বুধবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৫:৫৭
অস্ত্র ছাড়বে না হামাস, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে কড়া শর্ত

হামাস স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, প্রতিরোধ আন্দোলন কখনোই নিরস্ত্র হবে না এবং বিদেশি শক্তির কাছে অস্ত্র হস্তান্তরের প্রশ্নই ওঠে না। একই সঙ্গে সংগঠনটি ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে আরও শক্ত, সুস্পষ্ট ও বাধ্যতামূলক নিশ্চয়তা দাবি করেছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: মঙ্গলবার ইয়েমেনের আল-মাসিরাহ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওসামা হামদান বলেন, “প্রতিরোধকে নিরস্ত্র করার জন্য বিদেশি বাহিনীর আগমন আমরা প্রত্যাখ্যান করি। যে অস্ত্র দখলদার শক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে নিতে ব্যর্থ হয়েছে, তা স্বেচ্ছায় সমর্পণের প্রশ্ন নেই।”

চলমান যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে হামদান বলেন, ইসরায়েল বারবার চুক্তি লঙ্ঘন করায় পরবর্তী ধাপে আরও পরিষ্কার ও বিস্তারিত নিশ্চয়তা প্রয়োজন। তাঁর ভাষায়, “গাজা চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে নিশ্চয়তাগুলো আরও স্পষ্ট হতে হবে এবং অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা থাকতে হবে। জায়নিস্ট শত্রু আন্তর্জাতিক চুক্তিও প্রকাশ্যভাবে লঙ্ঘন করে।”

তিনি সতর্ক করেন, গাজায় অবরোধ অব্যাহত থাকা নতুন করে আগ্রাসনের ইঙ্গিত বহন করে। “সীমান্ত পারাপার খুলে না দেওয়া মানে শত্রু আবারও গাজার বিরুদ্ধে হামলায় ফিরতে চায়,” বলেন হামদান। তিনি আরও বলেন, মৌলিক মানবিক প্রয়োজনকে অবরোধের হাতিয়ার বানালে তা প্রতিরোধকে দুর্বল না করে বরং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও বাড়ায়।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক নীতির সমালোচনা করে হামদান বলেন, এসব নীতি পশ্চিম এশিয়ায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বৃহত্তর কৌশলের অংশ। “এই আধিপত্যের ভিত্তি হিসেবে জায়নিস্ট সত্তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিরোধকে নিরস্ত্র করা গেলে পুরো অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সহজ হবে,” বলেন তিনি।

চলমান সহিংসতার মধ্যেও ফিলিস্তিনি জনগণের দৃঢ়তার ওপর আস্থা প্রকাশ করে হামদান বলেন, “প্রতিরোধ অব্যাহত রাখার সক্ষমতা রাখে, এবং আমি বিশ্বাস করি—এই সংঘাতের পরিণতি হবে এই সত্তার পতন।”

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির প্রথম ধাপে গাজায় সব সীমান্ত পারাপার খুলে দেওয়া, খাদ্য ও মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করা এবং বন্দিবিনিময়ের বিনিময়ে শত্রুতা বন্ধের কথা ছিল। হামাস শর্ত মানলেও ইসরায়েল হামলা চালিয়ে গেছে এবং অধিকাংশ সীমান্ত বন্ধ রেখেছে।

গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের তথ্যমতে, ইসরায়েল ইতোমধ্যে অন্তত ৮৭৫ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে—এর মধ্যে বেসামরিকদের ওপর গুলিবর্ষণ, আবাসিক এলাকায় অনুপ্রবেশ, গোলাবর্ষণ ও বাড়িঘর ধ্বংসের ঘটনা রয়েছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ৪১১ জন নিহত ও ১,১১২ জন আহত হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা ৭০,৯৩৭ জনে পৌঁছেছে এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১,৭১,১৯২ জন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha