শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫ - ০৯:৫০
"আদর্শ সমাজের দিকে" (ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম সম্পর্কিত আলোচনা সংকলন) পর্ব - ২  

নবী-রাসূলগণ বিশেষত হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিহি ওয়া সাল্লামের পর আল্লাহর বান্দাদের হিদায়াতের ধারা "ইমামত" এর মাধ্যমে অব্যাহত থাকে। পৃথিবী কখনোই আল্লাহর খলিফা (ইমাম) ছাড়া থাকেনা, যিনি মানবজাতির পথপ্রদর্শনের দায়িত্বে নিয়োজিত। কিন্তু প্রশ্ন জাগে: কুরআন ও সুন্নাহ থাকার পরও ইমামের প্রয়োজন কেন?  

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইমামের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণে বহু যুক্তি রয়েছে, তবে আমরা একটি সহজ ব্যাখ্যায় সীমাবদ্ধ থাকব:  

নবীর প্রয়োজনীয়তা যে যুক্তিতে প্রতিষ্ঠিত, ইমামের প্রয়োজনীয়তাও একই যুক্তিতে প্রমাণিত। কারণ একদিকে ইসলাম শেষ ও পরিপূর্ণ দ্বীন, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী। সুতরাং কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের সকল প্রয়োজন ইসলামই পূরণ করবে।  

অন্যদিকে, পবিত্র কুরআনে আল্লাহর বিধান ও জ্ঞানের মূলনীতিসমূহ বর্ণিত হয়েছে, আর এর ব্যাখ্যার দায়িত্ব নবীজির উপর ন্যস্ত করা হয়েছে [১]। কিন্তু নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহিহি ওয়া সাল্লাম তাঁর যুগের সমাজের প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী আয়াতসমূহের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তাই তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি প্রয়োজন, যারা তাঁর ন্যায় আল্লাহর অসীম জ্ঞানের সাথে সংযুক্ত থেকে যুগে যুগে মুসলিম উম্মাহর চাহিদা পূরণ করবেন।  

শিয়া-সুন্নি উভয় ঐক্যমতে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:  

«اِنّی تارِکٌ فیکُمُ الثَّقَلَینِ کِتابَ اللّهِ وَ عِتْرَتی؛ ما اِنْ تَمَسَّکْتُمْ بِهِما لَنْ تَضِلّوُا بَعْدی اَبَداً.»


"নিশ্চয় আমি তোমাদের মাঝে দুটি মহামূল্যবান বিষয় রেখে যাচ্ছি— আল্লাহর কিতাব ও আমার আহলে বাইত। যতদিন তোমরা এ দুটিকে আকঁড়ে ধরে থাকবে, ততদিন আমার পর কখনো পথভ্রষ্ট হবে না" [২]।  

এই হাদীস অনুসারে, কুরআনের পাশাপাশি নবীজির বংশধরদের উপস্থিতি অপরিহার্য। ইমামগণ আলাইহিমুস সালাম নবীজির উত্তরাধিকারী হিসেবে কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যাকারী ও সংরক্ষক। এভাবে তারা দ্বীনের বিকৃতি রোধ করেন, যাতে এই পবিত্র স্রোত কিয়ামত পর্যন্ত নির্মল থাকে।  

ইমাম হলেন পূর্ণাঙ্গ মানুষ, যিনি সকল মানবীয় গুণের মূর্ত প্রতীক। মানুষের এমন আদর্শের প্রয়োজন, যার হিদায়াতে তারা আত্মিক উৎকর্ষ লাভ করে নফসের অবাধ্যতা ও শয়তানের ফাঁদ থেকে মুক্ত থাকে।  

ইমাম সাদিক আলাইহিস সালাম বলেন:  

«إِنَّ اَلْأَرْضَ لاَ تَخْلُو إِلاَّ وَ فِیهَا إِمَامٌ کَیْمَا إِنْ زَادَ اَلْمُؤْمِنُونَ شَیْئاً رَدَّهُمْ وَ إِنْ نَقَصُوا شَیْئاً أَتَمَّهُ لَهُمْ».


"নিশ্চয় পৃথিবী কখনো ইমামবিহীন হয় না। যদি মুমিনরা দ্বীনে কিছু সংযোজন করতে চায়, তিনি তা প্রতিহত করেন। আর যদি বিয়োজন করে, তিনি তা পূর্ণ করেন" [৩]।  

উপর্যুক্ত আলোচনায় ইমামের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট। ইমামের প্রধান দায়িত্বসমূহ:  
- সমাজের নেতৃত্ব ও শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা  
- দ্বীনকে সংরক্ষণ ও কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান  
- মানবাত্মার পরিশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক পথনির্দেশ [৪]  

(চলবে...)  

পাদটীকা:
১. কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে: "আমি আপনাকে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষের জন্য যা নাযিল করা হয়েছে তা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন" (সূরা নাহল, আয়াত ৪৪)।  
২. বিহারুল আনোয়ার, খণ্ড ২, পৃ. ১০০।  
৩. আল-কাফী, খণ্ড ১, পৃ. ১৭৮।  
৪. উল্লেখ্য, নিষ্পাপ ইমাম কর্তৃক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সময় ও পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল। তবে অন্যান্য দায়িত্ব (যেমন দ্বীন সংরক্ষণ, আধ্যাত্মিক হিদায়াত) গায়েবী যুগেও অব্যাহত থাকে। ইমামের উপস্থিতির সুফল নিয়ে পরবর্তী আলোচনায় আসা হবে ইনশাআল্লাহ।  

গ্রন্থসূত্র:
"নগীন-এ-আফরীনেশ" (সৃষ্টির রত্ন) গ্রন্থ থেকে সংক্ষেপিত ও সম্পাদিত।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha