বৃহস্পতিবার ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ - ০৯:২২
ইমাম হাদী (আ.) ইমামত ও বেলায়েত প্রতিষ্ঠার স্থপতি / আজকের ইরানের শক্তির মূল ভিত্তি ‘বেলায়েতে ফকিহ’

ইমামত ও বেলায়েতের চিন্তাধারা সুদৃঢ় ও প্রাতিষ্ঠানিক করার ক্ষেত্রে ইমাম হাদী (আ.)-এর ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা তুলে ধরে আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ মুজতবা হুসাইনি বলেছেন, বেলায়েতের প্রতি অবিচল আনুগত্যই ইসলামের স্থায়িত্বের রহস্য এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বর্তমান ক্ষমতা, মর্যাদা ও প্রতিরোধক্ষমতার মূল উৎস।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ মুজতবা হুসাইনি বলেন, আহলে বাইত (আ.)-এর ইতিহাস স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে— যেখানেই সমাজ তাদের ইমাম থেকে দূরে সরে গেছে, সেখানেই আল্লাহর শ্রেষ্ঠ আওলিয়াগণ নিদারুণ মাজলুমিয়াত ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

বুধবার টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘আফতাবে শার্কি’-তে বক্তব্য রাখতে গিয়ে— ইমাম হাদী (আ.)-এর শাহাদাত উপলক্ষে শোক প্রকাশ করে—মাজলিসে খুবরেগান (বিশেষজ্ঞ পরিষদ)-এর সদস্য আয়াতুল্লাহ হুসাইনি ইমামত, বেলায়েত এবং বিশেষভাবে ইমাম হাদী (আ.)-এর ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে ইসলামবিরোধী ও উগ্র তাকফিরি গোষ্ঠী ইমাম হাদী (আ.)-এর পবিত্র দরগাহ ধ্বংস করলেও, আল্লাহর ইচ্ছা ও মুমিনদের— বিশেষত ইরানের জনগণের চেষ্টায় এই পবিত্র স্থান আগের চেয়েও অধিক মর্যাদা ও জাঁকজমক নিয়ে পুনর্নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে সেখানে একটি সুবিন্যস্ত ও সম্মানজনক ধর্মীয় স্থাপনা গড়ে উঠেছে।

আয়াতুল্লাহ হুসাইনি বলেন, ইমাম হাদী (আ.)-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ইমামত বিষয়ে তাঁর সুস্পষ্ট ও গভীর গুরুত্বারোপ। ইমাম রেজা (আ.)-এর যুগের পর ইমামত ও বেলায়েতের আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। ইমামত কেবল আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব নয়; বরং ইসলামী সমাজব্যবস্থা, ইসলামের স্থিতি এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। হাদিস “বুনিয়াল ইসলামু আলা খামস”-এও বেলায়েতকে ইসলামের মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আজ আমাদের ইমাম হলেন ইমাম মাহদী (আ.ফা.) এবং ওয়ালিয়ে ফকিহ তাঁর প্রতিনিধি। ওয়ালিয়ে ফকিহের আনুগত্য মানে ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর আনুগত্য। যেমন ইসলামের সূচনালগ্নে হযরত আলী (আ.)-এর আনুগত্য রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্য হিসেবে গণ্য হতো—এটি ইসলামের ইতিহাসে এক সুস্পষ্ট ও অবিচ্ছিন্ন নীতি।

ইমাম হাদী (আ.)-এর জ্ঞানতাত্ত্বিক ও আকিদাগত ভূমিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইমাম হাদী (আ.) এমন উচ্চাঙ্গের ও গভীর জ্ঞান উপস্থাপন করেছেন, যা এর আগে এভাবে বিস্তৃতভাবে আলোচিত হয়নি। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো জিয়ারতে জামিয়া কাবিরা, যা আহলে বাইত (আ.)-এর মর্যাদা ও অবস্থান অনুধাবনের ক্ষেত্রে এক অনন্য দলিল। এসব শিক্ষা এমন এক সময়ে প্রচারিত হয়, যখন তিনি আব্বাসি শাসকদের কঠোর নজরদারি ও কার্যত গৃহবন্দিত্বের মধ্যে ছিলেন; তবুও তিনি যোগ্য শিষ্য ও বিশ্বস্ত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ইমামতের বার্তা পৌঁছে দেন।
তিনি বলেন, ইমামতের প্রতি আনুগত্য যত দৃঢ় হয়, ইমামতের শক্তিও তত বৃদ্ধি পায়।

এই আনুগত্য দুর্বল হলে হযরত আলী (আ.)-এর মতো মহান ব্যক্তিত্বও চরম অবিচারের শিকার হন। নবী করিম (সা.)-এর কাছ থেকে সরাসরি প্রাপ্ত অতুলনীয় জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও, জনগণের পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ায় তাঁকে কঠিন মাজলুমিয়াত সহ্য করতে হয়েছিল।

বর্তমান বিশ্ব ও ইরানের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, আজ যদি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বেলায়েতে ফকিহ ও সর্বোচ্চ নেতার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে প্রতিরোধক্ষম শক্তিতে পরিণত না হতো, তবে শত্রুরা আগ্রাসনের সাহস পেত। কুরআনের নির্দেশ— “তোমরা তাদের মোকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি প্রস্তুত রাখো”—এর অর্থ হলো এমন সক্ষমতা অর্জন করা, যাতে শত্রু যুদ্ধ শুরু করতেই ভয় পায়।

তিনি আরও বলেন, আজ ইরানের সশস্ত্র বাহিনী—সেপাহ, সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা বাহিনী—সর্বাধিনায়কের নেতৃত্বে পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে। এই সক্ষমতা ও প্রস্তুতি বেলায়েতের এক মহান নিয়ামত।

ইরাকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতি জনগণের ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে আয়াতুল্লাহ হুসাইনি বলেন, ইরাকের জনগণ গভীর আন্তরিকতায় তাঁকে ভালোবাসে এবং অনেকেই নিজেকে তাঁর অনুসারী বলে মনে করে। এটি ইমাম হাদী (আ.) ও ইমাম রেজা (আ.) প্রচারিত ইমামত ও বেলায়েতের চিন্তাধারার বাস্তব প্রতিফলন।

বক্তব্যের শেষে তিনি জোর দিয়ে বলেন, বেলায়েতই সব আমলের ভিত্তি ও ইসলামের মূল স্তম্ভ। যদি বেলায়েতে ফকিহ না থাকত এবং জনগণ ইমামকে সহায়তা না করত, তবে আজ ইরান একটি নির্ভরশীল ও পশ্চাৎপদ রাষ্ট্রে পরিণত হতো। কিন্তু আজ ইরান বৈশ্বিক অঙ্গনে একটি প্রভাবশালী শক্তি; এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর দেশও এই জাতি ও তার নেতৃত্বের সামনে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে—এ সত্য আজ বহু জাতিই স্বীকার করে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha