শুক্রবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৪:২৩
জনগণের জীবন–জীবিকা নিয়ে সর্বোচ্চ নেতার গভীর উদ্বেগ / বর্তমানে মূল যুদ্ধক্ষেত্র হলো গণমাধ্য

ইরানের ধর্মীয় নগরী কোমের জুমার নামাজের খতিব ও শহরটিতে সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ মুহাম্মদ সাঈদী বলেছেন, সর্বোচ্চ নেতা জনগণের জীবন–জীবিকা, মুদ্রাস্ফীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে এসব বিষয় সর্বাধিক গুরুত্ব পায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আজ ২৮ অজার ১৪০৪ হিজরি শামসি (১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রি.) কোমের মুসাল্লা-ই কুদসে অনুষ্ঠিত জুমার নামাজের খুতবায় আয়াতুল্লাহ সাঈদী এসব কথা বলেন।

খুতবার শুরুতে তিনি হযরত আলী (আ.)-এর একটি বাণী উদ্ধৃত করে বলেন,

 اتَّقِ اللَّهَ بَعْضَ التُّقَی وَ إِنْ قَلَّ، وَ اجْعَلْ بَیْنَکَ وَ بَیْنَ اللَّهِ سِتْراً وَ إِنْ رَقَّ

“আল্লাহকে ভয় করো, যদিও তা অল্প হয়; আর নিজের ও আল্লাহর মাঝে লজ্জার একটি পর্দা স্থাপন করো, যদিও তা পাতলা হয়।”

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গন হলো প্রচার ও গণমাধ্যম। এ যুদ্ধের লক্ষ্য মানুষের মন ও হৃদয় দখল করা। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সামরিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও গণমাধ্যমগত চাপের মধ্যেও নিজের স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বজায় রেখেছে এবং প্রতিরোধের এই চেতনা অন্যান্য জাতির মাঝেও ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।

কোমের জুমার ইমাম বলেন, গণমাধ্যমের এই যুদ্ধে কেবল প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান যথেষ্ট নয়। শত্রুর কৌশল ও দুর্বলতা চিহ্নিত করে সক্রিয় ও পরিকল্পিত ভূমিকা নিতে হবে। এই যুদ্ধ একটি সর্বজনীন লড়াই, যেখানে প্রতিটি মানুষ একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। নীরব দর্শক হয়ে থাকা মানে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে পড়া।

তিনি সতর্ক করে বলেন, শত্রু আজ ইসলামী মূল্যবোধ, বিপ্লবী আদর্শ, পর্দা ও নারী–পুরুষের শালীনতাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। এ অবস্থায় সমাজের সব স্তরের মানুষ—দায়িত্বশীল ও সাধারণ জনগণ—একযোগে এই আগ্রাসনের মোকাবিলা করবে।

অর্থনীতি দেশের প্রথম অগ্রাধিকার
আয়াতুল্লাহ সাঈদী বলেন, সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয় যে অর্থনীতি বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তিনি অবকাঠামোগত উন্নয়নকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেও জনগণের তাৎক্ষণিক সমস্যা—বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি—কখনো উপেক্ষা করেননি।

রজব মাস ও আত্মশুদ্ধির আহ্বান
রজব মাসের সূচনা উপলক্ষে তিনি বলেন, এই মাস আত্মশুদ্ধি, ইবাদত, দোয়া ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। রজব ও শাবান মাস রমজানের প্রস্তুতির ক্ষেত্র, আর মসজিদে যুবকদের ইতিকাফ এই ধর্মীয় সংস্কৃতির একটি বড় অর্জন।

আহলে বাইতের ইমামদের (আ.) ভূমিকা ও জিহাদে তাবইন
ইমাম বাকির (আ.)-এর জন্মবার্ষিকী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ব আজ তাঁর জ্ঞান ও শিক্ষার তৃষ্ণায় রয়েছে। তিনি ইমামদের জীবনের তিনটি ধাপ তুলে ধরেন—ইসলামকে বিকৃতি থেকে রক্ষা, শিয়াদের জন্য সুস্পষ্ট কাঠামো নির্মাণ এবং শাসনভার গ্রহণের প্রস্তুতি। এসব বিষয় আজকের ‘জিহাদে তাবইন’-এর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।

ইমাম হাদী (আ.)-এর সংগ্রাম
ইমাম হাদী (আ.)-এর শাহাদাত প্রসঙ্গে আয়াতুল্লাহ সাঈদী বলেন, সামারায় কঠোর নজরদারির মধ্যেও তিনি শিয়া যোগাযোগব্যবস্থা সুসংগঠিত করেন এবং ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলার জন্য অনুসারীদের প্রস্তুত করে যান।

বৈশ্বিক প্রসঙ্গ ও দোয়ার আহ্বান
সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতকে আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত উল্লেখ করে তিনি শোকরানা দোয়া ও সালাতুল ইস্তিসকার আহ্বান জানান। পাশাপাশি হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি বলেন, আজ বিশ্ব আবারও আগ্রাসী ও শিশুহত্যাকারী সিয়োনিস্টদের দ্বারা বিপর্যস্ত। খ্রিস্টানদের উচিত মানবতাবিরোধী এই শক্তির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নেওয়া।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha