শনিবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ - ০৯:৪৫
হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও মাওদ্দত আত্মিক উৎকর্ষ ও আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের মাধ্যম

ইরানের হাওজায়ে ইলমিয়া সমূহের উচ্চ পরিষদের সচিব আয়াতুল্লাহ মুহাম্মদ মাহদী শাব্‌জেন্দেদার বলেছেন, হযরত ফাতিমা যাহরা (সালামুল্লাহি আলাইহা)-এর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা ও মাওদ্দত মানুষের আত্মিক উৎকর্ষ সাধন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম কার্যকর মাধ্যম।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসফাহান প্রদেশের হাওজায়ে ইলমিয়া ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের নামাজখানায় আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.) ও হযরত বাকিয়্যাতুল্লাহ আল-আজম (আ.ফা.)-এর শুভ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে আহলে বাইত (আ.)-এর ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

কুরআনের বিভিন্ন আয়াত—বিশেষত সূরা কাওসার, আয়াতে তাতহীর ও আয়াতে মাওদ্দতের আলোকে আয়াতুল্লাহ শাব্‌জেন্দেদার হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর মর্যাদাকে ‘সীমাহীন’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর প্রতি যে গভীর সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন, তা এই মহান ব্যক্তিত্বের অতুলনীয় মর্যাদারই প্রমাণ। তিনি আরও বলেন, তাঁর সন্তুষ্টি আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাঁর অসন্তোষ আল্লাহর অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

হযরত সিদ্দিকা তাহেরা (সা.আ.): রিসালাত ও ফেরেশতাদের অবতরণের কেন্দ্রবিন্দু
ইরানের হাওজায়ে ইলমিয়া সমূহের উচ্চ পরিষদের সচিব ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, হযরত সিদ্দিকা তাহেরা (সা.আ.)-এর আত্মিক মর্যাদা এত উচ্চ যে, আল্লাহর নির্দেশে জিবরাইল আমিন (আ.) তাঁর নিকট অবতীর্ণ হতেন। এটি এমন এক অনন্য ফজিলত, যা সরাসরি ওহির সঙ্গে আত্মিক সংযোগের সর্বোচ্চ নিদর্শন।

তিনি আরও বলেন, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা কেবল রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি আনুগত্যের প্রতিদান নয়; বরং তা আত্মিক উন্নতি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বাস্তব পথ। আয়াতে মাওদ্দত, আয়াতে তাতহীর ও আয়াতে মুবাহালাহ এ মহান ব্যক্তিত্বের রিসালাত ও উম্মাহর হিদায়াতে অপরিসীম ভূমিকার সাক্ষ্য বহন করে।

আত্মিক উন্নয়নে আহলে বাইতের (আ.) প্রতি মাওদ্দত ও অনুসরণ
আয়াতুল্লাহ শাব্‌জেন্দেদার আহলে বাইত (আ.)-এর সঙ্গে হৃদয়ের দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, তাঁদের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা ও আনুগত্যের মাধ্যমে মানুষ আত্মিক উৎকর্ষ ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লাভ করতে পারে—তাকওয়া, আত্মসংগ্রাম (মুজাহাদা) এবং আহলে বাইতের (আ.) দিকনির্দেশনা গ্রহণ। এই সম্পর্ক দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনের জন্যই এক অমূল্য নিয়ামত।

তিনি কোম নগরীর প্রখ্যাত আলেম হাজ্ব শাইখ আবুল কাসিম কুম্মির জীবনের একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, হযরত সিদ্দিকা তাহেরা (সা.আ.)-এর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা এবং মানুষের অধিকার (মাজলুমের হক বিনষ্ট করা) থেকে মুক্ত থাকা মানুষকে আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের অধিকারী করে তোলে।

হযরত সিদ্দিকা তাহেরা (সা.আ.)-এর মাওদ্দত: দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের পথনির্দেশ
কোম হাওজায়ে ইলমিয়ার মুদাররিস ও জামে‘আ মুদাররিসিনের সদস্য আয়াতুল্লাহ শাব্‌জেন্দেদার বলেন, প্রত্যেক শিয়া মুসলমানের জন্য দুটি মহান নিয়ামত রয়েছে—হযরত সিদ্দিকা তাহেরা (সা.আ.)-এর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা এবং জুলুম ও অন্যায়ের দায় থেকে মুক্ত থাকা। যাদের অন্তরে এই ভালোবাসা বিদ্যমান এবং যাদের ওপর মানুষের কোনো অধিকার বাকি নেই, তারা আল্লাহর রহমত ও শান্তির বিশেষ মর্যাদা লাভ করবে।

তিনি আরও বলেন, এই ভালোবাসা মানুষকে শুধু আল্লাহর নৈকট্যেই পৌঁছে দেয় না, বরং দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্য ও কল্যাণের পথ সুগম করে। আমাদের সকলের উচিত প্রকৃত অর্থে শরিয়তের খাদেম এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের (আ.) সত্যিকারের অনুসারী হওয়ার চেষ্টা করা।

আত্মিক পথে পরিবার ও ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব
বক্তব্যের শেষাংশে আয়াতুল্লাহ শাব্‌জেন্দেদার পরিবার ও পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আহলে বাইত (আ.)-এর সঙ্গে পরিচয় এবং তাঁদের প্রতি ভালোবাসা আল্লাহ তাআলার এক মহান নিয়ামত। আমাদের পরিবার ও পিতা-মাতাই আমাদের এই পথে দীক্ষিত করেছেন, যা দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্যের এক অমূল্য পুঁজি। তাই আমাদের উচিত এ নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা এবং এই সুযোগকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য যথাযথভাবে কাজে লাগানো।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha