শুক্রবার ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ - ০৮:০০
মরহুম আয়াতুল্লাহিল উজমা সাফি গুলপাইগানি (রহ.)

হাওজা / মরহুম আয়াতুল্লাহিল উজমা সাফি গুলপাইগানি (রহ.) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন: গায়বতের যুগ হলো পরীক্ষার যুগ, কর্মের যুগ, ধৈর্য ও দৃঢ়তার যুগ এবং পবিত্র কুরআনের বিধান ও ইসলামী নির্দেশনার সংরক্ষণের যুগ।

হওজা নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদন অনুসারে, মরহুম আয়াতুল্লাহিল উজমা সাফি গুলপাইগানি (রহ.) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন: গায়বতের যুগ হলো পরীক্ষার যুগ, কর্মের যুগ, ধৈর্য ও দৃঢ়তার যুগ এবং পবিত্র কুরআনের বিধান ও ইসলামী নির্দেশনার সংরক্ষণের যুগ। তাই, সকল মুসলমানের উচিত ইসলামের মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অবদান রাখা, বিদআতের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং কুফর ও ভ্রষ্টতার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা।

গায়বতের যুগে শিয়াদের দায়িত্ব

আহলে বাইত (আ.) -এর নির্দেশনাগুলোকে জীবন্ত রাখা গায়বতের যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এর মধ্যে রয়েছে— ইমাম মাহদী (আ.)-এর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, তাঁর আগমনের জন্য দোয়া করা এবং এই মহান ইমামের স্মৃতিকে মানুষের অন্তরে জাগরুক রাখা।

এই যুগে প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকলকে ইসলামের মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে, বিদআতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে এবং কুফর, শিরক, ঔদ্ধত্য ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে অবস্থান নিতে হবে।

প্রকৃত প্রতীক্ষাকারীর দায়িত্ব

গায়বতের যুগে মুমিনদের দায়িত্ব কোনোভাবেই ইমাম মাহদী (আ.)-এর উপস্থিতির যুগের চেয়ে কম নয়। প্রকৃত প্রতীক্ষাকারী হওয়া এবং সত্যিকার অর্থে ইমাম মাহদী (আ.)-এর আগমনের অপেক্ষা করা একটি মহান দায়িত্ব, যা প্রতিটি বিশ্বাসীর নিষ্ঠা ও আন্তরিক প্রচেষ্টার দাবিদার।

যে ব্যক্তি সত্যিকারের প্রতীক্ষাকারী, যে বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ইমাম মাহদী (আ.)-এর কল্যাণময় শাসনের প্রতীক্ষায় রয়েছে, সে নিশ্চিতভাবে সেই ভবিষ্যৎ দিনটিকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করে—যে দিন ইসলাম সমগ্র বিশ্বে বিস্তৃত হবে, ন্যায়বিচার, ভ্রাতৃত্ব ও সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে, মানববুদ্ধির পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটবে এবং জ্ঞান ও উপলব্ধি অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তির অন্ধকারকে দূর করবে। এই প্রতীক্ষাকারী ব্যক্তি শুধু বসে থাকবে না, বরং সে নিজেও এই মহান লক্ষ্য বাস্তবায়নে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করবে। ইসলামের সমৃদ্ধি ও মুসলমানদের সম্মান বৃদ্ধির জন্য তার সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে এবং সে বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের অবস্থা সম্পর্কে সদা সচেতন থাকবে, যেন সে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারে।

প্রকৃত প্রতীক্ষাকারী সচেতন ও সজাগ থাকে

যে ব্যক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ইহুদিবাদীদের ফিলিস্তিন ও জেরুজালেমে চালানো নিপীড়ন সম্পর্কে অবগত নয়, বা রুশ দখলদার বাহিনীর চেচেন মুসলমানদের বিরুদ্ধে বর্বর অপরাধ ও চেচেন জনগণের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের বিষয়ে জানে না এবং এই ধরনের ঘটনাগুলোর প্রতি উদাসীন, সে প্রকৃত অর্থে প্রতীক্ষাকারী নয়।

মাহদীবাদী শাসনের দিকে অগ্রসর হওয়া

মানুষকে ঐশী অভিভাবকত্বের পথে যুক্ত করা এবং সেই মহান ইমামের আবির্ভাবের মাধ্যমে বাস্তবায়িত ন্যায়বিচার, ভ্রাতৃত্ব, তাওহীদ, ঈমান, শান্তি ও সৌহার্দ্যের বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের উদ্বুদ্ধ করা উচিত। এই উপলব্ধি প্রতীক্ষাকারীদের কার্যক্রম ও কর্মপ্রচেষ্টাকে সেই পবিত্র যুগের জন্য প্রস্তুত করবে।

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আনন্দ ও দুঃখের কারণ

ইসলামের মহত্ত্ব প্রতিষ্ঠা, আহলে বাইত (আ.)-এর শিক্ষা ও নিদর্শনসমূহ পুনর্জীবিত করা, ধর্মীয় প্রতীকসমূহের সম্মান বৃদ্ধি, দুর্বলদের সাহায্য, মানুষের প্রয়োজন পূরণ, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ, বিদআতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং ইসলামী বিধানগুলোর সংরক্ষণ—এসবই ইমাম মাহদী (আ.)-এর সন্তুষ্টির কারণ। প্রকৃত প্রতীক্ষাকারীকে অবশ্যই এসবের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।

নিশ্চিতভাবেই তিনি সেই সকল খাঁটি ইসলামী কর্মকাণ্ড দেখে আনন্দিত হন, যা মুসলমানদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে, সমাজে দুর্নীতি, পাপাচার এবং মানুষের নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর প্রতি আসক্তি দেখে তিনি ব্যথিত হন।

আশা করা যায়, আমরা এবং সকল প্রতীক্ষাকারী, যারা তাঁর সাক্ষাৎ ও উপস্থিতির জন্য ব্যাকুল, ঈমান ও সৎকর্মের মাধ্যমে সর্বদা তাঁর সান্নিধ্য লাভের পথে অগ্রগামী ও অগ্রসর থাকবো।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha