হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, কুম হাওজার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছিল হাজী শেখ আবদুল করিম হায়েরী (রহ.)-এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। এই পদক্ষেপ শুধু হাওজাহকে নতুন প্রাণই দেয়নি, বরং এক বিশাল জ্ঞান ও সংস্কৃতিক আন্দোলনের সূচনা করে।
কুম: শিয়া মতবাদের কেন্দ্র ও জ্ঞানের পীঠস্থান
হাওজার পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলেমিন সাইয়্যেদ হাবিবুল্লাহ মোসাভি এক সাক্ষাৎকারে হাওজাহ পুনর্জাগরণের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, কুম শহরটি ইতিহাসের এক প্রাচীন শিয়া কেন্দ্র, যার হাওজাহর ইতিহাস ১২০০ বছরেরও বেশি পুরনো। আশআরিয়ুনদের আগমন এবং কুমের হাদীস মাদ্রাসা, যা কুফা ও বাগদাদের মতোই শিয়াদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল, তা এই শহরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে।
তিনি বলেন, বিবি মাসুমা (সা.)-এর আগমন, শহরের ইমামজাদাগণ এবং ইমামদের হাদীসে কুম সম্পর্কে দেওয়া শুভসংবাদের ফলে কুম একটি ছোট কুফা, স্বর্গের আটটি দরজার মধ্যে তিনটি কুমে থাকবে এবং শেষ সময়ে কুম একটি বৈশ্বিক ইসলামি জ্ঞানের কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।
হাজী শেখ আবদুল করিম হায়েরী: রেজা খানের দমননীতির যুগে হাওজার পুনরুত্থানকারী
মোসাভি বলেন, সেলজুক যুগ, মঙ্গোল আক্রমণ বা বিশ্বযুদ্ধের সময় হাওজাহ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়লেও তার আলো নিভে যায়নি। সাফাভি যুগে কুম, ইসফাহান ও কাজভিনের পাশে এক উজ্জ্বল কেন্দ্র ছিল। ক্বাজার যুগে ফায়জিয়াহ ও দারুশ্শিফা দুইটি বড় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে আন্তর্জাতিক মাত্রায় উন্নতি প্রয়োজন ছিল, যা হাজী শেখ আবদুল করিম হায়েরীর সৌভাগ্য ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সম্ভব হয়। তিনি ইমাম রেজা (আ.)-এর যিয়ারতের পর কুমে ফিরে এসে সেখানকার মুজতাহিদদের (মুহাম্মদ ফাইজ কুমী, শেখ আবুল কাসেম কুমী, শেখ মোহাম্মদ তাকি বাাফকী প্রমুখ) আহ্বানে কুমে স্থায়ী হন এবং তার বরকতময় উদ্যোগেই হাওজাহর পুনরুজ্জীবন ঘটে।
হাওজার বৈপ্লবিক বৈজ্ঞানিক জাগরণ ও ইসলামী বিপ্লবের রাহবারদের গঠন
তিনি বলেন, এই আন্দোলনের ফলে অনেক বরেণ্য আলেম জন্ম নিয়েছেন, যেমন: আয়াতুল্লাহ আরাকি, গলপায়েগানি, মির্জা হাশেম আমেলি, শেহাবুদ্দিন মারআশি নাজাফি, আহমদ খোয়ানসারি এবং সর্বোপরি ইমাম খোমেইনি ও বর্তমান রাহবার আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ি। এরা সকলেই হাজী শেখ আবদুল করিম হায়েরী এবং তার পুত্র শেখ মরতজা হায়েরীর অনুপ্রেরণার ফল।
ফিকাহ, উসুল এবং অন্যান্য ইসলামী জ্ঞানে মৌলিক পরিবর্তন
তিনি বলেন, যদিও হাজী শেখের নেতৃত্বের সময় রেজা শাহের ধর্মবিরোধী কঠোরতার যুগ ছিল (যেমন: হিজাব নিষিদ্ধকরণ), তবুও তার প্রজ্ঞা, কঠোরতা ও সংকল্প হাওজাহকে দিনে দিনে আরো আলোকিত করে তোলে। এই রূপান্তরগুলোর মধ্যে রয়েছে: ফিকাহ ও উসুল নতুন চিন্তাধারা, কোরআন ও হাদীস গবেষণা, তাফসির, ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস, দর্শন, কালাম, আরফান, আইন, অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা, রাজনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রয়োজনীয় জ্ঞানচর্চা।
হাওজার অগ্রগতি আধুনিক প্রযুক্তিতে
তিনি বলেন, আজকের হাওজা আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। টিভি, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট চ্যানেল এবং উপগ্রহভিত্তিক ‘বেলায়াত’ নেটওয়ার্কগুলোর মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে ইসলামী শিক্ষা পৌঁছে দিচ্ছে। তদুপরি, স্টেম সেল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও গবেষণা চলছে।
শেষে তিনি বলেন, কুম হাওজা শুধু একটি আদর্শ শহর গঠনের চিন্তা করছে না, বরং একটি ন্যায়ের বিশ্ব গঠনের স্বপ্ন দেখছে, যা ইমাম মাহদী (আ.)-এর জাহির হওয়ার প্রস্তুতির একটি অংশ।
আপনার কমেন্ট