হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ আরাফী বৃহস্পতিবার কোমের দারুশ শিফা উচ্চতর মাদ্রাসায় “হাওজায়ে ইলমিয়া কোম: ইসলামি বিপ্লব ও প্রতিরোধ” শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। কোম হাওজার পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পাশাপাশি এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, “এই সম্মেলন কোম হাওজা এবং বিশ্বব্যাপী শিয়া হাওজা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন দায়িত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করেছে।”
হাওজার সপ্তম যুগের সূচনা:
হাওজা ব্যবস্থাপক নেতার ম্যানিফেস্টো সম্পর্কে বলেন, “এই দলিল হাওজার ইতিহাসে সপ্তম পর্যায়ের সূচনা করেছে, যার জন্য হাওজার বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রায়োগিক সক্ষমতা বৃদ্ধির একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।”
হাওজার উচ্চপরিষদের সদস্য উল্লেখ করেন যে, হাওজায়ে ইলমিয়া কোম শুরু থেকে ১৪শ শতাব্দী পর্যন্ত ছয়টি ঐতিহাসিক পর্যায় অতিক্রম করেছে। তিনি বলেন, “বর্তমানে সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশনায় সপ্তম পর্যায় শুরু হয়েছে, যার জন্য একটি ব্যাপক রোডম্যাপ প্রয়োজন।”
ধর্মীয় চিন্তার প্রাসঙ্গিকতা:
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “চিন্তা ও সমাজে ধর্মের প্রভাবের জন্য শক্তিশালী ভিত্তি প্রয়োজন। হাওজা যদি প্রয়োজনীয় বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি ও যৌক্তিক কাঠামো তৈরি করতে ব্যর্থ হয়, তবে ধর্মকে প্রান্তিক করে দেওয়া হবে।”
হাওজার অনন্য ভূমিকা:
আয়াতুল্লাহ আরাফী হাওজাকে ধর্মীয় তত্ত্ব প্রণয়নের একমাত্র সক্ষম প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করে বলেন, “ইমাম খোমেইনি (রহ.) বিপ্লবের স্থপতি হওয়ার আগে ছিলেন বিপ্লবী চিন্তার স্থপতি। এই বুদ্ধিবৃত্তিক কাঠামো ইসলামী যুক্তিবাদ থেকে উৎসারিত এবং হাওজাই এর একমাত্র রক্ষক।”
হাওজার পাঁচটি মৌলিক দায়িত্ব:
তিনি নেতার ম্যানিফেস্টোর পাঁচটি মূল স্তম্ভ তুলে ধরেন:
১. জ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান
২. ধর্মীয় নেতৃত্ব
৩. সামনের কাতারে জিহাদী চেতনা
৪. সামাজিক পরিবর্তন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠন
৫. সভ্যতাগত উদ্ভাবন
তিনি বলেন, “এই কাঠামো ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনার জন্য মৌলিক ধর্মীয় চিন্তা বিকাশের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।”
দ্বৈত চ্যালেঞ্জ:
তিনি স্পষ্ট করেন, “হাওজাকে একদিকে ধর্মীয় যুক্তিবাদ শক্তিশালী করতে হবে, অন্যদিকে সমাজে জিহাদী চেতনা ও কর্মোদ্দীপনা সৃষ্টি করতে হবে।”
বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া:
আয়াতুল্লাহ আরাফী জানান, “নেতার ম্যানিফেস্টো বাস্তবায়নের জন্য বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, “এই দলিলের মূল বিষয়গুলো হাওজার দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হবে।”
আধুনিক সমাজে ধর্মের ভূমিকা:
তিনি বলেন, “সমসাময়িক বিশ্বে ধর্মের কৌশলগত প্রভাবের জন্য শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি অপরিহার্য। আমাদের একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ প্রয়োজন।”
বিশ্ববিদ্যালয় বনাম হাওজা:
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় ও বুদ্ধিজীবীদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ হলেও ধর্মীয় তত্ত্ব প্রণয়নের মূল দায়িত্ব হাওজার। আমাদের সমাজে সঠিক চেতনা সৃষ্টি ও তার প্রসার নিশ্চিত করতে হবে।”
সম্মেলনের অন্যান্য আয়োজন:
কোম হাওজার পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে “হাওজা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গন" শীর্ষক সেমিনার ইমাম কাজিম (আ.) মাদ্রাসায় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
আপনার কমেন্ট