রবিবার ১১ মে ২০২৫ - ১১:৫৩
পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তন: ইরান ও আরবদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিতে মার্কিন ষড়যন্ত্র

পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তনের প্রচেষ্টা কেবল একটি ভৌগলিক নামের বিকৃতি নয়, বরং এটি ইরানিদের গভীর ঐতিহাসিক স্মৃতি, জাতীয় পরিচয় এবং সাংস্কৃতিক ঐক্যের ওপর হামলার নামান্তর। পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তনের অপচেষ্টার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেবল আরব-ইরানের মধ্যে বিরোধ উসকে দেয়ার চেষ্টা করছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তনের দাবি তাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতারই প্রতিচ্ছবি, যা মুসলিম দেশগুলোর মাঝে বিভাজন সৃষ্টির অপচেষ্টার অংশ।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক

পারস্য উপসাগর কেবল একটি কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিক জলপথ নয়, বরং হাজার বছরের পুরনো একটি নাম যা বিশ্বের মানচিত্র, ঐতিহাসিক দলিল এবং প্রামাণ্য উৎসে “Persian Gulf” নামে নিবন্ধিত। এটি ইরানিদের জন্য—কুর্দ, বালুচ, তুর্ক, লুর, ফারস এবং দক্ষিণের আরবদের জন্য—একটি সম্মিলিত ঐতিহ্য ও জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক।

যখনই এই নাম বিকৃতির চেষ্টা হয়েছে, তখনই ইরানিরা  ঐক্যবদ্দ হয়ে ঐতিহাসিক সত্য রক্ষায় সোচ্চার হয়েছে। আজকের তথাকথিত “রিভিশনিস্ট” বিশ্বে এই নাম রক্ষা কেবল দেশপ্রেমের বিষয় নয়, বরং একটি বৃহত্তর সত্য ও ইতিহাস রক্ষার লড়াই।

মার্কিন ষড়যন্ত্র ও বিভাজনের প্রচেষ্টা
ইরানের সাংসদ সদস্য ও সুন্নি আলেম মাওলানা আবদুর রহমান আরাফি মেহর নিউজকে বলেন,

“ইমাম খোমেনি যেমন বলেছিলেন, আমেরিকা হচ্ছে ‘বড় শয়তান’। তারা বহুদিন ধরেই মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এখন ‘পারস্য উপসাগর’ এর নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে আরব ও অনারব মুসলমানদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করছে।”

তিনি আরও বলেন, “পারস্য উপসাগর নামটি হাজার বছরের পুরনো এবং ইরানি জনগণের হৃদয়ে গেঁথে আছে। তারা এর কোনো বিকৃতি কখনও মেনে নেবে না।”

অবিবেচনাপ্রসূত ও অকার্যকর পদক্ষেপ
ইরানশহরের ফাতিমাতুয যাহরা মসজিদের সুন্নি ইমাম মাওলানা আব্দুস সামাদ করিমযায়ী বলেন, “ফার্স (পারস্য) উপসাগরের নাম সাসানীয় যুগ থেকে বহির্বিশ্বে এই নামেই পরিচিত। এর কোনো বিকল্প নেই। ‘আরব উপসাগর’ নামের পেছনে কোনো ঐতিহাসিক বা প্রামাণ্য ভিত্তি নেই।”

তিনি একে একটি “অবিবেচনাপ্রসূত ও বেআইনি” কাজ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এটি ইরানি জনগণের আবেগ নিয়ে খেলা এবং এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়।”

তিনি আরও যোগ করেন, “এটি এক ধরনের অজ্ঞতা ও মারাত্মক ভুলের ফসল। ইতিহাস ও বাস্তবতা উপেক্ষা করে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক সম্পর্ককে আরও দুর্বল করবে।”

উল্লেখ্য যে, বিগত বছরগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চলে বিভাজন সৃষ্টির অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। ইয়েমেনে পরাজয়ের পর ট্রাম্প প্রশাসনের মতো শক্তি এই ব্যর্থতা ঢাকতে ঐতিহাসিক পরিচয় পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন শত্রুতা উসকে দিতে চাইছে। কিন্তু ইতিহাস, জনগণের ঐক্য এবং ঐতিহ্যের শক্তি এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha