হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক সম্মেলন "শহীদ-ই-জুমহুর ও কুরআনিক শিক্ষার ভিত্তিতে নব-ইসলামী ইরানি সভ্যতা গঠনের প্রেক্ষাপট" উপলক্ষে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, একটি সভ্যতা কেবল বাহ্যিক রূপ নয়, বরং একটি গভীর চিন্তাধারা ও মানসিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। সভ্যতার বাহ্যিক রূপ যেমন প্রযুক্তি, স্থাপত্য বা শিল্প হতে পারে, কিন্তু এর অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু হলো চিন্তা-চেতনা ও মূল্যবোধ, যা সেই সভ্যতার মূল পরিচয় নির্ধারণ করে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সভ্যতার বাহ্যিক রূপ একই রকম হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত পার্থক্য তৈরি করে তাদের অন্তর্নিহিত সংস্কৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গি। শহীদ রাইসির চিন্তা ও কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি একটি নব-ইসলামী সভ্যতার চিন্তা ও রূপায়ণের প্রতি সম্পূর্ণরূপে দায়বদ্ধ ছিলেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতেন।
কোম হাওযা ইলমিয়ার শিক্ষক পরিষদের সদস্য হিসেবে আয়াতুল্লাহ রাজাবী বলেন, শহীদ রাইসির মূল উদ্বেগ ছিল ইসলামি সংস্কৃতির বাস্তবায়ন। তিনি সর্বদা চিন্তিত ছিলেন, কীভাবে সমাজে ইসলামি মূল্যবোধ বাস্তবায়ন করা যায়। কারণ ইসলাম শুরু থেকেই একটি সভ্যতা গঠনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছে। পবিত্র কুরআনের আয়াতে এসেছে:
“هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ ٱلْمُشْرِكُونَ” —
অর্থাৎ, আল্লাহ তাঁর রাসুলকে সত্যের ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন যাতে এটি সকল মতাদর্শের ওপর বিজয়ী হয়, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।
তিনি বলেন, ইসলাম বরাবরই একটি ঐশী সভ্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এসেছে। এই সভ্যতা গঠনের জন্য আল্লাহ নবী প্রেরণ করেছেন, আর সেই পথের বিরোধিতাকারীরাও স্বভাবতই ইসলামি সভ্যতার প্রসারে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
হাওযা-ই-ইলমিয়ার উচ্চ পরিষদের এই সদস্য বলেন, এ কাজের দায়িত্ব ইসলামি রাষ্ট্র ও এর দায়িত্বশীলদের উপর বর্তায়। তাদের উচিত সমাজকে নব-ইসলামী সভ্যতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। শহীদ রাইসি ছিলেন এমন একজন নেতা যিনি হৃদয় থেকে ইসলামি সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, শহীদ রাইসি ছিলেন একজন জনগণের নেতা, যিনি জনগণের মধ্য থেকে উঠে এসেছিলেন, জনগণের সঙ্গে ছিলেন এবং জনগণের জন্য কাজ করেছেন। দারিদ্র্যপীড়িতদের সেবা তাঁর অগ্রাধিকার ছিল এবং এটি ইসলামী সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য, কারণ এই সভ্যতা জনগণ-ভিত্তিক এবং একইসঙ্গে আল্লাহ-কেন্দ্রিক।
তিনি বলেন, শহীদ রাইসির দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান এবং প্রকৃত সংস্কারের প্রতি অঙ্গীকারও ইসলামী সংস্কৃতির মূল অংশ, যা কুরআনে বারবার গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করা হয়েছে। বিচার বিভাগের প্রধান হোক বা রাষ্ট্রপতি হিসেবে, তিনি সর্বদা দুর্নীতি দমনে ও সমাজ সংস্কারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
সারাংশে, শহীদ রায়সির সমস্ত কর্মকাণ্ড অভ্যন্তরীণ দৃষ্টিকোণ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি সভ্যতা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ছিল — যা ওলায়েত-মাদারি ও কুরআনিক চিন্তাধারার সঙ্গে গভীরভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আপনার কমেন্ট