হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী,
লেখা: মোস্তফা আমিরি
মাহদবাদের ভবিষ্যতদর্শী ব্যাখ্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম ভীতিকর চিত্র হলো—ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশের পূর্ব মুহূর্তে পৃথিবীর অবস্থা। এই হাদীসগুলো পাঠ করলে অন্তর শঙ্কায় কেঁপে ওঠে, হৃদয় ডুবে যায় "ডুবে যাওয়া ব্যক্তির প্রার্থনায়"—যেমন যেন চারদিক থেকে নৈতিকতা ও সামাজিক অবক্ষয় ঘিরে ধরে, তখন একমাত্র মুক্তির আর্তি উচ্চারিত হয়।
এই প্রলয়ংকর হাদীসগুলো বর্ণনা করে:
-"ক্বায়েম (ইমাম মাহদী) আত্মপ্রকাশ করবেন না যতক্ষণ না মানুষদের মাঝে চরম ভয়, ত্রাস, ব্যাপক ভূমিকম্প, বিশৃঙ্খলা, মহামারী ও দুর্যোগ ছড়িয়ে পড়বে। মানুষ চরম বিভক্তি, ধর্মীয় বিভ্রান্তি এবং এমন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে যে সকালের মতো সন্ধ্যাতেও তারা মৃত্যু কামনা করবে—মানুষের পশুবৎ ও কুকুরসদৃশ আচরণের কারণে, যখন তারা একে অপরকে শিকার করবে।"
-এই সব ঘটনাবলী ইমাম মাহদীর মাধ্যমে সংঘটিত নয়; বরং এগুলো পৃথিবী শাসনকারী “শয়তানরূপী মানুষদের” (শায়াতীন আল-ইনস) দুর্নীতির ফল। এই ঘটনাগুলো একটি ভূমিকা, যা মানবতাকে একটি আধ্যাত্মিক মুক্তিদাতা ও নিখুঁত মানবের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধির জন্য প্রস্তুত করে।
-মনে হচ্ছে আমরা এখনো সেই অবস্থা থেকে অনেক দূরে আছি—এখনো যেন ঝড়ের পূর্বের নীরবতা চলছে…
শিয়া সূত্র থেকে উদ্ধৃতি:
“ক্বায়েম আত্মপ্রকাশ করবেন না যতক্ষণ না মানুষদের মধ্যে তীব্র ভয়, ভূমিকম্প, ফিতনা, মহামারী... ও ধর্মীয় বিভক্তি দেখা না দেয়, এবং মানুষ কুকুরের মতো বর্বর আচরণের কারণে মৃত্যুকামনায় লিপ্ত না হয়।”
আল-গায়বাহ, আল-নু'মানি, পৃ. ২৩৫, ২৫৪
মূল ধারণাসমূহের ব্যাখ্যা:
চরম ভয় ও দুর্যোগ: বিশ্বব্যাপী অনিরাপত্তা, যুদ্ধ ও সংকট।
ভূমিকম্প ও মহামারী: প্রাকৃতিক ও ঐশী সতর্কতা।
ধর্মীয় বিভক্তি: বিভ্রান্তি ও মতাদর্শগত বিভাজন।
হতাশা ও মৃত্যুকামনা: অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পতনের ফলে জন্ম নেওয়া বেঁচে থাকার অনীহা।
কুকুরসদৃশ আচরণ (কালাব আল-নাস): অমানবিক ও হিংস্র ব্যবহার—প্রতীকী অর্থে (শোষণ, জুলুম) অথবা বাস্তব অর্থে (যেন রেবিসে আক্রান্ত)।
ভাষাতাত্ত্বিক টীকা:
কলাব (كَلَب) অর্থ: হিংস্রতা, উন্মত্ততা, উগ্রতা—রাবিস রোগের মতো, যা মানুষের মধ্যেও সংক্রমিত হয়ে একে অপরকে ক্ষতি করতে উদ্বুদ্ধ করে।
“কালাব: পাগলামির মতো” (রিয়াদ আল-শাইখ)
“ব্যক্তির কলাব: তার অনিষ্ট ও হিংসা” (আল-সিহাহ)
“কলাব: ভাগ্যের আঘাতে সংঘটিত দুঃখ ও ধ্বংস” (আল-গায়বা)
আত্মপ্রকাশ-পূর্ব বিশ্বের চিত্র:
-বৈশ্বিক মহামারী
-আঞ্চলিক ও বিশ্বযুদ্ধ
-ধর্মীয় ও মতাদর্শগত বিশৃঙ্খলা
-নৈতিক পতন ও বিশ্বব্যাপী অবিচার
-মানবিকতার বিলোপ ও সংকটে পশুবৃত্তির উত্থান
-শয়তানসুলভ অভিজাতদের শাসন—যারা জুলুম, প্রতারণা, উপনিবেশবাদ ও শোষণের প্রতিচ্ছবি
অবশেষে, এই বৈশ্বিক বিপর্যয়ের পর মানুষ বিচার ও মুক্তির জন্য চিৎকার করে উঠবে—ঠিক তখনই তারা এক গভীর বোধে উপলব্ধি করবে এক ঐশী নেতার অপরিহার্যতা, এবং তখনই ইমাম মাহদীর (আ.) মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
আল্লাহ করুন, আমরা যেন সেই দিনের সাক্ষী হই।
তথ্যসূত্র:
1. আল-নু'মানি, আল-গায়বা, পৃ. ২৩৫ ও ২৫৪
2. আল-রাইশাহরি, ইমাম মাহদী বিশ্বকোষ, খণ্ড ৭, পৃ. ৩৮৪
3. আল-জাওহারি, আল-সিহাহ, খণ্ড ২, পৃ. ৩৮৭; আল-মজলিসি, বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫২, পৃ. ২৩১
4. আল-নু'মানি, আল-গায়বাহ, পৃ. ২৫৪
অনুবাদ: আম্মার সাবিল
আপনার কমেন্ট