হাওজা নিউজ এজেন্সি: ধর্মীয় গবেষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী হুজ্জাতুল ইসলাম হাবিব বাবায়ী বলেন, আহলে বাইত (আ.)-এর জীবনাদর্শ সকল শিয়া, মুসলিম তথা বিশ্বের সব সত্যান্বেষীর জন্য সর্বোত্তম ও পূর্ণাঙ্গ মডেল। ইমাম সাদিক (আ.)-এর যুগের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে আমরা তাঁর থেকে যে শিক্ষা পাই তা হলো—শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ ও প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তাঁর জ্ঞানভিত্তিক সংগ্রাম। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, মাসুম ইমামগণ (আ.) প্রতিটি সংশয়ের মুখোমুখি হয়েছেন বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিভিত্তিক সমাধান দিয়ে, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে নয়। তাই 'জিহাদে তাবইন'-এর ক্ষেত্রে আমাদের ইমাম সাদিক (আ.)-এর পদ্ধতির সূচকগুলো অনুসরণ করা আবশ্যক।
ইমাম সাদিক (আ.)-এর যুগে শিয়া চিন্তার বিজ্ঞানভিত্তিক ভিত সুদৃঢ়করণ:
তিনি যোগ করেন, ইমাম সাদিক (আ.)-এর ইমামতকালে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যেখানে তিনি অসংখ্য ক্লাস পরিচালনা করে হাজারো শিক্ষার্থী গড়ে তোলেন—যারা প্রত্যেকেই বিজ্ঞান ও চিন্তার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। এভাবে তিনি শিয়া চিন্তা ও আহলে বাইত (আ.)-এর মাদ্রাসার ভিত্তি সুদৃঢ় করেন এবং কুরআন-সুন্নাহর খাঁটি জ্ঞান ব্যাখ্যা করেন।
ইমাম সাদিক (আ.)-এর আলোচনা পদ্ধতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি নাস্তিক ও ভ্রান্ত চিন্তাধারার অনুসারীদের সাথেও—এমনকি মসজিদুল হারামে তাদের উপস্থিতিতেও—শান্তি ও যুক্তি দিয়ে আলোচনা করতেন। কখনই নিষেধ বা বর্জনের পথ বেছে নিতেন না। এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, আহলে বাইত (আ.)-এর পদ্ধতি ছিল ইতিবাচক ও যুক্তিনির্ভর।
জিহাদে তাবইন বাস্তবায়নে ইমাম সাদিক (আ.)-এর শিক্ষণীয় পদ্ধতি:
এই সাংস্কৃতিক বিশ্লেষক বর্তমান সময়ে জিহাদে তাবইনের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে বলেন, রাহবারে মুআজ্জাম (রহ.) বারংবার জিহাদে তাবইনের উপর জোর দিয়েছেন। ইমাম সাদিক (আ.)-এর জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনিও এই একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন—ব্যাখ্যা, সচেতনতা বৃদ্ধি, যুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক বিতর্ক।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, এই পদ্ধতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো ইমাম সাদিক (আ.)-এর ৪ হাজার শিষ্য। এদের মধ্যে সুন্নি ও অ-শিয়ারাও ছিলেন, যা প্রমাণ করে ইমাম (আ.) উদারতা ও প্রজ্ঞার সাথে সবার জন্য জ্ঞানের দরজা খুলে দিয়েছিলেন।
জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের সূচনা:
নার্গেস শুকরজাদেহ নামে একজন নারী হাওজা গবেষক বলেন, ইতিহাসে ইমাম সাদিক (আ.)-এর যুগ ছিল অনন্য। তিনি ইমাম জয়নুল আবিদিন (আ.) ও ইমাম বাকির (আ.)-এর সংগ্রামের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন। তাঁর যুগে হাদিস বর্ণনা ও শিষ্য সংখ্যার দিক থেকে বিপ্লব ঘটে, যা বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের ভিত্তি তৈরি করে!
ইমাম সাদিক (আ.)-এর কিছু সহচর প্রায় ৩০ হাজার হাদিস বর্ণনা করেছেন, যা রিজাল শাস্ত্রে সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে শিয়া আলেমরা সমাজের নতুন সমস্যার সমাধান দিতে পারছেন—এটা ইমাম সাদিক (আ.) ও তাঁর শিষ্যদের অবদান। আমাদের এই অমূল্য উত্তরাধিকার রক্ষা করতে হবে।
গর্বের জাফরি মক্তব:
এই গবেষক আরও বলেন, ইমাম সাদিক (আ.)-এর যুগে বিভিন্ন ইসলামি মাদ্রাসার উদ্ভব হয়েছিল। কিন্তু ইমাম (আ.) তাঁর বৈজ্ঞানিক সংগ্রাম ও হাজারো শিষ্য তৈরির মাধ্যমে শিয়াকে একটি স্বতন্ত্র পরিচয় ও মর্যাদা দেন। এজন্য আমরা জাফরি মাদ্রাসা ও আহলে বাইত (আ.)-এর শিক্ষায় গর্বিত। বর্তমান বিশ্বের সমস্যার সমাধান নিহিত আছে এই শিক্ষায়।
ইসলামি সভ্যতার প্রাণশক্তি:
ড. মাহদি ইসলামি, ইমাম সাদিক (আ.) রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ফ্যাকাল্টি সদস্য বলেন, ইতিহাসে ইমাম সাদিক (আ.)-এর বৈজ্ঞানিক আন্দোলন অতুলনীয়। তিনি রাজনৈতিক সুযোগ কাজে নিয়ে পিতা ইমাম বাকির (আ.)-এর আন্দোলনকে বেগবান করেন।
ইমাম (আ.) একটি বিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেখানে হিশাম বিন হাকাম, জাবির বিন হাইয়ানের মতো মেধাবীরা প্রশিক্ষিত হন। তিনি সব ভ্রান্ত চিন্তার মোকাবেলা করে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। তাঁর 'জিহাদে তাবইন' মানবজাতিকে সত্যের পথ দেখিয়েছে।
আপনার কমেন্ট