হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলা ও মার্কিন সমর্থনে চলমান গণহত্যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তার মুখে মানবতার ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে রচিত হচ্ছে। গত কয়েক বছরে হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি, বিশেষত শিশু ও নারী, প্রাণ হারিয়েছেন, যা এক সুপরিকল্পিত "শিশু গণহত্যা"র ইঙ্গিত বহন করে ।
বর্তমান পরিস্থিতি: রক্তাক্ত অধ্যায়
নিহতের সংখ্যা: ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান হামলায় এ পর্যন্ত ৫০,৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪৯০ শিশু শুধুমাত্র গত ২০ দিনে মৃত্যুবরণ করেছে । সর্বশেষ হামলায় ৪২ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হয়েছেন ।
অবকাঠামো ধ্বংস: গাজার ৬০% ভবন ধ্বংস হয়েছে, এবং ৮৫% বাসিন্দা গৃহহীন ।
মানবিক সংকট: খাদ্য, জল, ও চিকিৎসাসামগ্রীর অভাবে গাজার হাসপাতালগুলো অচল। ডা. সাবরিনা দাসের বর্ণনায়, "আমরা সারারাত অস্ত্রোপচার করছি, কিন্তু উদ্ধারকারী দল ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না" ।
ঐতিহাসিক পটভূমি: দখলদারিত্বের শিকড়
১৯৪৮ সালের নাকবা: ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন ৭ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুতে পরিণত হন, যা আজও "আল-নাকবা" (বিপর্যয়) দিবস হিসেবে স্মরণ করা হয় ।
প্ল্যান ডি: ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়নের নেতৃত্বে হত্যা, ধর্ষণ, ও লুটের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের ভূমি থেকে উৎখাতের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় ।
২০২৩-এর আগ্রাসন: গাজাকে "মনুষ্যহীন ভূমি" হিসেবে চিহ্নিত করে ইসরায়েলি নেতারা ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণ উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা: নীরবতা ও দ্বিচারিতা
জাতিসংঘের ব্যর্থতা: গাজার ৬৯% ভবন ধ্বংসের পরও জাতিসংঘ শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে । এমনকি জরুরি স্বাস্থ্যকর্মী হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলের "ভুল" স্বীকারের পরও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি ।
মার্কিন সমর্থন: যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিচ্ছে, যা গাজার গণহত্যাকে ত্বরান্বিত করছে ।
আইনি লড়াই: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও বাস্তবায়ন হয়নি ।
বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ: বিবেকের আওয়াজ
বাংলাদেশের ভূমিকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা ধর্মঘট ও মানববন্ধনের মাধ্যমে সংহতি জানিয়েছেন।
গ্লোবাল বিক্ষোভ: যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, মরক্কো ও বাংলাদেশে "ফ্রি ফিলিস্তিন" স্লোগানে রাস্তা উত্তাল। ওয়াশিংটন ডিসিতে ৩০০ সংগঠনের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ হয়েছে ।
বয়কট আন্দোলন: ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে সমর্থন পাচ্ছে ।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: অন্ধকার নাকি আশার আলো?
ইসরায়েল সম্প্রতি গাজায় স্থল অভিযান বাড়িয়েছে এবং উত্তর-দক্ষিণ বিভক্তকারী "নেতজারিম করিডোর" দখল করেছে । প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, "এটি কেবল শুরু" । অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্টরা বিশ্বব্যাপী হরতালের ডাক দিয়েছেন, যা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে পালিত হচ্ছে ।
উপসংহার: ইতিহাসের বিচার
গাজার ট্র্যাজেডি কেবল একটি ভূখণ্ডের লড়াই নয়, এটি মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, ও আন্তর্জাতিক আইনের মর্যাদার লড়াই। ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও মার্কিন মদদে চ লা এই গণহত্যা ইতিহাসের পাতায় "রক্তের দাগ" হিসেবেই থাকবে।
রিপোর্ট: হাসান রেজা
আপনার কমেন্ট