মঙ্গলবার ৬ মে ২০২৫ - ০৮:৫১
হাওজায়ে ইলমিয়া জনগণকে আল্লাহর দিকে পরিচালনায় মূখ্য ভূমিকা রাখে

হুজ্জাতুল ইসলাম কাহরমানপুর বলেছেন, “হাওজায়ে ইলমিয়া ধর্ম ও আধুনিক জীবনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং আধুনিক জীবনের নবজাত সমস্যাগুলোর ধর্মীয় সমাধান খুঁজে বের করতে সচেষ্ট রয়েছে।”

হাওজা নিউজ এজেন্সি: হাওজায়ে ইলমিয়ার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ১০০তম বার্ষিকী উপলক্ষে হাওজা নিউজ এজেন্সির সাথে সাক্ষাৎকারে আরদাবিল প্রদেশের হাওজায়ে ইলমিয়ার ‘আমিন’ প্রকল্পের দায়িত্বশীল হুজ্জাতুল ইসলাম কাহরমানপুর বলেন, “হাওজায়ে ইলমিয়া জনগণকে আল্লাহর ধর্ম ও সমাজের দিকে পরিচালনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। হাওজায়ে ইলমিয়ার দায়িত্ব হলো ইসলামী জ্ঞান যেমন ফিকহ, উসুল, কুরআনের তাফসীর, হাদিস ও কালাম সংরক্ষণ, ব্যাখ্যা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এমন আলেম ও মুজতাহিদ তৈরি করে যারা জনগণকে সঠিক পথ দেখান এবং ধর্মীয় প্রশ্নের উত্তর দেন। হাওজার আলেমগণ কুরআন, সুন্নাহ ও ইজতিহাদের মূলনীতির মাধ্যমে সময় ও স্থানের প্রেক্ষাপটে শরীয়তের বিধান উদ্ঘাটন করেন।” 

তিনি যোগ করেন, “হাওজায়ে ইলমিয়া ধর্ম ও আধুনিক জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে আধুনিক যুগের নতুন সমস্যাগুলোর ধর্মীয় সমাধান অনুসন্ধান করছে।” 

আরদাবিলের ‘আমিন’ প্রকল্পের এই দায়িত্বশীল হাওজার শিক্ষা ব্যবস্থার অবদান সম্পর্কে বলেন, “বিশ্ব ইসলামের শিক্ষা ও গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে হাওজায়ে ইলমিয়া জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে ফিকহ, উসুল, তাফসীর, হাদিস ও ইসলামী কালামের উন্নয়নে উদ্ভাবনী ইজতিহাদী পদ্ধতি, দর্শন ও যুক্তিবিদ্যায় গ্রিক চিন্তাধারা ও ইসলামী শিক্ষার সমন্বয়, এবং ‘হিকমাতুল মুতাআলিয়া’ মতবাদের বিকাশে হাওজার অবদান অনস্বীকার্য।” 

তিনি উল্লেখ করেন, “প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি যেমন—খাওয়ারিজমী ও ওমর খায়্যামের গণিত, আল-বেরুনী ও নাসিরুদ্দিন তুসীর জ্যোতির্বিদ্যা, রাযীর চিকিৎসাবিদ্যা এবং মানবিক বিজ্ঞানে সাহিত্য, ইতিহাস ও নৈতিকতার বিকাশে হাওজার ভূমিকা ঐতিহাসিক।” 

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আধুনিক যুগে হাওজায়ে ইলমিয়া ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি আন্তঃশাস্ত্রীয় গবেষণা ও সমাজের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছে।” 

গত ১০০ বছরে হাওজায়ে ইলমিয়ার প্রধান সাফল্য সম্পর্কে হুজ্জাতুল ইসলাম কাহরমানপুর বলেন, “সংক্ষেপে বলতে গেলে— 

১. আয়াতুল্লাহ হায়েরি ইয়াযদী কর্তৃক কোম হাওজার প্রতিষ্ঠা, 

২. ইমাম খোমেনী (রহ.), আল্লামা তাবাতাবাঈ ও শহীদ মোতাহহারীর নেতৃত্বে ইসলামী দর্শনের পুনর্জাগরণ ও নতুন দার্শনিক ধারার সূচনা, 

৩. আয়াতুল্লাহ ব্রুজার্দী, ইমাম খোমেনী ও আয়াতুল্লাহ খু’য়ী কর্তৃক ফিকহ ও উসুলের উন্নয়ন, 

৪. ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর নেতৃত্বে আধুনিক যুগে ইসলামী শাসনের মডেল হিসেবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, 

৫. ‘আল-মীযান’ ও ‘মিন ওয়াহয়িল কুরআন’-এর মতো সমসাময়িক সমস্যা-ভিত্তিক তাফসীর রচনা, 

৬. হাওজা-বিশ্ববিদ্যালয়ের সংযোগ ও বাকিরুল উলুম, আল-মুস্তাফা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, 

৭. আধুনিক চিন্তাধারার বিরুদ্ধে ইসলামী কালাম শক্তিশালীকরণে হাওজার ভূমিকা।” 

হাওজার সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক সাফল্য সম্পর্কে তিনি বলেন, “হাওজায়ে ইলমিয়া সাংস্কৃতিকভাবে আলেম, ধর্মপ্রচারক ও ইসলামী সাহিত্য রচনায়, সামাজিকভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায়, এবং শিক্ষাগতভাবে ফিকহ, দর্শন, কালাম ও তাফসীরে গবেষণা ও আন্তঃশাস্ত্রীয় অধ্যয়ন প্রসারে অসামান্য অবদান রেখেছে।” 

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha