্ধ ইসলাম ও দ্বীনি চিন্তাধারা প্রসারে জ্ঞান, বিদ্যা, গবেষণা ও প্রজ্ঞা অপরিহার্য।

কোম হাওজা ইলমিয়ার শিক্ষক পরিষদের সদস্য আরও বলেন: দ্বীনি অঙ্গনে আমাদের কার্যকর উপস্থিতি ও ধর্মীয় গফতমান গড়ে তোলা অবশ্যই বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে হতে হবে। হাওজা ইলমিয়ার সব স্তরে গবেষণাকে অবশ্যই দীনী দায়িত্ব ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

মৌলিক ও প্রয়োগমূলক গবেষণা

আয়াতুল্লাহ আরাফি বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় গফতমান নির্মাণে গবেষণার ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন: গবেষণাই হওয়া উচিত সকল গফতমান নির্মাণ ও ইসলামী ব্যবস্থায় ভূমিকা পালনের ভিত্তি। এটি জ্ঞান ও অনুসন্ধানের ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রিয় তালাবা, তরুণ ও বিশিষ্ট শিক্ষকবৃন্দকে ইসলামী ব্যবস্থা ও ইসলামী বিপ্লবের অগ্রগতির লক্ষ্যে মৌলিক ও প্রয়োগমূলক গবেষণায় প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

তিনি আরও বলেন: হাওজা ইলমিয়ার গবেষকদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ও উৎস থেকে বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় বক্তব্যসমূহ আহরণ করা এবং সেগুলোকে সুসংগঠিত চিন্তাগত ব্যবস্থায় রূপান্তর করা। এ কাজের জন্য আজীবন চেষ্টা ও অধ্যবসায় প্রয়োজন। হাজার হাজার গবেষককে এই পথে অগ্রসর হতে হবে, যাতে আমরা ক্রমাগত ইসলামী ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন ও উন্নত করতে পারি। শেষ পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত—বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় গবেষণার ওপর নির্ভর করে ইসলামী সভ্যতার অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করা।

চিন্তা ও ভাবনার উৎপাদন এবং সভ্যতামূলক কালাম ও তত্ত্ব নির্মাণ

আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন: ধর্মীয় শিক্ষাঙ্গনে বৈজ্ঞানিক ফলাফলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো চিন্তা ও ভাবনার উৎপাদন এবং সভ্যতামূলক কালাম ও তত্ত্ব নির্মাণ। এই প্রক্রিয়াটি গভীর ও কার্যকর গবেষণার ভেতর থেকেই উৎসারিত হতে হবে।
হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক আরও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কথা উল্লেখ করে বলেন: হাওজার বর্ষসেরা গ্রন্থ সম্মেলন ও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক উৎসবে শিক্ষা ও গবেষণামূলক নানাবিধ কার্যক্রমের প্রতিবেদন উপস্থাপিত হয়েছে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি ও মূল্যবান উদ্যোগের প্রমাণ দেয়। তবে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এবং বৈজ্ঞানিক সমাজের প্রয়োজনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এখনো বহু বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের পর্যাপ্ত উত্তর আমাদের কাছে নেই।

প্রয়োজনের জবাব দেওয়ার অপরিহার্যতা

গার্ডিয়ান কাউন্সিলের ফকিহ সদস্য বৈজ্ঞানিক ও গবেষণাগত চাহিদার জবাব দেওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন: আমরা বিপুল সংখ্যক বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন ও প্রয়োজনের মুখোমুখি, যেগুলোর উত্তর দেওয়া আবশ্যক। এসব চাহিদা কেবল তাত্ত্বিক প্রশ্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রেও কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। হাওজা ইলমিয়ার উচিত এমন দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা, যারা বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিভিন্ন অঙ্গনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক ফিকহ, কালাম, হাদিস ও ইসলামী বিদ্যার ক্ষেত্রে জ্ঞান ও তত্ত্ব উৎপাদনের প্রসঙ্গে বলেন: যাদের মধ্যে এসব ক্ষেত্রে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক স্তরে পৌঁছানোর প্রতিভা ও সক্ষমতা রয়েছে, তাদের নিঃসন্দেহে গবেষণা ও অনুসন্ধানে আত্মনিয়োগ করতে হবে। তরুণ তালাবাদের জন্য এটি একটি ফরজে আইন (ব্যক্তিগতভাবে আবশ্যক দায়িত্ব), যা অবশ্যই তাদের কর্মসূচির অংশ হতে হবে। আমাদের পূর্বসূরিরাও যেমন জোর দিয়েছেন—তাদেরকে জ্ঞান ও গবেষণার পথে দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হতে হবে।

সভ্যতামূলক তত্ত্ব উৎপাদনের প্রয়োজন

আয়াতুল্লাহ আরাফি আরও বলেন: সার্বিকভাবে হাওজা ইলমিয়াগুলোকে কেবল জ্ঞান উৎপাদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে সভ্যতামূলক তত্ত্ব নির্মাণ এবং ইসলামী ব্যবস্থাগুলোর গভীর বিশ্লেষণেও মনোযোগী হতে হবে এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে সক্রিয় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় উৎকর্ষের পথে অগ্রসর হওয়ার এই দায়িত্ব তরুণ তালাবাদের কাঁধেই ন্যস্ত।

ইসলামী বিজ্ঞানে তত্ত্বপ্রণয়নের শীর্ষে পৌঁছাক তালাবারা

কোম হাওজা ইলমিয়ার শিক্ষক পরিষদের সদস্য শিক্ষক ও তালাবাদের উদ্দেশে বলেন: প্রিয় ও সম্মানিত তালাবারা—যারা নিজেদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক প্রস্তুতি ও সক্ষমতা অনুভব করেন, তাদের উচিত এটিকে শরয়ি দায়িত্ব ও ফরজে আইন হিসেবে বিবেচনা করা এবং বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা জোরদার করা। এই দায়িত্ব আমাদের তরুণ তালাবাদের কাঁধে—সংযম, দৃঢ়তা ও ধৈর্যের সঙ্গে ইজতিহাদের অঙ্গীকারে অটল থেকে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বপ্রণয়ন ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্ঞান উৎপাদনের পথে অগ্রসর হওয়া।

তিনি সমাজের সমসাময়িক চাহিদা ও বৈশ্বিক পরিবর্তনের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন: আজকের বিশ্বে জ্ঞানকে অতীতের ঐতিহ্যের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। তালাবা ও গবেষকদের নতুন পরিবর্তনের প্রতি দৃষ্টি রেখে মানবসমাজ ও ইসলামী উম্মাহর প্রয়োজনের উপযোগী জ্ঞান উৎপাদনে মনোযোগী হতে হবে। হাওজা ইলমিয়ার উচিত বর্তমান যুগের বৌদ্ধিক ও দার্শনিক চাহিদার জবাব দেওয়া; সেজন্য ইজতিহাদ ও নবচিন্তা অপরিহার্য।

হাওজাভিত্তিক গবেষণা হতে হবে নির্ভুল ও সুদৃঢ়

আয়াতুল্লাহ আরাফি বৈজ্ঞানিক গবেষণার গুরুত্ব এবং হাওযাভিত্তিক অনুসন্ধানে সূক্ষ্মতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন: হাওজার গবেষণাগুলো অবশ্যই নির্ভুল ও সুদৃঢ় হতে হবে। তালাবা ও গবেষকদের উচিত নির্ভরযোগ্য ইজতিহাদি ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎস থেকে উপকৃত হওয়া এবং ভাসা-ভাসা দৃষ্টিভঙ্গি ও ভুল গবেষণা-পদ্ধতি থেকে বিরত থাকা। আমাদের হাতে যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত নয়; কারণ ইসলামী ব্যবস্থা ও ইসলামী বিপ্লবে—বিশেষত ইসলামী চিন্তার ক্ষেত্রে—সবসময় আরও অনুসন্ধান ও উৎসসমূহের পরিপূর্ণতার প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি ইমাম খোমেইনি (রহ.), আল্লামা তাবাতাবায়ী (রহ.), শহীদ মুতাহহারী (রহ.) ও শহীদ সদর (রহ.)-এর মতো মনীষীদের বৈজ্ঞানিক অবস্থানের কথা স্মরণ করে বলেন: এসব মনীষী ইসলামী চিন্তাশীলতার প্রতীক। আমাদের উচিত তাঁদের অর্জন থেকে উপকৃত হওয়া এবং একই সঙ্গে এই পথেই নিজ নিজ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। এই সভ্যতামূলক গফতমানের জন্য প্রয়োজন নির্ভুল ও প্রামাণ্য গবেষণা, যা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য ইজতিহাদি উৎসের ভিত্তিতে এবং উচ্চ মাত্রার সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha