শনিবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৬:৫৭
কাতিফে তিনজন শিয়া যুবকের সাম্প্রতিক মৃত্যুদণ্ড একটি রাজনৈতিক অপরাধ ও ন্যায়বিচারের স্পষ্ট লঙ্ঘন

বাহরাইনের জামিয়াতুল আমাল আল-ইসলামি এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছে যে, সৌদি শাসনের হাতে আটক কাতিফের বাসিন্দা সাইয়্যেদ হুসাইন আল-ক্বাল্লাফ, মুহাম্মাদ আহমাদ আল-হামদ ও হাসান সালেহ আল-সালিমকে খ্রিস্টীয় বছরের শেষ দিনগুলোতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া একটি পূর্ণমাত্রার রাজনৈতিক অপরাধ।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, সৌদি আরবে শিয়াদের বিরুদ্ধে আলে সাউদ শাসনের ধারাবাহিক অপরাধের প্রেক্ষাপটে এবং একই সঙ্গে দশ বছর আগে সৌদি শাসনের হাতে শহীদ হওয়া শহীদ আয়াতুল্লাহ শেখ নিমর বাকের আল-নিমরের শাহাদাত বার্ষিকীর সময়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাতিফের আরও তিন নির্দোষ যুবকের মৃত্যুদণ্ডের খবর প্রকাশিত হয়।

বাহরাইনের জামিয়াতুল আমাল আল-ইসলামি এই নৃশংস অপরাধের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিশ্ব ইসলাম ও আরব বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতির পূর্ণ পাঠ নিম্নরূপ:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

“নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তনকারী।”
“যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদের মৃত মনে করো না; বরং তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট জীবিত এবং রিজিকপ্রাপ্ত।”

বাহরাইনের জামিয়াতুল আমাল আল-ইসলামি গভীর দুঃখ ও শোকের সঙ্গে, তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করছে কাতিফের জনগণের বিরুদ্ধে চলমান পদ্ধতিগত ও গুরুতর নিপীড়নের প্রতি, বিশেষত মুজাহিদ আলেম শহীদ আয়াতুল্লাহ শেখ নিমর বাকের আল-নিমর (রহ.)-এর শাহাদাতের দশম বেদনাদায়ক বার্ষিকীর প্রাক্কালে।

শহীদ আয়াতুল্লাহ নিমরের হত্যাকাণ্ড ছিল একটি নির্ধারণমূলক মুহূর্ত, যা স্পষ্টভাবে জুলুম ও স্বৈরাচারের নীতি এবং ন্যায় ও মর্যাদা প্রত্যাশীদের কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টাকে প্রকাশ করে।

সৌদি শাসনের হাতে আটক কাতিফের বাসিন্দা সাইয়্যেদ হুসাইন আল-ক্বাল্লাফ, মুহাম্মাদ আহমাদ আল-হামদ ও হাসান সালেহ আল-সালিমকে মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া একটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক অপরাধ।

এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই অপরাধের সম্পূর্ণ দায়িত্ব বর্তমান আলে সাউদ শাসকগোষ্ঠীর ওপর বর্তায়। এটি ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবিলায় প্রতিশোধ, সমষ্টিগত শাস্তি ও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের নীতির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।

জামিয়াতুল আমাল আল-ইসলামি মনে করে, এই পদ্ধতিগুলোকে বৈষম্য, বর্জন এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা সীমিত করার সামগ্রিক নীতিমালা থেকে আলাদা করে দেখা যায় না—যে নীতিমালাগুলো সাম্প্রদায়িক পরিচয় ও রাজনৈতিক অবস্থানের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু বানায় এবং নাগরিক সমতার নীতি ও একটি ন্যায়পরায়ণ রাষ্ট্রের মৌলিক মানদণ্ডের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

বাহরাইনের জামিয়াতুল আমাল আল-ইসলামি (আমাল) এই অঞ্চলের নিপীড়িত জনগণের ন্যায্য দাবির প্রতি তাদের অবিচল সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে এবং এসব অপরাধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নীরবতাকে এগুলোর ধারাবাহিকতায় পরোক্ষ সহযোগিতা হিসেবে বিবেচনা করে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়—বিশেষ করে বিশ্বশক্তিগুলো, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা, মানবাধিকার ও মানবিক সংস্থা এবং জাতিসংঘকে—এই লঙ্ঘন বন্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ ও অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী মনে করে।

এই সংগঠনটি বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও ধর্মীয় শক্তি এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি, বিশেষ করে আরব ও ইসলামি বিশ্বে, আহ্বান জানায় যেন তারা কেবল নিন্দা-বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে স্পষ্ট ও দায়িত্বশীল অবস্থান গ্রহণ করে, জনগণের বৈধ অধিকার রক্ষায় সহায়তা করে, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও মানবিক মর্যাদার নীতিকে সুদৃঢ় করে এবং আলে সাউদ শাসনের পরিচালিত পদ্ধতিগত মৃত্যুদণ্ডের অবসান ঘটায়।

এই সংগঠনটি এই মহাবিপর্যয়ে শহীদদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন, প্রিয়জন, গর্বিত কাতিফবাসী ও সব স্বাধীনচেতা মানুষের প্রতি গভীর সমবেদনা ও আন্তরিক সহানুভূতি জানায়। তারা মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যেন তিনি শহীদদের তাঁর প্রশস্ত রহমতের অন্তর্ভুক্ত করেন, তাঁদের রক্তকে সত্যের পথে আলোকবর্তিকা ও ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলো অর্জনের পথ হিসেবে স্থাপন করেন এবং তাঁদের পরিবার ও প্রিয়জনদের ধৈর্য, শান্তি ও অবিচলতা দান করেন।

শান্তি বর্ষিত হোক শহীদদের ওপর—যেদিন তারা জন্মগ্রহণ করেছেন, যেদিন তারা শহীদ হয়েছেন এবং যেদিন তারা পুনরুত্থিত হবেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha