হাওজা নিউজ এজেন্সি: ১৯৪৫ সালে যখন আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ এক নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তখন আমেরিকা ইসলামী ও খ্রিষ্টীয় নৈতিক মূল্যবোধের নামে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম ও খ্রিষ্টান চিন্তাবিদদের একত্র করে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব বিস্তার। সেই সম্মেলনের জন্য আমেরিকা শেইখ কাশেফুল গুতাকে আমন্ত্রণ জানায়, কিন্তু তিনি সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন এবং সম্মেলন শুরুর এক মাস আগে আমেরিকার বিরুদ্ধে একটি বিশদ ও যুক্তিপূর্ণ চিঠি লেখেন, যা সম্মেলন শুরুর সময়েই লেবাননে প্রকাশিত হয়। এতে আমেরিকার দ্বিচারিতা ও ভণ্ডামি উদ্ঘাটিত হয়।
তিনি ঐ চিঠিতে আমেরিকার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় বলেন: “আজ আপনি অন্য পথ দিয়ে আমাদের কাছে এসেছেন। আপনি চান আমরা এক টেবিলে বসে নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করি, অথচ মধ্যপ্রাচ্যে যে রক্ত ঝরছে, তা কি আপনার ষড়যন্ত্রের ফল নয়? আপনি কি পূর্ব ও পশ্চিমে নিরীহ মানুষদের ওপর অত্যাচার করছেন না? তিউনিশিয়া, মরক্কো ও আলজেরিয়া পশ্চিমে, আর কোরিয়া, ভারত, চীন (ভিয়েতনাম) ও কেনিয়া পূর্বে আপনার নিপীড়নের আগুনে পুড়ছে।
আপনাদের সব শত্রুতা শুধু বস্তুবাদ ও দুনিয়াপ্রীতির জন্য। অথচ আপনারা নিজেদের চিঠিতে দুনিয়াপ্রীতির নিন্দা করেন এবং মানুষকে তা থেকে সতর্ক করেন। আসলে, আপনারা কি আদৌ কোনো ধর্ম মানেন? আপনারা কি সত্যিই নৈতিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী, নাকি শুধু দুনিয়াবাদই আপনাদের ধর্ম?”
চিঠির আরেক অংশে তিনি লিখেছেন: “যদি আমেরিকার মধ্যে ন্যূনতম মানবিকতা ও নৈতিকতা থাকত, তবে তারা নিজেদের দেশের কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর প্রতি এত নিষ্ঠুরতা করত না। আজো প্রায় ১৫ মিলিয়ন আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিক অবিচারের শিকার। দুই শতাব্দী ধরে আপনারা তাদের দাস বানিয়ে রেখেছেন।
আপনারা ইসরায়েলকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেন, কিন্তু আরব দেশগুলোর জন্য কেবল ফাঁকা প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছু দেন না। যদি অস্ত্র দেনও, সেটা এই শর্তে যে তারা যেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে। এটা কেমন বিচার? আমরা যদি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে না যাই, তাহলে আমাদের যুদ্ধ হবে কার সঙ্গে? আমাদের একমাত্র শত্রু তো ইসরায়েল।
আপনাদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে নৈতিকতা ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা করা মানে আমাদের আত্মসম্মান বিকিয়ে দেওয়া। এটা আমরা কিভাবে মেনে নিই?”
তিনি শেষে বলেন, “যদি পাঁচজন উলুল-আযম নবী (নূহ, ইব্রাহিম, মূসা, ঈসা ও মুহাম্মদ [সা.]) থাকেন, তাহলে পাঁচজন উলুল-আযম তাগুতও রয়েছে—রুজভেল্ট, ট্রুম্যান, আইজেনহাওয়ার, চার্চিল ও এডেন। এরা হলো পৃথিবীর বিপর্যয় ও দুর্নীতির মূল শিকড়।”
সূত্র: ইমাম কাশেফুল গুতার একটি চিঠি, পৃষ্ঠা ৯২–৯৯।
আপনার কমেন্ট