হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসলামী শিক্ষায় গুনাহ সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত— কবিরা (বড় গুনাহ) ও সগিরা (ছোট গুনাহ)। নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত ও আলেমদের ঐকমত্য অনুযায়ী, কবিরা গুনাহের তালিকায় প্রথম ও সবচেয়ে ভয়াবহ স্থানটি দখল করে আছে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া। কারণ এই নিরাশা মানুষকে তাওবা, সংশোধন ও আত্মশুদ্ধির পথ থেকেই বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
পবিত্র কুরআন মানবজাতিকে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করে দিয়েছে— لاتقنطوا من رحمة الله “তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।” (সূরা যুমার, আয়াত ৫৩)
এই আয়াত প্রমাণ করে যে, আল্লাহর রহমত কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সীমাবদ্ধ নয়। বরং যে ব্যক্তি যত বড় গুনাহই করুক না কেন, যদি সে অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর প্রতি আশাবাদী থাকে, তবে তার জন্য ক্ষমার দরজা বন্ধ হয় না। বাস্তবে গুনাহ মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে সরালেও, নিরাশা মানুষকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতেই বাধা দেয়— এ কারণেই এটি এত ভয়াবহ।
ইরানের প্রখ্যাত মুফাস্সির ও আলেমে দ্বীন হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন উস্তাদ মুহসিন ক্বারআতি এ প্রসঙ্গে বলেন— এই চিন্তা যে, “আমি গুনাহ করেছি, তাই আমার আর কোনো মূল্য নেই”—এটি কোনো ঈমানদার চিন্তা নয়; বরং এটি শয়তানের কুমন্ত্রণা। কারণ এই ধারণা মানুষকে আত্মসমালোচনার বদলে আত্মবিনাশের দিকে ঠেলে দেয়।
একটি শিক্ষণীয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে— এক ব্যক্তি কাবা শরিফের গিলাফ ধরে কান্নাকাটি করছিল, কিন্তু একই সঙ্গে বলছিল, “আমাকে কখনো ক্ষমা করা হবে না।”
তাকে জিজ্ঞেস করা হলো— “তুমি কেন এমন কথা বলছ? তুমি কে এবং কী অপরাধ করেছ?”
সে উত্তরে বলল— “আমি সেই ব্যক্তি, যে ইয়াজিদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেছিলাম, কারবালায় গিয়েছিলাম এবং ইমাম হুসাইন (আ.)–এর চাচাকে সংবাদ দিয়েছিলাম। এভাবে আমি সেই ভয়াবহ অপরাধে প্রত্যক্ষভাবে শরিক হয়েছিলাম।”
তখন তাকে বলা হলো— “আল্লাহর রহমত থেকে তোমার এই নিরাশা— কারবালায় যাওয়ার এবং সেই মহা অপরাধে শরিক হওয়ার চেয়েও বড় গুনাহ।”
এই ঘটনা আমাদের শেখায়— কোনো গুনাহই মানুষকে নিরাশ হওয়ার অধিকার দেয় না।
ইসলাম আমাদের শেখায় ভারসাম্যপূর্ণ জীবনবোধ— গুনাহকে হালকা মনে করা যাবে না, আবার গুনাহের কারণে আশাও হারানো যাবে না। একজন মুমিন গুনাহ করলে ভয় পাবে, অনুতপ্ত হবে, তাওবা করবে; কিন্তু একই সঙ্গে আল্লাহর রহমতের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখবে।
আল্লাহর রহমত অসীম, সীমাহীন ও সর্বব্যাপী। মানুষের কর্তব্য হলো— গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা, ভুল হলে তাওবা করা এবং শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আল্লাহর দয়ার প্রতি আশাবাদী থাকা। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় বিজয় হলো— আশা হারানো নয়, বরং আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।
আপনার কমেন্ট