রবিবার ১৮ মে ২০২৫ - ০৮:০৬
করাচির আল-মোস্তাফার পরিচালিকার দৃষ্টিতে কোমের হাওজার সফলতার রহস্য

পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থিত বিশ্বখ্যাত ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নারী শাখার পরিচালক ড. সৈয়দা তাসনিম যাহরা মুসাভী হাওজা নিউজকে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে কোমের হাওজা শিক্ষাব্যবস্থার সাফল্যের গোপন রহস্য এবং ইসলামি শিক্ষার ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ড. সৈয়দা তাসনিম যাহরা মুসাভী হাওজা নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের কোমের হাওজার স্বাধীন ও সুসংহত শিক্ষা পরিবেশকে তালিবে ইলমদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি এই পবিত্র শিক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের পূর্বে লক্ষ্যনির্ধারণ ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। 

ব্যক্তিগত পরিচিতি ও শিক্ষাজীবন
তিনি পাকিস্তানের গিলগিত-বালতিস্তানের মেহদীআবাদ এলাকায় এক ধর্মনিষ্ঠ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামহ আয়াতুল্লাহ শেখ হাসান মেহদীআবাদি “মুহাম্মদিয়া ট্রাস্ট”–এর প্রতিষ্ঠাতা ও বালতিস্তানে ইসলামী শিক্ষার পথিকৃৎ ছিলেন। তার পিতা ড. সাঈদ আব্বাস মুসাভী, জামিয়াতুল মুস্তাফা থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে ঐ ট্রাস্টের পরিচালনায় রয়েছেন।

ড. যাহরা মুসাভী নিজেও কোমের জামিয়াতুল মুস্তফা থেকে “ফিকহ ও উসূল” এবং “ফিকহ ও পরিবার” বিষয়ে দুইটি মাস্টার্স ডিগ্রি এবং পরবর্তীতে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় ও জামিয়াতুল মুস্তফা থেকে যৌথভাবে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০১৭ সাল থেকে করাচিতে নারী শাখার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ইতিমধ্যে সাতটি গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

হাওজায়ে ইলমিয়া কোমের সফলতার পেছনের কারণ
ড. যাহরা মুসাভীর মতে, কোমের হাওজার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো “স্বাধীনতা, শৃঙ্খলা এবং সহায়ক পরিবেশ।” তবে ছাত্র-ছাত্রীর ব্যক্তিগত লক্ষ্য ও প্রস্তুতি সাফল্যের পূর্বশর্ত। তিনি বলেন, “যদি কারো মধ্যে উদ্দেশ্য স্পষ্ট না থাকে এবং সে বাইরের প্রলোভনে (যেমন মোবাইল, বিনোদন ইত্যাদি) নিমগ্ন হয়, তবে সে পথচ্যুত হবে।”

পাকিস্তানি ছাত্রীদের জন্য সুপারিশ
তিনি বলেন, “যেসব ছাত্রী কখনো স্বতন্ত্রভাবে বসবাস করেনি, তাদের সরাসরি ইরানে পাঠানো উচিত নয়। বরং, অন্তত এক-দুই বছর স্থানীয় মাদরাসায় পড়াশোনা করে মানসিক ও আত্মিকভাবে প্রস্তুত হওয়া উচিত।”

করাচির নারী শাখায় একাডেমিক ও নৈতিক কাঠামো
বর্তমানে প্রায় ২২৮ জন ছাত্রী এই শাখায় অধ্যয়নরত। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত একাডেমিক ক্লাস, দুপুরে নামাজ ও খাবার, তারপর নির্ধারিত বিশ্রাম, বিকেলে অধ্যয়ন এবং সন্ধ্যায় ব্যক্তিগত সময় ও ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। মোবাইল ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে—শুধুমাত্র সপ্তাহে দুই দিন সীমিতভাবে অনুমতি দেওয়া হয়। এই কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা শিক্ষার্থীদের উচ্চতর পর্যায়ে সাফল্য নিশ্চিত করছে।

প্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা প্রযুক্তি-বিরোধী নই; বরং তার যথাযথ ব্যবহার না জানলে এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে। দাওয়াতি কাজ ও ইসলাম প্রচারে প্রযুক্তি অপরিহার্য, তবে এর জন্য সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ আবশ্যক।”

কোমের হাওজায়ে ইলমিয়ার শতবর্ষ উপলক্ষে বার্তা
কোমের হাওজায়ে ইলমিয়ার পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবর্ষে ড. যাহরা মুসাভী বলেন, “এটি আত্মসমীক্ষা ও নতুনভাবে প্রতিশ্রুতি নবায়নের সময়। ইমাম খোমেনী (রহ.) আমাদের শিখিয়েছেন আত্মনির্ভরতা ও আদর্শে অবিচল থাকা। এই নীতি অনুসরণ করলেই আমরা সাফল্য অর্জন করব।”

পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষাদানের পদ্ধতিগত মূল্যায়ন
তিনি বলেন, “হাওজার প্রথাগত পাঠ্যবইগুলো ইজতিহাদের ভিত্তি হিসেবে অপরিহার্য। তবে শিক্ষাদান পদ্ধতি অবশ্যই আধুনিকায়ন করতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের জন্যই প্রযুক্তি ও নতুন পদ্ধতি শেখা জরুরি।”

নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি বার্তা
সাক্ষাৎকারের শেষে তিনি বলেন, “ধর্মীয় জ্ঞান লাভ এক প্রকার আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। যারা এই পথে এসেছে, তাদের উচিত দুনিয়াবি মোহ ত্যাগ করে একাগ্রভাবে ইলম অর্জন ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করা। এমন মনোভাব থাকলে, সফলতা নিশ্চিত।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha