বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫ - ১১:০১
কেন মহান আল্লাহ আমাদের কাছ থেকে আয়াতুল্লাহ রাইসিকে নিয়ে গেলেন?

আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসির শাহাদাত বহুমাত্রিক তাৎপর্য বহন করে। এটি ছিল আল্লাহর বিধিলিপির সঙ্গে এক বিশেষ মিলন, জাতির জন্য একটি পরীক্ষা, এবং সেবার এক চিরন্তন উত্তরাধিকার শুরু।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানের জনদরদী রাষ্ট্রপতি আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসির শাহাদাত বহুমাত্রিক তাৎপর্য বহন করে। এটি ছিল আল্লাহর বিধিলিপির সঙ্গে এক বিশেষ মিলন, জাতির জন্য একটি পরীক্ষা, এবং সেবার এক চিরন্তন উত্তরাধিকার শুরু। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য আমরা নৈতিক প্রশ্ন ও সন্দেহের বিশেষজ্ঞ হুজ্জাতুল ইসলাম রেজা পারচেহবাফ-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছি যাতে এই মর্মান্তিক ঘটনার গভীর উপলব্ধি ও প্রজ্ঞা জাতির সামনে তুলে ধরা যায়।

প্রশ্ন:
“কেন মহান আল্লাহ, আয়াতুল্লাহ রাইসিকে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গেলেন?”
এই জনবান্ধব ব্যক্তিত্ব যিনি সবসময় জনগণের পাশে ছিলেন এবং একজন প্রকৃত সেবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন—তাঁকে আল্লাহ কেন নিয়ে গেলেন? এর পেছনে কী হিকমত বা প্রজ্ঞা আছে?

উত্তর:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহ কুরআনে বলেন:
“وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَن یَشَاءَ اللَّـهُ”
(সূরা ইনসান, আয়াত ৩০)
“তোমরা কিছুই চাইতে পারো না, যদি না আল্লাহ চান।”

আরও বলেন:
“کُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ”
(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫)
“প্রত্যেক প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।”

এই আয়াতসমূহ প্রমাণ করে যে, প্রতিটি মানুষের মৃত্যু নির্ধারিত সময় ও স্থানে ঘটে এবং আল্লাহর এক বিশেষ হিকমতের অধীনে ঘটে-যা আমরা সবসময় পুরোপুরি বুঝতে পারি না। শহীদ রাইসির শাহাদাতও এই বিধিলিপির অন্তর্ভুক্ত।

শহীদ হওয়া: ইবাদতের সর্বোচ্চ শিখর ও আল্লাহর পুরস্কার

ইসলামি বর্ণনায় বলা হয়, মানুষের সেবা ও আল্লাহর মূল্যবোধ রক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের মর্যাদা সর্বোচ্চ। মহানবী (সা.) বলেছেন:
“শহীদ তাঁর পরিবার থেকে সত্তর জনকে সুপারিশ করতে পারবেন” (বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৯৭, পৃষ্ঠা ১০)।

শহীদ রাইসি, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও জনসেবার পথে অগ্রসর ছিলেন, সেই উচ্চতর শহীদির মর্যাদা লাভ করেন। তাঁর এই শাহাদাত শেষ নয় বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রেরণাদানের এক চিরন্তন সূচনা।

ইরানি জাতির জন্য এক আল্লাহর পরীক্ষা

আল্লাহ বলেন:
“وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَیْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ... وَبَشِّرِ الصَّابِرِینَ”
(সূরা বাকারাহ, আয়াত ১৫৫)
“আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও প্রাণের ক্ষয় এবং ফল-ফসলের ঘাটতির মাধ্যমে। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।”

শহীদ রাইসির শাহাদাত ছিল ইরানি জাতির জন্য একটি বড় পরীক্ষা-এই দেখে নেওয়ার যে, তারা বিপদে কীভাবে ঐক্য ও আস্থার সঙ্গে টিকে থাকে। তাঁর জানাজা ও শ্রদ্ধাঞ্জলিতে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা প্রমাণ করে যে, জাতি এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

শত্রুর ষড়যন্ত্র ও তাদের ব্যর্থতা

শত্রুরা শহীদ রাইসির দক্ষতা ও জনপ্রিয়তাকে সহ্য করতে পারেনি। কুরআনে বলা হয়েছে:
“وَإِذْ یَمْكُرُ بِكَ الَّذِینَ كَفَرُوا...”
(সূরা আনফাল, আয়াত ৩০)
“যখন কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল-তোমাকে বন্দি করতে, হত্যা করতে বা বের করে দিতে।”

তবে আল্লাহর ইচ্ছাই সর্বেসর্বা। শত্রুরা যতই চক্রান্ত করুক, চূড়ান্ত পরিণতি আল্লাহর হাতে। শহীদ রাইসির শাহাদাত শোকাবহ হলেও, তাঁর সেবা ও সংগ্রাম আরও বেশি পরিচিত হলো এবং তিনি আদর্শ হিসেবে থেকে গেলেন।

শহীদ রাইসির পথচলা অব্যাহত থাকবে

একজন ডকুমেন্টারি নির্মাতা, যিনি তাঁর সফরে সঙ্গে ছিলেন, বলেন:
“শহীদ রাইসি বলতেন, ‘ইরানের পতাকা সবসময় উঁচু থাকতে হবে।’ তিনি কখনো শত্রুর সামনে মাথা নত করেননি।”

এই জিহাদি ও জনমুখী মনোভাব তাঁকে মৃত্যুর পরেও প্রতিরোধ ও সেবার প্রতীক বানিয়েছে। তাঁর জীবনভিত্তিক ডকুমেন্টারি যেমন “রাহে রাজা” ও “মুহাফেজ” এই সত্যের সাক্ষ্য বহন করে।

উপসংহার

শহীদ রাইসির শাহাদাত, যদিও ইরানি জাতির জন্য গভীর বেদনার, তবুও এতে রয়েছে একাধিক আল্লাহর বার্তা ও সামাজিক শিক্ষা:
১. আল্লাহর হিকমতের আলোকে বিধিলিপি।
২. মানুষের সেবায় নিবেদিত একজনের জন্য শহীদির মহাপুরস্কার।
৩. জাতির জন্য একটি ঈমানি পরীক্ষা।
৪. শত্রুর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়া।
৫. ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি অনুকরণীয় আদর্শ সৃষ্টি হওয়া।

মর্যাদাপূর্ণ ভাষায় বলা যায়, আয়াতুল্লাহ রাইসি ছিলেন একজন “সত্যনিষ্ঠ সেবক” যিনি কর্তব্যরত অবস্থায় আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছেছেন। এই শাহাদাত তাঁর পথের সমাপ্তি নয়, বরং সেবা ও ন্যায়ের পথের এক দীপ্তিময় সূচনা।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha