হাওজা নিউজ এজেন্সি: রামশির পৌরসভার তিনজন পরিশ্রমী কর্মীর স্যুয়ারেজের গভীর চাহে (কূপ) আটকে যাওয়ার ঘটনাটি রাতটিকে পরিণত করে এক আত্মত্যাগ ও বিষাদের রাত হিসেবে।
ঘটনার বর্ণনায় রামশির ইসলামিক তাবলীগ দপ্তরের প্রধান, হুজ্জাতুল ইসলাম মোহাম্মদ মানসুরি বলেন, “দোয়ায়ে কোমাইলের মাহফিল শেষ হওয়ার পর, আমাদের এক সাথী বাইরে যান এবং কিছুক্ষণ পর উদ্বিগ্ন কণ্ঠে ফোন করে জানান যে, পৌরসভার কয়েকজন কর্মীসহ আমাদের ধর্মীয় সংগঠনের সভাপতি হুজ্জাতুল ইসলাম মুসা সোভাইতি স্যুয়ারেজের চাহে (কূপে) কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।”
ঘটনাটি কাছাকাছি একটি রাস্তায় ঘটে। মুসা সোভাইতি নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা হিসেবে জনগণের অভিযোগ শুনে ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু বিষাক্ত গ্যাসে পরিপূর্ণ সেই গভীর কূপটি এক মারাত্মক ফাঁদে পরিণত হয়।
হুজ্জাতুল ইসলাম মানসুরি ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেখানে জড়ো হওয়া জনতা, ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রাণপণ চেষ্টা—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত সংকটজনক। বিষাক্ত গ্যাস ও অক্সিজেনের অভাব উদ্ধারকাজকে করে তোলে কঠিন।
তিনি বলেন, “দেখলাম সব চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেই নামব। প্রথমে একজনকে উদ্ধার করলাম। এরপর আবার নামলাম দ্বিতীয়জনকে তুলতে... এরপর আর কিছু মনে নেই।”
মুহূর্ত কয়েক পর ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী আরেকজনকে তুলতে সক্ষম হন, তবে নিজেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তখন মানসুরি সাহস করে নিজেই নিরাপত্তা দড়ি বেঁধে নামেন। একজনকে মুখে করে কূপের কিনারে আনেন এবং মুসা সোভাইতির জন্য পুনরায় নামেন।
তিনি বলেন, “দেখি সোভাইতি সাহেব গলা পর্যন্ত পানিতে। আহলে বাইতের তাওয়াসুল নিয়ে তাঁকে দড়ি বেঁধে উপরে পাঠাই।”
কিন্তু তিনি নিজেও বিষাক্ত গ্যাসে অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর একে একে আরেকজন আলেম, একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী এবং এক সাংস্কৃতিক কর্মী তাঁর জীবন বাঁচাতে নামেন এবং তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।
তবে দুঃখজনকভাবে, মুসা সোভাইতি হাসপাতালে নেওয়ার পথেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাকি দু’জন আহত ব্যক্তি চিকিৎসা শেষে সুস্থ হন।
মুসা সোভাইতি ছিলেন জনগণের হৃদয়ের মানুষ—নীরবে, বিনা কৃতিত্বের দাবিতে তিনি রামশিরের সংস্কৃতি ও সমাজ উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। আর হুজ্জাতুল ইসলাম মানসুরি, নিজের জীবন বাজি রেখে, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
এই ঘটনা নিছক একটি দুর্ঘটনার গল্প নয়; এটি হলো মানবতা, বিশ্বাস ও দায়িত্বশীলতার এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি—যেখানে আলেমেরা শুধু ভাষণে নয়, কাজে প্রমাণ করেন যে তারা মানুষের পাশে, জীবনের প্রতিটি সংকটে।
আপনার কমেন্ট