বৃহস্পতিবার ১ মে ২০২৫ - ২১:০৯
ইসলামের দৃষ্টিতে একজন শিক্ষকের নৈতিক বৈশিষ্ট্য

মহানবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: “আমি কেবল একজন শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি” — এর মধ্য দিয়ে তিনি এই পেশার গুরুত্ব স্পষ্ট করেছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ফাতেমিয়্যাহ ইলমিয়া স্কুল (মহাল্লাত)-এর শিক্ষিকা লতিফি বলেন, ইসলামী চিন্তাধারার আলোকে শিক্ষকতার মর্যাদা নবীদের (আ.) উচ্চ অবস্থান থেকে অনুপ্রাণিত। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: “আমি কেবল একজন শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি” — এর মধ্য দিয়ে তিনি এই পেশার গুরুত্ব স্পষ্ট করেছেন।

শিক্ষিকা লতিফি, শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে হাওজাহ নিউজ-এর আরাক প্রতিনিধি সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে একজন শিক্ষকের উচিত তাঁর মধ্যে একগুচ্ছ নৈতিক গুণাবলি গড়ে তোলা, যাতে তিনি যথাযথভাবে দিকনির্দেশনা ও চরিত্র গঠনের দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

তিনি বলেন, একজন শিক্ষককে এমন উপকারী জ্ঞান ধারণ করতে হবে, যা তাকওয়া ও আল্লাহ-ভীতির সঙ্গে যুক্ত। কুরআনে বলা হয়েছে: "আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে" (সূরা ফাতির: ২৮)।

লতিফি বলেন, সেই জ্ঞান যা আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করে না, তা উপকারী তো নয়ই, বরং বিভ্রান্তির হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষা হচ্ছে এক প্রকার ইবাদত, তাই শিক্ষককে তাঁর নিয়ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য খাঁটি রাখতে হবে। ইমাম সাদিক (আ.) বলেন:
"যে আল্লাহর জন্য শিক্ষা গ্রহণ করে এবং আল্লাহর জন্য শিক্ষা প্রদান করে, তাকে আসমানসমূহের রাজ্যে মহান হিসেবে সম্বোধন করা হয়"।
যে শিক্ষক দুনিয়াবি স্বার্থের জন্য শিক্ষা দেন, তিনি এই মহান মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হন।

তিনি ধৈর্য ও সহনশীলতার গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষকের উচিত শিক্ষার্থীদের ভিন্নতা মোকাবেলায় সহিষ্ণু হওয়া। কুরআনে নবী (সা.) সম্পর্কে বলা হয়েছে:
"আল্লাহর রহমতেই তুমি তাদের জন্য কোমল হলে" (সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)।
এই কোমলতা ও ধৈর্যশীলতা শিক্ষকদের জন্য আদর্শ।

লতিফি ন্যায়বিচার ও পক্ষপাতহীনতা শিক্ষকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, শিক্ষক যেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য না করেন এবং তাদের ভিন্নমত ও প্রতিভা স্বীকৃতি দেন। মহানবী (সা.) বলেছেন: "তোমরা তোমাদের সন্তানদের মধ্যে ন্যায়বিচার করো"।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকের উচিত নয় তাঁর জ্ঞানকে গর্বের কারণ বানানো। ইমাম সাজ্জাদ (আ.) ‘রিসালাতুল হুকূক’ নামক গ্রন্থে বলেন:
"তোমার ছাত্রের ওপর তোমার অধিকার হলো, তুমি যেন বুঝো যে আল্লাহ তোমাকে তাঁর জ্ঞানের আমানতদার বানিয়েছেন"।

এই ইসলামি শিক্ষিকা আরও বলেন, একজন শিক্ষকের অন্যান্য গুণাবলির মধ্যে রয়েছে: দয়া ও মমতা, শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং ব্যবহারিক আখলাক রক্ষা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসলামে শিক্ষকের নৈতিক বৈশিষ্ট্য হলো জ্ঞানগত উৎকর্ষ ও আত্মিক মহত্বের সমন্বয়। এক জন মুসলিম শিক্ষক হলেন একজন “আলিমে রব্বানী” এবং “আখলাকি মুরব্বি” — যিনি তাকওয়া, ন্যায় এবং দয়ার ওপর নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের শুধু জ্ঞানের পথেই নয়, বরং আল্লাহর নৈকট্যের পথেও পরিচালিত করতে সচেষ্ট থাকেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha