সোমবার ১৩ জানুয়ারী ২০২৫ - ২১:১৩
কুরআনের আলোকে ইমাম আলী (আ.)’র ফযিলত ও মর্যাদা!

হাওজা / হযরত আলী (আ) জন্ম নিয়েছিলেন পবিত্র কাবা ঘরে হিজরতের তেইশ বছর আগে ১৩ ই রজব।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হযরত  আলী (আ) জন্ম নিয়েছিলেন পবিত্র কাবা ঘরে হিজরতের তেইশ বছর আগে ১৩ ই রজব এবং শাহাদত বরণ করেছিলেন কুফার পবিত্র মসজিদের মেহরাবে হিজরি ৪০ সনের একুশে রমজানে।

আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.)'র মহৎ ও সুন্দর ব্যক্তিত্ব এত বিশাল বিস্তৃত ও এত বিচিত্রময় যে একজন মানুষের পক্ষে তাঁর সব বৈশিষ্ট্য ও পরিধি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করাও সম্ভব নয়। মানুষ কল্পনার ফানুস উড়াতে পারবে কিন্তু এর কিনারার নাগালও পাবে না।

ভারত উপমহাদেশের বিশিষ্ট সূফী সাধক ও চিশতিয়া তরিকার প্রতিষ্ঠাতা খাজা মুঈনউদ্দিন চিশতি (র.) বলেছেন, সমুদ্রকে যেমন ঘটিতে ধারণ করা অসম্ভব তেমনি বর্ণনার মাধ্যমে আলী (আ.)'র গুণাবলী তুলে ধরাও অসম্ভব।

বিশ্বনবী (সা.)'র একটি হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী আলী (আ.)-কে পুরোপুরি বা পরিপূর্ণভাবে চেনেন কেবল আল্লাহ ও তাঁর সর্বশেষ রাসূল (সা.) এবং আল্লাহ ও তাঁর সর্বশেষ রাসূল (সা.)-কে ভালভাবে চেনেন কেবল আলী (আ.)।

পবিত্র কুরআনের আলোকে হযরত আলী (আ.)

এক.

من المؤمنین رجال صدقوا ماعاهدوا الله علیه فمنهم من قضی نحبه ومنهم من ینتظر وما بدلوا تبدیلا

“মুমিনদের মধ্যে এমন পুরুষ রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতির (আল্লাহর রাস্তায় আত্মত্যাগ) উপর অবিচল রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছুলোক তাদের ওয়াদা পূর্ণ করেছে। আর কিছু লোক অপেক্ষায় আছে এবং তাদের প্রতিশ্রুতিতে কোনরূপ পরিবর্তন করেনি।” (সূরা আহজাব: ২৩)

এ আয়াতে কাকে উদ্দেশ্য করে কথা বলা হয়েছে তা নিয়ে মুফাসসীরদের বিভিন্ন মত রয়েছে। নিশ্চিতভাবে শাহাদাতের জন্য অপেক্ষমান লোকদের মধ্যে হযরত আলী (আ.) অন্যতম। আহলে সুন্নাতের কোন কোন মুফাসসীর এ মতটির কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন- (১) হাকেম আবুল কাসেম হেসকানী হানাফী ‘শাওয়াহেদুত্ তানযীল’ কিতাবের ১ম ও ২য় খণ্ড, ৬২৭ ও ৬২৮ নম্বর হাদীসে হযরত আলী (আ.) থেকে এ মর্মে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন :رجال صدقواআয়াতটি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। খোদার কসম, আমি কি সেই ব্যক্তি নই যে শাহাদাতের জন্য অপেক্ষা করছি!? আমি কখনো নিজের কর্মপন্থা পরিবর্তন করিনি, আমি আমার প্রতিশ্রুতির উপর অবিচল রয়েছি।’(২) কান্দুযী হানাফী প্রণীত ‘ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাত’ ইস্তম্বুলে মুদ্রিত পৃষ্ঠা : ৯৬ এবং হায়দারিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত, পৃ: ১১০।(৩) মানাকেবে খাওয়ারেজমী হানাফী, হায়দারিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত, পৃষ্ঠা : ১৯৭।(৪) তাযকেরায়ে ইবনে জাওযী হানাফী- পৃঃ ১৭। (৫) আসসাওয়ায়েকুল মুহরেকা পৃঃ ৮০।(৬) শাবলাঞ্জী নূরুল আবসার, সাদীয়া প্রেসে মুদ্রিত- পৃঃ ৭৮(৭) তাফসীরে খাজেম ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ২০৩।(৮) ফাজায়েলুল খাম্সা মিনাস সেহাহ আস্ সিত্তা ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৮৭।

আয়াতটি খন্দকের যুদ্ধ প্রসঙ্গে অবতীর্ণ। ঐ সময় কাফের ও মুশরিকদের বিশাল বাহিনী মদীনার দিকে অভিযান পরিচালনা করে।রসূলে খোদা (সা.) তাদের অভিযান সম্পর্কে অবহিত হয়ে পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন যে, মদীনার চার পাশে খন্দক খনন করা হবে, যাতে দুশমন মদীনার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে। খন্দক খননের পর শত্রু বাহিনী এ অবস্থায় মুখোমুখি হয়ে হোঁচট খায়। এরপর মাত্র কয়েকজন ব্যতীত শত্রুসৈন্যরা খন্দক বেষ্টনীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারেনি। অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে আমর ইবনে আবদু ছিল প্রবল বীরত্বের অধিকারী। সে মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে প্রতিদ্বন্দীর জন্য হাঁক দিতে থাকে। মুসলমানরা তখন ইতস্তত বোধ করছিলেন। এ সময় হযরত আলী (আ.) তার সাথে সম্মুখ যুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত হন। ঠিক ঐ সময় নবী করিম (সা.) হযরত আলীর জন্য দোয়া করেন এবং এ বিখ্যাত উক্তিটি করেন-برز الایمان کله الشرک کلهঅর্থাৎ “সমগ্র ঈমান (আলী) সমগ্র কুফরের মুখোমুখি হয়েছে।”আলী যদি পরাজিত হয় প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ও ঈমান পরাজয় বরণ করবে আর যদি আমর ইবনে আবদু পরাজিত হয় তাহলে সমস্ত কুফরই যেন পরাজিত হবে। শেষ পর্যন্ত হযরত আলী (আ.) জয়লাভ করেন। তিনি আমর ইবনে আবদুকে হত্যা করেন। এ প্রসঙ্গে নবী করিম (সা.) বলেন,

لضربة علی یوم الخندق افضل من عبادة الثقلینঅথবাضربة علی یوم الخندق افضل من اعمال امتی الی یوم القیامة

“খন্দকের দিন আলীর আঘাতের মর্যাদা মানব ও জ্বিন উভয় জাতির ইবাদতের চাইতে উত্তম।” অথবা “খন্দকের দিন আলীর একটি আঘাতের মর্যাদা উম্মতের কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের ইবাদতের চাইতে উত্তম।” শত্রুর উপর হানা হযরত আলীর একটি আঘাতের এতখানি মূল্য কেন সে বিষয়টিও পরিষ্কার। কেননা, হযরত আলীর এ আঘাত যদি সেদিন না হত তাহলে হয়ত কুফরী শক্তি জয়লাভ করত। পরিণামে ইসলামের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যেত। অন্যদের ইবাদত-বন্দেগী করার অবকাশ তখন কিভাবে থাকত? এ বর্ণনাটি সুন্নী আলেমগণ তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন-(১) আল্লামা ইযযুদ্দীন ঈজী প্রণীত ‘কিতাবে মুওয়াফেক’ ইস্তামবুলে মুদ্রিত-পৃঃ ৬১৭।(২) ফখরুদ্দীন রাজী প্রণীত নেহায়াতুল উকুল ফি দেরায়াতিল উসুল। পাণ্ডুলিপি-পৃঃ ১১৪।(৩) আল্লামা তাফতাযানী প্রণীত সারহুল সাকাসেদ ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৩০(৪) আল্লামা কান্দুযী প্রণীত “ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাত’ ৯৫ ও ১৩৭ পৃষ্ঠা। ইস্তামবুলে মুদ্রিত। (৫) আল্লামা মওলভী আদ দেহলভী প্রণীত ‘তাজহীযুল যাহিশ-পা-ুলিপি পৃঃ ৪০৭।(৬) আল্লামা বেহজাত আফিন্দী প্রণীত “তারিখে আলে মুহাম্মদ’ পৃঃ ৫৭।

দুই: “লোকদের মধ্যে এমন অনেক আছে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির বিনিময়ে নিজেদের প্রাণকে বিক্রি করে, আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি দয়াশীল।” (সূরা বাকারা - ২০৬)

ومن الناس من یشری نفسه ابتغاء مرضات الله والله رؤف بالعباد

এ আয়াতও হযরত আলী (আ.) প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। পয়গাম্বর (সা.) যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং মক্কার মুশরিকরা রাতে হযরতের উপর হামলা করে তাঁকে হত্যার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন আল্লাহ তায়ালা পয়গাম্বর (সা.)কে মুশরিকদের নীল নকশা সম্পর্কে অবহিত করেন। তখন হযরতের বিছানায় শুয়ে থাকার জন্য হযরত আলী (আ.) তৈরী হন।সে রাতটি ‘লাইলাতুল মুবিত’ নামে প্রসিদ্ধ হয়। কোন কোন সুন্নী আলেমও সে বর্ণনাটি সমর্থন করেছেন। যেমন-(১) হাসকানী হানাফী প্রণীত শাওয়াহেদুত তানযীল ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৩৩ থেকে ১৪১।(২) ইবনে সাবাগ মালেকী প্রণীত “ফসুলুল মুহিম্মাত” হায়দারিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত-পৃঃ ৩১।(৩) সাবত ইবনে জাওযী প্রণীত ‘তাযকিরাতুল খাওয়াস’ হায়দারিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত- পৃঃ ৩৫ ও ২০০।(৪) কান্দুযী হানাফী প্রণীত ‘ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাত’ ইস্তামবুলে মুদ্রিত, পৃঃ ৯২।(৫) ফাখরুদ্দীন রাযীর তাফসীরে কবীর ৫ম খণ্ড- পৃঃ ২২৩। মিশরে মুদ্রিত।(৬) শাবলাঞ্জী প্রণীত ‘নূরুল আবসার’ ওসমানিয়া জাপাখানায় মুদ্রিত, পৃঃ ৭৮(৭) মুসনাদে আহমদ ১ম খণ্ড পৃঃ ৩৪৮।

তিন :انما انت منذر ولکل قوم هاد

“হে নবী! তুমি ভয় প্রদর্শনকারী : প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে পথ প্রদর্শক (সূরা রা’দ- ৭)

শিয়া ও সুন্নীদের অনেক কিতাবে পয়গাম্বর (সা.)-এর নিকট থেকে বর্ণিত যে, পয়গাম্বর (সা.) বলেছেন, আমি ভয় প্রদর্শনকারী আর হযরত আলী পথপ্রদর্শক। আহলে সুন্নাতের যে সব সূত্রে এ বর্ণনাটি এসেছে তন্মধ্যে রয়েছে :(১) ফখরে রাযী প্রণীত তাফসীরে কাবীর- ৫ম খণ্ড- পৃঃ ২৭১। দারুত তাবাআহ আমেরাহ্, মিশরে মুদ্রিত এবং এছাড়া অন্য এক সংস্করণের ২১তম খণ্ড-, পৃষ্ঠা : ১৪(২) তাফসীরে ইবনে কাসীর- ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা : ৫২(৩) দুররুল মানসুর-সুয়ূতী ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৫।(৪) আলুসী প্রণীত রুহুল মায়ানী ১৩তম খণ্ড, পৃঃ ৭৯।(৫) হাসকানী হানাফী প্রণীত “শাওয়াহেদুত তানযীল” ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৯৩ ও ৩০৩, হাদীস নং ৩৭৮-৪১৬।(৬) তাফসীরে শওকানী ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৭০।(৭) ইবনুস সাবাগ মালেকী, ফসুলুল মুহিম্মাত পৃঃ ১০৭।(৮) শাবলেবখী প্রণীত ‘নূরুল আবসার’ পৃঃ ৭১। ওসমানিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত, মিশর।(৯) কান্দযী হানাফী প্রণীত ‘ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাত’ পৃঃ ১১৫ ও ১২১ হায়দারিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত।

চার.

انما ولیکم الله و رسوله والذین أمنوا الذین یقیمون الصلوة ویؤتون الزکوة وهم راکعون

“নিশ্চয়ই তোমাদের অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং যারা ঈমান এনেছে আর রুকু অবস্থায় যাকাত দান করে।” (সূরা মায়েদা - ৫৫)

হযরত আলী (আ.)-এর ব্যাপারে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। ঘটনাটি ছিল এই যে, একজন ভিখারী মসজিদে প্রবেশ করে সাহায্যের প্রার্থনা জানায়। কিন্তু কেউ তাতে সাড়া দেয়নি। ঐ সময় হযরত আলী (আ.) নামাযে রুকুতে ছিলেন। ঐ অবস্থাতেই তিনি আঙ্গুলের ইশারা করেন। ভিখারী কাছে আসে এবং হযরত আলীর হাত থেকে তাঁর আংটিটি খুলে নেয়। এ আয়াতের শানে নযূল যে হযরত আলী (আ.) তা আহলে সুন্নাতের মুফাসসীরগণও সমর্থন করেছেন এবং তাদের তাফসীরের কিতাবে তা উদ্বৃত করেছেন।যেমন-মুুহিউদ্দীন তাবারী প্রণীত যাখায়েরুল ওকবা পৃঃ ৮৮, কায়রোর মাকতাবাতুল কুদসী হতে মুদ্রিত। ১. তাফসীরে রুহুল মাআনী ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ১৪৯ মিশরের মুনিরিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত।২. তাফসীরে ইবনে কাসীর ২য় খণ্ড, পৃঃ ৭১, মিশরে মুদ্রিত। ৩. শেখ আবুল হাসান আলী ইবনে আহমদ আল ওয়াহিদ আন নিশাপুবী আসবাবুল নুযূল পৃ ১৪৮ হিন্দিয়া প্রকাশনী থেকে মুদ্রিত (১৩১৫ হিজরী) মিশর। ৪. জালালুদ্দীন সুয়ূতী প্রণীত লুবাবুন নূকুল মুস্তাফা আল হালাবী ছাপাখানা হতে মুদ্রিত, পৃঃ ৯০।৫. তাফসীরে বায়যাভী-আনোয়ারুত তানযীল প্রাচীন মিশরে মুদ্রিত, পৃঃ ১২০। ৬. তাফসীরে তাবারী ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬৫, মিশরে মুদ্রিত।৭. আল্লামা নাসাফী ১ম খ- পৃঃ ২৮৯।৮. আল্লামা যামাখশারী প্রণীত ‘আল কাশশাফ’ ১ম খণ্ড পৃঃ ৩৪৭। আত্তেজারাত ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত,৯. মিশর।১০. ফাখরে রাযীর তাফসীরে কাবীর ১২তম খণ্ড, পৃঃ ২৬-নতুন মুদ্রণ, মিশর হতে।১১. শেখ আবু বকর আহমদ ইবনে আলী আর রাযী হানাফী প্রণীত আহকামুল কুরআন ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫৪৩ মিশর হতে মুদ্রিত।১২. কুরতুবী প্রণীত আল জামে লি আহকামিল কুরআন-৬ষ্ঠ খণ্ড পৃঃ ২২১, মিশরে মুদ্রিত।১৩. তাফসীরে আদদুররুল মানসুর ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৯৩, প্রথম প্রকাশ : মিশর।

পাঁচ.

الذین ینفقون اموالهم بالیل والنهار سرا وعلانیة فلهم اجرهم عند ربهم ولاخوف علیهم ولاهم یحزنون

“যারা রাতে ও দিনে গোপনে ও প্রকাশ্যে নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে তাদের জন্য তাদের প্রভুর কাছে প্রতিদান রয়েছে। তাদের জন্য কোন ভয় নেই, তারা চিন্তিতও হবে না।” (সূরা বাকারা -২৭৪)

আহলে সুন্নাতসহ বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, এ আয়াত হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। যেমন- (১) কাশশাফে যামাখশারী ১ম খ- পৃঃ ৩১৯। বৈরুতে মুদ্রিত, ১ম খ-, পৃষ্ঠা : ১৬৪ মিশর হতে মুদ্রিত। (২) ইবনে জাওজী হানাফী প্রণীত তাযকেরাতূল খাওয়াস’ পৃঃ ১৪। (৩) ফখরে রাযীর ‘তাফসীরে কবীর’ ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৮৯, মিশরে মুদ্রিত (৪) তাফসীরে কুরতুবী ৩য় খণ্ড পৃঃ ৩৪৭। (৫) তাফসীরে ইবনে কাসীর ১ম খণ্ড পৃঃ ৩২৬।(৬) আদ দুররুল মানসূর ১ম খণ্ড পৃঃ ৩৬৩।(৭) কান্দুযী হানাফী প্রণীত ‘ইউনাবিউল মুওয়াদ্দাত’ পৃঃ-৯২ ইস্তামবুলে মুদ্রিত পৃঃ ২১২।

ছয়.

والذی جاء بالصدق وصدق به ألاءک  هم المتقون

‘যিনি সত্য বাণী নিয়ে এসেছেন এবং যিনি তা সত্য বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা পরহেযগার।’-(সূরা যুমার- ৩৩)

এ আয়াতের তাফসীরে কোন কোন মুফাসসীর বলেছেন যে, ‘যিনি সত্য বাণী নিয়ে এসেছেন বলতে এখানে পয়গাম্বর (সা.)- এর কথা বলা হয়েছে। আর যিনি তা সত্য বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি হযরত আলী (আ.)। নিঃসন্দেহে প্রথম যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উপর ঈমান আনেন তিনি ছিলেন হযরত আলী (আ.)। আহলে সুন্নাতের কোন কোন মুফাসসীরও তাদের তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখিত আয়াতটি হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে বলে অভিমত দিয়েছেন। (১) হাসকানী হানাফী প্রণীত শাওয়াহেদুত তানযীল ২য় খণ্ড, পৃঃ ১২০(২) সূয়ূতী প্রণীত দুররুল মানসূর ৫ম খ- পৃঃ ৩২৮।(৩) তাফসীরে কুরতুবী, পঞ্চদশ খণ্ড, পৃঃ ২৫৬।(৪) কিফায়াতুত তালিব কুঞ্জী শাফেয়ী পৃঃ ২৩৩ হায়দারিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত।

সাত.

یایها الذین امنوا اتقوا الله وکونوا مع الصادقین

“হে ঈমানদাররা তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক।” (সূরা তওবা - ১১৯)

কোন কোন মুফাসসীর বলেছেন যে, আয়াতে সাদেকীন বা সত্যবাদী বলতে হযরত আলী (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের বুঝানো হয়েছে। সত্যিকার অর্থে এর উজ্জ্বল প্রতিপাদ্য (মিসদাক) হচ্ছেন হযরত আমীরুল মুমেনীন (আ.)(১) ইবনে জওযী হানাফী প্রণীত তাযকেরাতুল খাওয়াস পৃঃ ১৬।(২) মানাকেবে খাওয়ারেজমী হানাফী পৃঃ ১৭৮।(৩) দুররুল মানসূর-সূয়ুতী ৩য় খণ্ড, পৃঃ-৩৯০।(৪) আলূসী প্রণীত তাফসীরে রুহুল মাআনী ১ম খণ্ড, পৃঃ ৪১।

আট.

انما یرید الله لیذهب عنکم الرجس اهل البیت و یطهرکم تطهیرا

“আল্লাহ কেবল চান যে, তোমাদের আহলে বাইত থেকে গোনাহ ও অপবিত্রতা দূর করবেন এবং তোমাদেরকে পুরোপুরি পবিত্র করবেন।”-সূরা আহজাব - ৩৩

শিয়া মুফাসসীরগণ এবং কোন কোন সুন্নী মুফাসসীর বলেছেন যে, আহলে বাইত বলতে হযরত আলী (আ.), হযরত ফাতেমা (আ.), ইমাম হাসান (আ.), ইমাম হোসাইন (আ.)। কাজেই হযরত আলীও তাদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে গোনাহ ও অপবিত্রতা থেকে আল্লাহ পাক দূরে রাখতে চেয়েছেন এবং সম্পূর্ণ পাক রেখেছেন। আহলে সুন্নাতের সূত্রে বহু রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে যে, আহলে বাইত মানে সেই পাঁচজন। উদাহরণস্বরূপ-ছহীহ মুসলিম ৪র্থ খ- ১৮৮৩ পৃষ্ঠায় আহলে বাইতের ফজিলত অধ্যায়ে উম্মুল মু’মেনীন আয়েশা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, পয়গাম্বর (সা.) হযরত আলী (আ.), হযরত ফাতেমা (আ.), হযরত ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হোসাইন (আ.)-কে আহলে বাইত হিসাবে উল্লেখ করেছেন। রেওয়ায়েতের মূল পাঠ নিম্নরূপ-حدثنا ابو بکر بن ابی شیبة و محمد بن عبد الله بن نمیر (واللفظ لأبی بکر) قالا : حدثنا محمد بن بشر عن زکریا عن مصعب بن شیبة عن صفیة بنت شیتة قالت: قالت عایشة : خرج النبی ص غداة و علیه مرط مرحل من شعر أسود فجاء الحسن بن علی فأدخله ثم جاء الحسین فأدخله معه ثم جاءت فاطمة فادخلها ثم جاء علی فأدخله ثم قل انما یرید الله لیذهب عنکم الرجس اهل البیت و یطهرکم تطهیرا

মহানবীর স্ত্রী আয়েশা বিনতে আবুবকর  বলেন, পয়গাম্বর (সা.) ভোরে ঘর থেকে বের হন। তার সাথে ছিল কালো পশমের মোটা ‘আবা’ বা আলখাল্লা জাতীয় পোশাক। তখন হাসান ইবনে আলী (আ.) আসলেন, পয়গাম্বর (সা.) তাকে ‘আবা’র ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন, এরপর হুসাইন আসলেন তিনি তাকেও ‘আবা’র মধ্যে ঢুকিয়ে নিলেন। এরপর ফাতেমা আসলেন পয়গাম্বর (সা.) তাকেও ‘আবা’র মধ্যে ঢুকিয়ে নিলেন। এরপর আলী (আ.) আসলে পয়গাম্বর (সা.) আলীকেও ‘আবা’র মধ্যে ঢুকিয়ে নিলেন। এরপর পয়গাম্বর (সা.) এ আয়াত পাঠ করলেন।انما یرید الله لیذهب عنکم الرجس اهل البیت و یطهرکم تطهیرআহলে সুন্নাতের আলেমগণ তাদের কিতাবে এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন।১. ছহীহ মুসলিম ৫ম খণ্ড, পৃঃ ১৮৮৩ বৈরুতে মুদ্রিত।২. শাওয়াহেদুত তানযীল হাসকানী হানাফী ২য় খণ্ড, পৃঃ-৩৩৩. মুস্তাদরাকে হাকেম ৩য় খণ্ড, পৃ- ১৪৭।৪. আদদুররুল মানসুর ৫ম খণ্ড, পৃঃ- ১৯০।৫. ফতহুল কাদীর শাওকানী ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ- ২৭৯।৬. যাখায়েরুল ওকবা পৃঃ ২৪।

নবীপত্নী উম্মে সালমা বলেন, ‘পবিত্রতার আয়াত’ আমার ঘরে নাযিল হয়। এর পর পয়গাম্বর (সা.) এক লোককে হযরত ফাতেমার ঘরে পাঠান। যাতে আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইনকে তাঁর কাছে নিয়ে আসা হয়। তাঁরা আসলেন। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত। উম্মে সালামা বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ আমি কি আপনার আহলে বাইতের মধ্যে শামিল নই? তিনি বললেন, তুমি আমার পরিবারের ভালো লোকদের মধ্যে শামিল। কিন্তু এরা আমার আহলে বাইত। আহলে সুন্নাতের আলেমরাও এই রেওয়ায়েতটি তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন-১. ফতহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী ৩য় খণ্ড, পৃ-৪২২।২. তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় খণ্ড, পৃঃ- ৪৮৪, ৪৮৫।৩. যাখায়েরুল ওকবা পৃঃ ২১, ২২।৪. উসদুল গাবা (ইবনে আসীর প্রণীত) ২য় খণ্ড-, পৃ-১২, ৩য় খণ্ড, পৃ-৪১৩, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ-২৯।৫. সহীহ তিরমিযী ৫ম খণ্ড, পৃ-৩১ ও ৩৬১।৬. হাসকানী হানাফী প্রণীত শাওয়াহেদুত তানযীল ২য় খণ্ড, পৃ-২৪।৭. তাফসীরে তাবারী ২২তম খণ্ড, পৃ-৭ ও ৮। মিশরে মুদ্রিত।৮. ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাত পৃ-১০৭ ও ২২৮ ইস্তামবুলে মুদ্রিত।৯. সুয়ূতীর দুররুল মানসুর ৫ম খণ্ড, পৃ-১৯৮।এছাড়াও আহলে সুন্নাতের বহু কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, আহলে বাইত হচ্ছেন হযরত আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন।যেমন-১. মাসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ১ম খণ্ড, ১৯৩ ও ৩৬৯ পৃষ্ঠা। মিশরে মুদ্রিত।২. মানাকেবে খাওয়ারেজমী হানাফী পৃঃ ২৩।৩. তাফসীরে কাশশাফ-যামাখশারী ১ম খণ্ড পৃঃ ১৯৩ এবং মিশরে ছাপা ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৯।৪. তাযকিরাতুল খাওয়াস ইবনে জওযী হানাফী পৃঃ- ২৩৩।৫. তাফসীরে কুরতুবী ১৪ তম খণ্ড, পৃ ১৮২ প্রথম প্রকাশ কায়রো, মিশর।৬. তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪৮৩, ৪৮৪ ও ৪৮৫ মিশরে মুদ্রিত।৭. তাফসীরে এতকান সুয়ূতী ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ২৪০, মিশরে মুদ্রিত।৮. উসদুল গাবা-ইবনে আসীর ২য় খণ্ড, পৃঃ ১২। ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪১৩, ৪র্থ খণ্ড, পৃ- ২৬, ২৯। ৯. আসসাওয়ায়েকুল মুহরেকা: ইবনে হাজার আসকালানী পৃঃ ১১৭, ১৪১ মিশরে মুদ্রিত। ১০. তাফসীরে কাবীর ফখরে রাযী ২য় খণ্ড,পৃঃ-৭০০।

নয়.

قل لا اسءلکم علیه اجرأ الا المودة فی القربی

“হে নবী! তুমি বলে দাও, আমি রেসালাতের বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না, একমাত্র আমার নিকটাত্মীয়দের সাথে ভালোবাসা পোষণ ছাড়া।” (সূরা শূরা - ২৩)

আহলে সুন্নাত ও শিয়া সূত্রে বহু বর্ণনা আছে যে, আয়াতে কুরবা বা নিকটাত্মীয় বলতে হযরত আলী (আ.), হযরত ফাতেমা, হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ তাঁদের সাথে ভালোবাসা পোষণ করা অবশ্য কর্তব্য বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এখানে আহলে সুন্নাতের সূত্রগুলো উল্লেখ করা গেল-১. তাফসীরে তাবারী ২৫ খণ্ড, পৃঃ ২৫ মিশরে মুদ্রিত।২. তাফসীরে কাশশাফ ৩য় খণ্ড পৃঃ- ৪০২/৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ২২০, মিশরে মুদ্রিত।৩. তাফসীরে কাবীর ২৭ তম খণ্ড পৃঃ-১৬৬ মিশকুরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত আলী (আ.)-এর পরিচয় মুদ্রিত।৪. তাফসীরে বায়যাভী ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১২৩ মিশকুরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত আলী (আ.)-এর পরিচয় মুদ্রিত।৫. তাফসীরে ইবনে কাছির ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১১২।৬. তাফসীরে কুরতুবী ১৬তম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ২২।৭. দুররুল মানসুর ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৭৮. ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাত-কান্দুযী হানাফী পৃঃ ১০৬, ১৯৪, ২৬১ ইস্তামবুলে মুদ্রিত।৯. তাফসীরে নাসাফী ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১০৫।

উল্লেখিত সব বর্ণনাতেই একথা বলা হয়েছে যে, যখন পয়গাম্বর (সা.)-এর কাছে ‘কুরবা’ বা নিকটাত্মীয় কারা তা জানতে চাওয়া হয় তখন তিনি নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেন যে, তারা হলেন হযরত আলী (আ.), ফাতেমা (আ.), ইমাম হাসান (আ.) ও হুসাইন (আ.)।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha